ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের পশ্চিম ইউরোপ: ইউরোপীয় রাজনীতিক ধারণা হিসাবেই জাতীয়তাবাদের আধুনিক ধারণাটির আবির্ভাব ঘটেছে। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহে বিশেষ এক ঐতিহাসিক আন্দোলন ও প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। বলা হয় যে, রাজনীতিক জাতীয়তাবাদের আধুনিক ধারণাটির মূল এই আন্দোলন ও প্রবণতারর মধ্যেই নিহিত। হ্যাস কন (Hans Kohn)-এর অভিমত অনুসারে জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছে ইউরোপীয় আন্দোলনের সাধারণ একটি ধারা। এবং এ ঘটনা হল ঊনবিংশ শতাব্দীর। ধর্মীয় আধিপত্যবাদ এবং অন্যায়-অবিচার থেকে অব্যাহতি লাভের তাগিদে মানুষ আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী চেতনা এই আন্দোলনের পিছনে সক্রিয় ছিল। এ চেতনার মাধ্যমেই মানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনয়নের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। তারপর নবজাত এই চেতনা বা ধারণাটি বিবর্তনের পথ ধরে এগিয়েছে এবং ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কালক্রমে রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাজকীয় সরকারের প্রতি দায়িত্ব পালন করার প্রবণতা প্রাধান্য লাভ করেছে। এই আনুগত্য প্রদর্শন ও দায়িত্ব সম্পাদনের মধ্যে প্রশাসক ও জনসাধারণের স্বার্থ নিহিত আছে, তা প্রবলভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। এ হল সমকালীন ইউরোপের এক ঐতিহাসিক প্রবণতা। এই প্রবণতার পিছনে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সংহতির সক্রিয় অবদান অনস্বীকার্য। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সমকালীন উৎপাদন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সামাজিক শ্রেণী-ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস এবং অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যের বিস্তার। এই সময় মূলধনের মালিক বণিকশ্রেণী অন্তর্দেশীয় ও বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ সংগ্রহকে সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। আধুনিক ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের আবির্ভাবের আগাম আভাস এই আর্থনীতিক পরিমণ্ডলের মধ্যেই পাওয়া গেছে। এক একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের সকল অধিবাসী এই ধনিক-বণিক শ্রেণীর পরিচালনা অভিন্ন পতাকাতলে এক জাতি-এক রাষ্ট্রে সংগঠিত হতে উদ্যাগী হয়।
ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ:
ষোড়শ শতকের রাজকীয় একচ্ছত্রবাদ বিরোধী আন্দোলন এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। একচ্ছত্র রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে প্রথম প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক রাজতন্ত্রের জায়গায় জাতি-রাষ্ট্র (nation state) প্রতিষ্ঠার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। জাতি-রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বোঁদা (Jean Bodin)-র অবদান অনস্বীকার্য। বোঁদা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বৈধতা ব্যাখ্যা করেন। তিনি রাষ্ট্র ও সার্বভৌমিকতার আইনানুগ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তা ছাড়া তিনি শৃঙ্খলা ও নাগরিক আনুগত্যের ধারণা ব্যাখ্যা করেন। এ সব বিষয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে বোঁদা জাতীয়তাবাদের ধারণাকে বিকশিত করেন। আবার জাতীয়তাবাদী চেতনা ও আন্দোলনকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজ বিপ্লব এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসী বিপ্লবের ইতিবাচক অবদান অনস্বীকার্য। ফ্রান্সে জ্যাকোবিনরা বিদেশী স্বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীর স্বাদেশিকতা ও জাতীয়তাবোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জ্যাকোবিনবাদের স্বাদেশিক ধারণা জাতীয়তাবাদী ধারণা হিসাবে পরিচিত। ফরাসী দার্শনিক রুশো ও জ্যাকোবিনদের অভিমত অনুসারে জনসাধারণই হল রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার অধিকারী। এঁদের মতবাদের মাধ্যমেই জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র আদর্শ রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক সমর্থন লাভ করে। রুশোর বক্তব্যের ভিত্তিতে জাতি-রাষ্ট্রের ধারণা এবং রাজনীতিক তত্ত্ব ও মতাদর্শ অধিকতর শক্তিশালী হয়ে উঠে। পরবর্তী কালে শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও কতকগুলি ধারণা বিকশিত হয়। এই সমস্ত ধারণার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: আইনের দৃষ্টিতে সাম্য, রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সমানাধিকার, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে সার্বজনীন নীতির স্বীকৃতি প্রভৃতি। প্রকৃত প্রস্তাবে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন আধুনিক ইউরোপীয় রাজনীতিক মতবাদ এবং জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন আন্দোলন ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আবার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ হল মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম।
ম্যাৎসিনী ও বিসমার্ক জাতীয়তাবাদকে মতাদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। অতঃপর জাতীয়তাবাদ উদার ও চরম পথে পরিচালিত হয়। উদার জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে ম্যাৎসিনীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি জাতীয় চরিত্র, জাতীয় গৌরব ও জাতীয় ঐক্য ও সংহতির কথা বলেন। ম্যাৎসিনীর জাতীয়তাবাদী তত্ত্বে জাতীয় স্বার্থ ও ঐকমত্যের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তী কালে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের অন্ধ আবেগ সংকীর্ণ, বিকৃত ও উগ্র জাতীয়তাবাদী ধারণার জন্ম দেয়।
ঊনবিংশ শতকের ইউরোপে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। এই সময় জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রাধান্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি প্রবলভাবে প্রতীয়মান হয়। জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্রসমূহের সমষ্টি হিসাবে মানব সমাজের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সমকালীন ইউরোপের রাজনীতিক পরিস্থিতিতে রাজনীতিক সংগঠনের সার্বজনীন ও মৌলিক একক হিসাবে জাতির ধারণা গুরুত্ব লাভ করে অভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের অধিবাসী অথবা বংশ, ভাষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হলে রাজনীতিক ক্ষেত্রে জাতির ধারণা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। জাতির পরিপূর্ণ মর্যাদা অর্জনের উপায় হিসাবে এক জাতি, এক রাষ্ট্রের ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের জন্য শোষিত ও অবহেলিত জাতিগুলি সক্রিয় আন্দোলনের সামিল হয়।
পশ্চিমী দুনিয়ার জাতীয়তাবাদের চেহারা-চরিত্র পর্যালোচনা করলে এর কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। পশ্চিমী জাতীয়তাবাদের এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উপনিবেশিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ: জাতীয়তাবাদের পথেই পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি ঔপনিবেশিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং সাম্রাজ্যবাদী পথে পা বাড়িয়েছে। আর্থনীতিক স্বার্থসাধনের তাগিদ ও তাড়নায় পশ্চিমী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ বিস্তারের ব্যাপারে আত্মনিয়োগ করেছে। পশ্চিমী ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ নিজেদের উপনিবেশসমূহের বাজার থেকে অতি সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ ও আমদানি করে। অতঃপর সেই কাঁচামাল থেকে শিল্পসামগ্রী প্রস্তুত করে সেই সমস্ত উপনিবেশের বাজারেই তা বিক্রির ব্যবস্থা করে। এইভাবে পশ্চিমের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের ধনিক-বণিক শ্রেণী তাদের মুনাফার ভাণ্ডারকে ক্রমান্বয়ে স্ফীত করে চলে। পুঁজিবাদী এই প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করা হয়। এবং পশ্চিমী জাতীয়তাবাদ এ দিক থেকে উপনিবেশ বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসাবে ভূমিকা পালন করে। সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দী জুড়ে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত পশ্চিমী জাতীয়তাবাদের এই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। জাতীয়তাবাদ যে সমস্ত রাষ্ট্রে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যাণ্ড, স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি।
ঐক্য ও সংহতি সাধন: ঐক্য ও সংহতি সাধন এবং সংহতি সংরক্ষণের শক্তি হিসাবেও জাতীয়তাবাদের ভূমিকার গুরুত্ব বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। জাতীয়তাবাদ আঞ্চলিক বিচারে সংহতি সৃষ্টি এবং সংঘবদ্ধতা সংরক্ষণে সাহায্য করে থাকে। আবার রাজনীতিক বিচারে বিচ্ছিন্ন জাতীয় জনসমাজসমূহকে জাতীয়তাবাদ একই রাষ্ট্রের মধ্যে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে। ইতালী ও জার্মানীর ঐক্যসাধনের ইতিহাস এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য। আবার অস্ট্রো-হাঙ্গারী, রাশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘবদ্ধতা সংরক্ষণ করেছে এবং জাতি-ভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের আবির্ভাবকে আটকেছে। আবার চেক্, পোল, শ্লোভাক প্রভৃতি জাতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জাতীয়তাবাদ স্বাধীন রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে।
আগ্রাসী শক্তি: নতুন ভূখণ্ড, অধিক সম্পদ-সামগ্রী ও ক্ষমতার লিপ্সার তাড়নায় কোন কোন রাষ্ট্র পররাজ্য গ্রাস করার উদ্দেশ্যে উদ্যোগী হয়েছে এবং এক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করেছে।জাতীয়তাবাদ এ রকম ক্ষেত্রে একটি আগ্রাসী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ফ্যাসিবাদী ইতালী এবং নাৎসীবাদী জার্মানীর সামরিক উন্মাদনা উল্লেখযোগ্য।
জাতীয়তাবাদের বিকৃতি: পশ্চিমী শিল্পোন্নত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর আর্থনীতিক আধিপত্য কায়েম করার জন্য চাতুর্য্যের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করে। এই সমস্ত পশ্চিমী রাষ্ট্র ঋণ ও অনুদানকে আর্থনীতিক সহযোগিতা হিসাবে প্রতিপন্ন করে এবং অনুন্নত দেশগুলিকে প্রযুক্তিবিদ্যা ও শিল্পজাত দ্রব্য-সামগ্রী আমদানি করতে বাধ্য করে। পশ্চিমী শক্তিধর দেশগুলির জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবী এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন জাতীয়তাবাদের চেহারা-চরিত্রকে বিকৃত করেছে।
লেনিনের অভিমত অনুসারে পশ্চিমী পুঁজিবাদী দেশগুলিতে বিভিন্ন পর্যায়ের ভিতর দিয়ে জাতীয়তাবাদের ক্রমবিকাশ ঘটেছে। কোন দেশের জাতীয়তাবাদের স্বরূপ কোন নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রাধান্যকারী শ্রেণীসমূহের উপর নির্ভরশীল।
পশ্চিমের জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে কন ও কারের অভিমত:
এ প্রসঙ্গে হ্যান্স কন (Hans Kohn)-এর অভিমত সম্পর্কে আলোচনা করা আবশ্যক। এই হ্যানস কন পশ্চিমী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত একজন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিত। তিনি তাঁর The Idea of Nationalism A Study Its Origin and Background শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে এই জাতীয়তাবাদ অধিক সংখ্যক মানবগোষ্ঠীর মধ্যে পরস্পর-বিরোধী আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রজ্জ্বলিত করেছে। আবার এই জাতীয়তাবাদই মানবসমাজের মধ্যে বিদ্যমান বিভেদ ও বিরোধসমূহকে অধিকতর প্রবলভাবে প্রতিপন্ন করেছে এবং জনজীবনে উত্তেজনা সংঘাত-সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে। ই. এইচ. কার (E.H. Carr) ও তাঁর Nationalism and After শীর্ষক রচনায় অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতানুসারে জাতীয়তাবাদী ধারণা ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিবাদ-বিসংবাদের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর জাতিসমূহের সৌভ্রাতৃত্বমূলক সমবায়িক অবস্থান অসম্ভব প্রতিপন্ন হয়েছে।
সংখ্যালঘু সমস্যা: সঠিক অর্থে ও সম্পূর্ণভাবে জাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে ইউরোপে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিটি প্রয়োগ প্রসঙ্গে দেখা দেয়। এই বিষয়ে ভার্সাই চুক্তিকে বলবৎ করতে গিয়ে বাধা-বিপত্তি দেখা দেয়। নবগঠিত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনসম্প্রদায়ের অস্তিত্ব মেনে নিতে হয়। কারণ ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানার সঙ্গে ইতিহাস ঐতিহ্য, বংশ, ভাষা, ধর্ম, জীবনধারা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের সামঞ্জস্য সাধন কার্যক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এই অবস্থায় জাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংখ্যালঘু জনসম্প্রদায়গুলিকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করতে হয়।
ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের বহু ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যাবতীয় বিবাদ-বিসংবাদের জন্য এই জাতীয়তাবাদকে অভিযুক্ত করা অসঙ্গত। কারণ এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিকে কার্যকর করা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্যে কোন স্বতসিদ্ধ সম্পর্ক নেই।
Leave a comment