সূচনা: লিখিত তথ্যের অভাবে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, যেমন— ফসিল, হাতিয়ার, ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী ও প্লুহাচিত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে এযুগের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা মেলে।

[1] খাদ্যাভ্যাস: পুরা প্রস্তর যুগের মানুষেরা খাদ্য উৎপাদন করতে জানত না। তারা ছিল মূলত খাদ্যসংগ্রাহক। এসময়ে তারা বিভিন্ন লতাগুল্ম, ফলমূল, পাখির ডিম গিরিগিটি, ব্যাং, ইদুর, খরগােশ শূকর, ভেড়া, গােরু, জিরাফ, হরিণের মতাে বড়াে পশু শিকার করতে শুরু করে।

[2] আশ্রয়স্থল

  • বরফ যুগের আগে : এ যুগের মানুষের কোনো স্থায়ী আশ্রয়স্থল ছিল না। এসময়ে আদিম মানব তৃণ অঞ্চল এবং জলাভূমির পাশে সাময়িকভাবে আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছিল।

  • বরফ যুগে : বরফ যুগে ঠান্ডা প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ পাহাড়ের গুহায়, পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। ধীরে ধীরে মানুষ পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি তাবুতে বা লতাপাতা দিয়ে আচ্ছাদন তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে।

[3] হাতিয়ার: এসময় পাথরের তৈরি হাতিয়ারই ছিল প্রধান। তবে অনেক সময় তারা গাছের ডালপালাকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। এ যুগের উল্লেখযােগ্য কিছু হাতিয়ার ছিল হস্তকুঠার, চাচনি প্রভৃতি।

[4] সমাজজীবন

  • সংঘবদ্ধতা: পুরা পাথরের যুগে আদিম মানব খাদ্যসংগ্রহ ও আত্মরক্ষার প্রয়ােজনে সংঘবদ্ধ হয়। ম্যামথ, বাইসন, বলগা হরিণ, বন্য ঘােড়ার মতাে বড়াে পশ্নু শিকারের জন্য তাদের দলবদ্ধ হতে হয়।

  • সামাজিক বিধিনিয়ম: আদিম মানবসমাজে মানুষ পূর্বপুরুষদের পূজা করত। সাধারণত ক্ল্যানগুলির এই ধর্মবিশ্বাস পরিচিত ছিল টোটেম নামে। ক্ল্যান-এর সদস্যদের কিছু কঠোর নিয়মবিধি মেনে চলতে হত। এই সমস্ত নিয়মবিধির মধ্যে নিষিদ্ধ বিধি বা নিয়ম ছিল টাবু।

[5] ভাষার উদ্ভব: ঐতিহাসিকদের অনুমান পুরাতন পাথরের যুগেই ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল। ক্ল্যানগুলির নিজস্ব ভাষা ছিল। একাধিক ক্ল্যানের আলাদা আলাদা ভাষার দরুন ভাষায় বৈচিত্র্য এসেছিল।

[6] আগুনের ব্যবহার: পুরাতন পাথরের যুগে মানুষ নিজেরা কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালাতে শেখেনি। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে বা দুর্বিপাকের কারণে জ্বলে ওঠা আগুনকে অনেকদিন ধরে জ্বালিয়ে রাখতে শিখেছিল। হিংস্র জন্তুজানােয়ারদের তাড়ানাে, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য এবং কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য তারা আগুন ব্যবহার করত।

[7] গুহাচিত্র: আদিম মানব পশুর হাড় ও শিং দিয়ে গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকতে শিখেছিল। তাদের এই গুহাচিত্রের প্রধান বিষয় ছিল শিকার। ফ্রান্স, স্পেন, ভারত, ইটালি প্রভৃতি দেশে এই ধরনের গুহাচিত্রের নিদর্শন মিলেছে।