প্রশ্নঃ পদসোপান বা হায়ারার্কী নীতি কি? এই নীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর। 

পদসোপান বা হায়ারার্কী নীতি (Principle of Hierarchy): পদসোপান নীতি ব্যতীত কোন সংগঠনের কথা চিন্তা করা কঠিন। ‘হায়ারার্কী’ বা ‘পদসোপান’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো উচ্চতর স্তর কর্তৃক নিম্নতর স্তরকে নিয়ন্ত্রণকরণ। প্রশাসনে পদসোপান বলতে কতকগুলো পর্যায়ক্রমিক স্তর-বিশিষ্ট কোন সংগঠনকেই বুঝায়, যেখানে প্রত্যেক নিম্নস্তরে কার্যরত ব্যক্তিগণ তাদের ঠিক ঊর্ধ্বস্তরের ব্যক্তিগণের অধীন। প্রশাসনিক কার্যাবলিকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে একটি বৃহত্তর ইউনিটে একত্র করা হয়। কোন বড় বাস্তব উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই সংগঠন গড়ে তোলা হয় এবং এটির ভিতর কার্যকরী বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কাজ বণ্টন করে দেয়া হয়। এ সকল ইউনিটগুলোকেও কতকগুলো সাব-ইউনিটে বিভক্ত করা হয়৷ এ সকল সাব-ইউনিটগুলোকে আবার বহুধারায় বিভক্ত করা হয়, যে পর্যন্ত না আমরা সংগঠনের একেবারে নিম্নতম পর্যায় বা ভিত্তিতে উপনীত হই। সংগঠনের এ পর্যায়নুক্রমিক ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায় হতেই সকল কর্তৃত্ব, আদেশ ও নিয়ন্ত্রণ স্তরে স্তরে একেবারে নিম্নস্তরে নিঃসৃত হয়ে আসে। একেই সংগঠনের পদসোপান বা হায়ারার্কী নীতি বলা হয়।

পদসোপান বা হায়ারার্কী নীতির বৈশিষ্ট্যঃ পদসোপান বা হায়ারার্কী নীতির আলোচনায় এর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো নিম্নরূপঃ 

প্রথমত, সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এর সামগ্রিক কাজকেই কতকগুলো পর্যায়ক্রমিক পদসোপান বা ইউনিট ও সাব-ইউনিটগুলোর ভিতর ভাগ করে দেয়া হয়।

দ্বিতীয়ত, সংগঠনের সকল বিভিন্ন পদসোপান বা ইউনিটগুলোতে কার্যরত ব্যক্তিগণকে বিভিন্নরূপ কর্তৃত্ব, দায়িত্ব, মর্যাদা, বেতন ইত্যাদি প্রদান করে সংগঠনটিকে পিরামিডের আকারে বিন্যাস করা হয়।

তৃতীয়ত, সংগঠনের ভিতরে সবকিছুই স্তরে স্তরে চলে এবং কোন মধ্যবর্তী স্তর বা পর্যায়কেই এড়িয়ে বা অতিক্রম করে যাওয়া যায় না। সেখানে সকল কর্তৃত্ব, আদেশ ও নিয়ন্ত্রণ সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তর বা পদসোপান হতে নিঃসৃত হয়ে স্তরে স্তরে বাহিত হয়ে একেবারে সর্বনিম্নস্তরে পৌঁছায়।

বস্তুত পদসোপান প্রক্রিয়ায় ‘প্রপার চ্যানেল’ বা ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের’ মাধ্যমে কাজ করার নিয়ম সর্বতোভাবে পালন করা হয়। যখন কোন কর্মচারী তার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তখন তাকে তার ঠিক উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে চান, তখন তাকে তার ঠিক উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তার মাধ্যমেই তা করতে হবে। ঠিক তেমনিভাবে, যখন কোন কর্মকর্তা তার অধস্তন কোন কর্মচারীর সাথে যোগাযোগ করেন, সে ক্ষেত্রেও তিনি তার ঠিক অধস্তন কর্মচারীর মাধ্যমে তা করে থাকেন। সুতরাং দেখা যায়, ব্যক্তিমানুষেরা যেখানেই কোন সংগঠনে ঊর্ধ্বতন-অধস্তন সম্পর্কে আবদ্ধ সেখানেই পদসোপান নীতি অস্তিত্ব রয়েছে। পদসোপান নীতির এ পরম্পরা বা চেইন (Chain) ‘সমন্বয়ের বিশ্বজনীন প্রণালী’ গড়ে তোলে। এ প্রণালীর মাধ্যমে সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থানরত কর্তৃপক্ষ সমগ্র কাঠামোব্যাপী কার্যকরী ক্ষমতার অধিকারী হয়।

উপসংহারঃ  যখন কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধস্তন কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তখন তিনি সে ক্ষমতাকে যথাযথভাবে নির্দিষ্ট করে দেন। কেবল পদসোপানের মাধ্যমেই তা সম্ভব হতে পারে। সংগঠন ক্ষুদ্র হলে এতে কর্ম-নির্দিষ্টকরণ সহজসাধ্য এবং প্রত্যক্ষ রূপ ধারণ করে। পক্ষান্তরে, সংগঠনের আকার বৃহৎ হলে তাতে কর্ম-নির্দিষ্টকরণ অপেক্ষাকৃত জটিল ও পরোক্ষ হয়ে থাকে।