পরিবেশের সংকট

পৃথিবীর অনন্য সাধারণ সম্পদ হল জীবন। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে এই গ্রহে কোটি কোটি বছর ধরে বসবাস করে আসছে। পরিবেশের আনুকূল্যের সুবাদে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব, বিবর্তন ও সমৃদ্ধি সাধিত হয়েছে। পৃথিবীর পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে পড়লে কোন প্রাণীর পক্ষেই অস্তিত্ব অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। কিন্তু মানুষের অপরিণামদর্শিতা, একদেশদেশী ধ্যান-ধারণা ও কর্মকাণ্ড, অথবা অজ্ঞতার কারণে পরিবেশের সুস্থতা বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পরিবেশের সম্পদসমূহ সীমিত। তার পরিমাণ, মান ও ভারসাম্যের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। মুষ্টিমেয় মানুষের মারাত্মক অজ্ঞানতা অবহেলার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের প্রাত্যহিক অজ্ঞতা ও বদভ্যাস প্রসূত হটকারী সিদ্ধান্তসমূহ পরিবেশের অবক্ষয় ও বিপর্যয় অনিবার্য করে তুলছে। সুদীর্ঘকাল ধরে প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের অপব্যবহারের কারণে পরিবেশ ও জনজীবনে সংকট সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।

এ সংকট নিবারণ সহজে সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সকলের সচেতন ও আন্তরিক সহযোগিতা। মনুষ্য প্রজাতি এবং অন্য সকল প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে। তার জন্য পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের সকলকে পরিবেশ সচেতন হতে হবে। পরিবেশ দূষণের সমস্যা শুধুমাত্র একটি স্থানীয় বা আঞ্চলিক সমস্যামাত্র নয়। এ সমস্যার প্রতিকূল প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দুনিয়ার জীবজগৎ, জলবায়ু, জলসম্পদ এবং পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদির উপর পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহাকাশ, মহাসমুদ্র, মেরু মহাদেশের মত পৃথিবীর সকল দেশের যৌথ সম্পত্তি ও পরিবেশ দূষণের বাইরে নেই। পরিবেশের ব্যাপক অবক্ষয় আটকানোর জন্য আবশ্যক হল পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের সামগ্রিক ও সক্রিয় সহযোগিতা। মানুষকে শিক্ষিত ও পরিবেশমনস্ক হতে হবে। জনজীবনের সকল পর্যায়ে পরিবেশ চর্চাকে প্রসারিত ও বিকশিত করতে হবে। পরিবেশের স্বয়ম্ভরতা সৃষ্টি করতে হবে। তার জন্য পরিবেশ সচেতন মানুষকে পরিবেশের সমস্যাসমূহ সনাক্ত করতে হবে এবং সম্যক সমাধানের উপায়-পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।


পরিবেশ দূষণের ধারণা

মানবসভ্যতার ইতিহাসের সর্বাধুনিক পর্যায়ে সর্বাধিক সংকট হিসাবে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে বিষয়টি, সেটি হল পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত আলোচনার গভীরে যাওয়ার আগে অবহিত হওয়া আবশ্যক পরিবেশ দূষণ বলতে সঠিক কী বোঝায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপকভাবে। তারফলে পরিবেশের উপর চাপ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কোন দেশেরই প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার সীমাহীন হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডারকে নিঙড়ে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্বকে অব্যাহত রাখতে এবং সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের গতিকে বৃদ্ধি করে এবং উন্নয়নের মানকে উন্নত করতে সদাই তৎপর। অপরদিকে সমৃদ্ধ উন্নত দেশগুলি তাদের জীবনধারাকে অধিকতর বিলাসবহুল করে তোলার লক্ষ্যে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার এবং অপব্যবহারের ব্যাপারে আত্মনিয়োগ করেছে। অর্থাৎ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল দেশই প্রাকৃতিক পরিবেশকেই আক্রমণ করছে। অনাগত প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ সাম্প্রতিককালে একটি বড় ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ দূষণ আধুনিক সভ্যতার সংকট হিসাবে দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা (sanitation) বলতে কেবলমাত্র ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বোঝায় না। বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধান বলতে বোঝায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের সমগ্র ক্ষেত্রটিকে। এর উদ্দেশ্য হল রোগ প্রতিরোধ করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। পরিবেশের কতকগুলি বিষয়কে মানুষ ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে খাদ্য, পানীয়, পরিধেয়, আবাসন, ও ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থার কথা বলা যায়। নিয়ন্ত্রণযোগ্য এই বিষয়গুলি জীবনযাত্রার মানের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কল্যাণে বিগত বিংশ শতাব্দীতে উন্নত দেশগুলিতে জনসাধারণের সাধারণ স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।

সুদীর্ঘকালের সাবেকি কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে, একথা ঠিক। কিন্তু নতুন নতুন নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জন্যসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যাপক নগরায়নের ফলশ্রুতি হিসাবে পরিবেশ ও সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আণবিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবিত অগ্রগতি ঘটেছে। তারফলে তেজস্ক্রিয় বিকীরণ পরিবেশকে দূষিত করছে। শিল্পায়নের বিকাশ ও ব্যাপক বিস্তারের ফলে শিল্প-বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। শহরাঞ্চলের ব্যস্ত এলাকাগুলিতে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এরকম এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সুনিশ্চিত করা ক্রমান্বয়ে মুস্কিল হয়ে পড়ছে।

অধুনা ‘পরিবেশমূলক স্বাস্থ্য বিধান’ (environment sanitation) কথাটির পরিবর্তে পরিবেশমূলক স্বাস্থ্য (environment health) কথাটি ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সুনিশ্চিত করার উপর সাম্প্রতিক কালে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। তার জন্য কেবলমাত্র ডাক্তারি বা প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট নয়। তারজন্য দরকার একটি সংযুক্ত বহুমুখী বিদ্যার এক কার্যকর কর্মসূচী। সম্যক পরিবেশগত স্বাস্থ্যের স্বার্থে অধুনা আবশ্যক হল বিভিন্ন বিদ্যাগত ও প্রযুক্তিগত পরিষেবা। এই সমস্ত পরিষেবা পাওয়ার জন্য দরকার সুশিক্ষিত চিকিৎসাবিদ, জনস্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মহামারী সংক্রান্ত চিকিৎসক, নগর-স্থপতি, অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ প্রভৃতি।

দূষণজনিত সমস্যা নতুন কিছু নয়। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই দূষণ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে এই সমস্যা প্রকট হয়ে পড়েছে এবং দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ভারতের বাস্তুসংস্থাপন ব্যবস্থা বা ইকো-সিস্টেম (eco-system) নিতান্তই নড়বড়ে। এই দুর্বল ইকো-সিস্টেমের উপর চাপ বাড়ছে দিনে দিনে। চাপ আসছে নানা দিক থেকে। চাপসৃষ্টিকারী দিকগুলি হল : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা, বাণিজ্যিক শোষণ-পীড়ন, শিল্প-দূষণ প্রভৃতি। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভৌত উপাদানসমূহের অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন। নদ-নদী, সাগর, সমতলভূমি, জলাভূমি, চারণভূমি, বনাঞ্চল প্রভৃতি কোন কিছুই এই সর্বগ্রাসী থাবার কামড় থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ক্রমবর্দ্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং বিপথগামী প্রযুক্তিবিদ্যার অভিশাপ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা দরকার। তার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক উদ্যোগ-আয়োজন।

১৯৭২ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ মানব পরিবেশের উপর একটি সম্মেলন আহ্বান করে। এই সম্মেলনে মানবজাতির সুস্থ অস্তিত্বের পক্ষে বিপদস্বরূপ পরিবেশের প্রতিকূলতার প্রতি সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংগঠন (WHO World Health Organisation) মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে পরিবেশের প্রতিকূলতার উপর একটি ব্যাপক সমীক্ষা সম্পাদনের ব্যবস্থা করে। নিজের পরিবেশকে দূষিত করার ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষই দায়ী। নির্বিচার শিল্পায়ন, নগরায়ন প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে মানুষই তার পরিবেশকে দূষিত ও প্রতিকূল করে তুলেছে। মানুষের খারাপ শরীর-স্বাস্থ্যের কারণ মূলত তার দূষিত পরিবেশের মধ্যেই নিহিত আছে। জলে দূষণ, বায়ুতে দূষণ, মাটিতে দূষণ, নিম্নমানের আবাসন, জীবজন্তুর খোয়ার প্রভৃতি পরিবেশগত প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষের খারাপ শরীর-স্বাস্থ্যের কারণ বর্তমান। দুষিত ও প্রতিকূল পরিবেশ মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

দুষণের সমস্যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে। আমাদের বাসভূমি, পানীয় জল, বাতাস, শব্দ সবকিছু সাম্প্রতিকালে দূষিত হয়ে পড়ছে। কঠিন, তরল, বায়বীয়— সকল পদার্থের উপরই দূষণ তার থাবা বসিয়েছে। শুধু তাই নয়, শব্দদূষণ ঘটছে, ঘটছে আণবিক দূষণ। এই সমস্যা সংকট হিসাবে দেখা দিয়েছে। এবং এই সংকট সম্পর্কে সমাজতত্ত্ববিদ, অর্থনীতিবিদ, প্রশাসক এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে ভাবিত। মানব সভ্যতার এই সংকট নিবারণের উপায় অন্বেষণে তাঁরা সচেষ্ট।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকূল প্রভাব-প্রতিক্রিয়া প্রাণীজগতের সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভিদ জগতের উপরও পড়ে। বৃক্ষ রোপনের হাজার হাজার একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আকরিক ধাতু প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত কারখানা এবং সিলভার ডাই অক্সাইড প্রস্তুতকারী কারখানার বর্জ্যের দ্বারা। প্লাসটিক প্রস্তুতকারী রাসায়নিক উৎপাদানকারী কারখানার ধোয়া তুলাগাছ ও গোলাপ গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বাস, ট্যাক্সি, ট্রাক প্রভৃতি গাড়ী ডিজেল-পেট্রল পুড়িয়ে যে ধোঁয়া ছাড়ে তা দিবালোকে বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়। এই বিষাক্ত গ্যাস বিভিন্ন খাদ্য শস্যের গাছ, ফলমূল ফুলের গাছ, সব্জীর গাছ প্রভৃতি স্পর্শকাতর বিভিন্ন গাছের উপর প্রতিকূল প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।


পরিবেশ দূষণের অর্থ

মানুষ এক বিশেষ পরিবেশ-পরিমণ্ডলের মধ্যে বসবাস করে। এখানে জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগৎ পাশাপাশি অবস্থান করে। মানুষের এই পরিবেশ গতিশীল ও জটিল প্রকৃতির এই পরিবেশের মধ্যে সকল রকমের প্রাণী ও প্রাণ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মধ্যে একধরনের ভারসাম্য বর্তমান থাকে। মানুষ তার জীবনযাপনের মানকে অধিকতর উন্নত করতে সতত সক্রিয়। এই সক্রিয়তার সুবাদে কিছু অপরিহার্য উপাদান সংযুক্ত হয় বিদ্যমান জীবনধারার সঙ্গে। তারফলে সংশ্লিষ্ট ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এইভাবে পরিবেশ দূষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইভাবে পরিবেশের সঙ্গে প্রানীজগতের সম্পর্কের ভারসাম্য বা ইকোলজি (ecology) নষ্ট হয়। একেই বলে পরিবেশ দূষণ। সুতরাং মানুষের দ্বারা উৎপাদিত অবাঞ্ছিত বস্তুসম্ভার সংযুক্ত হওয়ার ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এবং তারফলে সকল প্রাণীর বা প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়। একেই বলে পরিবেশ দূষণ (“Contamination of the environment by the addition of undesirable substances produced by human activities which cause damage to the living organisms is called ‘environment pollution” অর্থাৎ মানুষের তৈরী অবাঞ্ছিত বস্তুগুলি যেগুলি জীবনধারার সঙ্গে সংযুক্ত হয় সেগুলিকে বলে ‘দূষক’ (Pollutant)। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ‘কার্বন মনক্সাইড’ (Carbon monoxide) এর কথা বলা যায়। কার্বন মনক্সাইড বায়ুকে দূষিত করে।

প্রকৃত প্রস্তাবে দূষণ হল বায়ু, জল ও মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যসমূহের এক অবাঞ্ছিত পরিবর্তন। এই পরিবর্তন প্রাণীর, শিল্প প্রক্রিয়ার বা কাঁচামালসমূহের মধ্যে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের উদ্যোগ-আয়োজনের দ্বারা উৎপাদিত উপাদানসমূহের মাধ্যমে পরিবেশের যে কোন অংশ দূষিত করা, ক্ষতিকরভাবে পরিবর্তন করা বা অপবিত্র করাকেই বলে পরিবেশ দূষণ। জাতীয় পরিবেশ গবেষণা পর্ষদ’ (National Environmental Research Council) -এর অভিমত অনুযায়ী ক্ষতিকর কাজকর্মের বর্জ্য উৎপাদন হিসাবে বিভিন্ন বস্তু বা শক্তির সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত বর্জ্য প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ক্ষতিকর পরিবর্তন সূচীত করে। একেই বলে পরিবেশ দূষণ [“(Pollution is the release of substances and energy as waste products of harmful activities which result in harmful changes within the natural environment.”]। পরিবেশ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ডস (Edwards) পরিবেশ দূষণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, পরিবেশ দূষণ হল মানুষের দ্বারা পরিবেশের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান বা শক্তি ছেড়ে দেওয়া। এমন পরিমাণে এই সমস্ত উপাদান ও শক্তি ছাড়া হয়, যার ফলে স্বাস্থ্য ও সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয় (“Pollution is the release of hurmful substances or energy into the environment by man in quantities that damage health and resources.”)। সুতরাং পরিবেশ দূষণ হল মানুষ এবং তার ক্রিয়াকর্মের অপরিহার্য ফলাফল। শংকর রাও তাঁর ‘Sociology of Indian Society’ শীর্ষক গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন : “The phenomenon called ‘pollution’ is an inescapable consequence of the presence of man and his activities”.

পরিবেশ দূষণের ফলে বাস্ততন্ত্রের সংকট সৃষ্টি হয়। বায়ু, ভূমি, মৃত্তিকা এবং জল— মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এগুলি একান্তভাবে প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত এগুলি দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য সুস্থায়ী উন্নয়ন (Sustainable develop ment) ছাড়াই নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং কলকারখানা স্থাপনের ফলে বিভিন্ন প্রকারের দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ প্রভৃতির কথা বলা যায়। এই সমস্ত দূষণের ফলে পরিবেশের অবক্ষয় ঘটে।