বার্কার ন্যায়-ধারণার উৎস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে ন্যায় সম্পর্কিত ধারণার প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হতে গেলে ন্যায়-এর উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা আবশ্যক। তিনি ন্যায় ধারণার চারটি উৎস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ন্যায়-এর এই চারটি উৎস হল: 

  • (১) ধর্ম, 

  • (২) প্রকৃতি, 

  • (৩) অর্থনীতি, 

  • (৪) নীতিশাস্ত্র।

(১) ন্যায়-ধারণার উৎস হিসাবে ধর্ম

এ্যাকুইনাসের মতবাদ: মধ্যযুগে এই ধারণা প্রচলিত যে, ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর গির্জাগুলির মাধ্যমে ন্যায়ের ধারণা ও যাথার্থ্যবোধ প্রদান করেছেন। ঈশ্বরই হলেন পার্থিব জগতের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস। সরকার আইনের আকারে ন্যায় সম্পর্কিত ঈশ্বরের বাণীকে ঘোষণা করে। এই ধারণার মধ্যে আইনের নৈর্ব্যক্তিক উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়। মানুষের জন্য বিশেষ ন্যায়-নিয়ম ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে অভিব্যক্তি লাভ করে। ঈশ্বর মানুষের অন্তর্নিহিত যুক্তিবোধের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য সাধারণ ন্যায়-নিয়ম প্রচার করেন। ন্যায়ের মানের ভিত্তি হল ধর্ম। ন্যায়ের এই মানই রাষ্ট্রীয় আইনের পিছনে প্রেরণা এবং এই আইনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আইনের বৈধতার উৎস হল ধর্মীয় ভিত্তি বা ভগবান। ঈশ্বরের আদেশ সঠিক ও সঙ্গত। সুতরাং আইন হল ন্যায্য, নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ। এই আইন অমান্য করার অর্থ ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করা। কারণ ঈশ্বরের নির্দেশক্রমেই আইন প্রণীত হয়। সেন্ট টমাস এ্যাকুইনাসের মতবাদে ন্যায়ের উৎস হিসাবে ধর্ম প্রসঙ্গে এই তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।

ন্যায়ের ধর্মীয় উৎস সম্পর্কে বার্কারের অভিমত:

বার্কারের অভিমত অনুসারে ধর্ম যতদূর পর্যন্ত নৈতিক আদর্শের উৎস এবং যতদূর পর্যন্ত নৈতিক আদর্শ ন্যায় সম্পর্কিত ধারণার উৎস, ততদূর পর্যন্ত ধর্মকে ন্যায়ের উৎস হিসাবে স্বীকার করা যেতে পারে। বার্কার বলেছেন: “We may readily admit that so far as religion is a source of ethical principles, and so far as ethical principles are the source of our nation of justice…religion may be counted as an ultimate source of the notion.” অধ্যাপক বার্কার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন যে ধর্ম ন্যায়ের তাৎক্ষণিক উৎস নয়। আবার ধর্মকে ন্যায়ের একক বা একমাত্র উৎস বলা যায় না। ধর্মীয় বিশ্বাস জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মান নির্ধারণ করে দেয়। জীবনযাত্রার এই মান আইনানুমোদিত মানের থেকে অধিকতর উচ্চপর্যায়ের। ধর্ম সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের কাছে উন্নততর আচরণ আশা করে। আইন এই মানে উপনীত হতে পারে না। কেবলমাত্র স্বেচ্ছাধীন জীবন ধারার ক্ষেত্রে ধর্মের দ্বারা নির্দিষ্ট মানের প্রয়োগ সম্ভব। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে জীবনপ্রণালীর এই মানকে প্রয়োগ করা যায় না। রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁদের কোন রকম ধর্মবিশ্বাস নেই। ধর্মের প্রতি কোন রকম আনুগত্যকে তাঁরা স্বীকার করেন না। কিন্তু আইনের প্রতি এঁদের আনুগত্য আছে। আবার ধর্মবিশ্বাসীরা ধর্মের প্রতি আনুগত্যের দাবিকে স্বীকার করে। এই উভয় শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সাধারণ মূল্যবোধের নীতি আইনের পিছনে বর্তমান থাকা দরকার। সহজেই মানুষের আনুগত্য আদায়ে সক্ষম এ রকম আইনই প্রণয়ন করা উচিত। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তির উপর ধর্মকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ধর্মবিশ্বাসী নয় এমন মানুষের উপর ধর্মভিত্তিক আইন প্রণয়ন করে প্রয়োগ করলে আইনের প্রতি আনুগত্যহীনতা দেখা দিতে বাধ্য। এমনকি এই আনুগত্যহীনতা সমগ্র আইন ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। এ প্রসঙ্গে বার্কারের একটি দীর্ঘ মন্তব্য উদ্ধৃত করা আবশ্যক। বার্কার বলেছেন: “If the State attempts to draw religious standards, and the quality of behaviour which they involve, into the area of the legal association, and to enforce them as the prescription and by the sanctions of law, it simply fails. It may even encourage what it seeks to prevent: it may encourage, for instance, the appetite for alchol by prohibiting its manufacture, sale and transport….By making laws which cannot be enforced, it may foster disobedience to other laws which, if they stood alone, could be, and would be, enforced without any question.”

(২) ন্যায়-ধারণার উৎস হিসাবে প্রকৃতি

ন্যায়ের উৎস হিসাবে প্রকৃতির অর্থ: প্রকৃতির ধারণা বা বিষয়সমূহের স্বাভাবিক বিন্যাসকে ন্যায়ের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। এই ধারণা অতি প্রাচীন। বিষয়সমূহের প্রাকৃতিক বিন্যাস অনুসারে আইন প্রণীত। এই কারণে আইনের মূল্য বা বৈধতা বর্তমান। এই অর্থেই প্রাকৃতিকে ন্যায়ের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। বার্করের কথায় বিষয়টি হল: “When nature’ is adduced as the origin of the idea of justice, the suggestion is that law has value, or may be made to have value, by being in accordance, or by being brought into accordance, with….the natural order of things.” সুতরাং বিষয়সমূহের প্রাকৃতিক বিন্যাস বা স্বাভাবিক ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধনের মাধ্যমে আইন মূল্যবোধ যুক্ত হয়। গ্রীসের স্টোইক দর্শন থেকে প্রকৃতি এবং বিষয়সমূহের প্রাকৃতিক বিন্যাসের ধারণা লাভ করা যায়। স্টোইক মতবাদ হল মূলত একটি আধ্যাত্মিক মতবাদ। তবে এই মতবাদের এক ধরে বস্তুগত ভিত্তিও আছে। স্টোইকরা ‘প্রকৃতি’ বলতে একটি বিশেষ নীতিকে বুঝিয়েছেন। এই নীতির দ্বারা বিশ্ব-সংসার নিয়ন্ত্রিত হয়। এই নীতিটি হল একই সঙ্গে ঈশ্বর ও যুক্তির অভিব্যক্তি। ঈশ্বর ও যুক্তির সঙ্গে প্রকৃতি অভিন্ন। এ হল একটি নিয়ন্ত্রণকারী নীতি। বার্কার বলেছেন: “What the Stoics understood by Nature was that ruling principle in the Universe which was reason and ‘God’. The ‘Nature’ identified with God and Reason… was nonetheless a ruling principle’….” স্টোইক অনুশাসন অনুসারে বলা হয় যে, মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে বসবাস করবে, মানুষ তার জীবনধারার নিয়ম-নীতিকে কার্যকর করবে। মানুষের জীবনযাপন প্রণালীতে প্রকৃতির নিয়ম-নীতিগুলিকে প্রয়োগ করা উচিত।

স্টোইক দর্শনের তিনটি সিদ্ধান্ত: স্টোইক দর্শন অনুসারে মানুষ প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী জীব। মানুষ মাত্রই বিশ্ব প্রকৃতির যুক্তিবাদিতার অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। এই বিশ্বপ্রকৃতির সর্বত্র যুক্তিবত্তা পরিব্যাপ্ত। যুক্তিবাদী জীব হিসাবে মানুষ বিশ্বপ্রকৃতির যুক্তিবত্তাকে স্বীকার করে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলে। স্টোইক-দর্শনের এই পটভূমির ভিত্তিতে তিনটি সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। (ক) যুক্তিবাদী প্রকৃতির জন্যই মানুষ নিজের নিজের ব্যাপারে স্বাধীন ও স্ব-শাসিত। এ হল স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত। (খ) মানুষ যুক্তিবাদী এবং বিচারবুদ্ধিযুক্ত। এই কারণে পদমর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে সকলে সমান। এ হল সাম্যের সিদ্ধান্ত। (গ) যুক্তিবাদী মানুষ পরস্পরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ। এই কারণে বিশ্ব-সমাজের সংহতির মধ্যে সকলে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। এ হল সৌভ্রাতৃত্বের সিদ্ধান্ত। উপরিউক্ত ধারণার মধ্যে একটি ন্যায়ের ধারণা বর্তমান এবং ন্যায়ের এই ধারণা প্রকৃতিসঞ্জাত বলে বলা হয়। যুক্তিবাদী মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী। মানুষ স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী। সুতরাং ন্যায়-ধারণার উৎস হল প্রকৃতি। স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের সংযোগ ঘটেছে ন্যায়ের মধ্যে। অতএব ন্যায়ের প্রকৃত উৎস হল প্রকৃতি। এ হল ভগবান ও মানুষের আধ্যাত্মিক প্রকৃতি। এ হল ভগবানের প্রকৃতি সম্পর্কে ধর্মীয় ধারণা এবং মানুষের প্রকৃতি প্রসঙ্গে নৈতিক ধারণা।

ন্যায়ের প্রকৃতির উৎস সম্পর্কে বার্কারের অভিমত:

বার্কারের অভিমত অনুসারে ন্যায়ের উৎস হিসাবে যে প্রকৃতির কথা বলা হয় তা ধর্ম-বিশ্বাস ও নৈতিক দর্শন থেকে স্বতন্ত্র নয়। প্রকৃতি এককভাবে ন্যায়-ধারণার উৎস হয় না। অর্থাৎ প্রকৃতি প্রত্যক্ষভাবে ন্যায়ের উৎস হিসাবে বিবেচিত হতে পারেনা। ধর্ম ও নীতিবোধের সঙ্গে সংযোগ সূত্রে ন্যায় ধারণার সৃষ্টি হয়। বার্কারের মতানুসারে ন্যায়ের উৎস হিসাবে প্রকৃতির ধারণা কোন মৌলিক বা স্বতন্ত্র উৎস নয়। ন্যায় ধারণার এই উৎসটি ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নৈতিক দর্শনের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এর থেকেই উদ্ভুত বার্কার বলেছেন: “the conception of nature is not a separate and original source of the idea of justice but a source which is linked with and derived from religious belief and moral philosophy.”

(৩) ন্যায়-ধারণার উৎস হিসাবে অর্থনীতি

আর্থনীতিক শক্তি ন্যায়ের উৎস: আর একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ন্যায়-ধারণার উৎস হিসাবে অর্থনীতির কথা বলা হয়। বলা হয় যে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ন্যায়ের ধারণাটিকে ব্যাখ্যা করা দরকার। ন্যায়ের ধারণা ধর্ম ও নীতিবোধের মত অবাস্তব বিষয়ের দ্বারা বিশ্লেষণ করা যায় না। এই শ্রেণীর চিন্তাবিদদের মতানুসারে ন্যায়ের ধারণাটির উৎপত্তি হয়ে আর্থনীতিক ঘটনাবলী, তথ্যাদি বা সাধারণ নীতি থেকে। এই মতবাদ অনুসারে বিভিন্ন বাস্তব আর্থনীতিক ঘটনা থেকে ন্যায়ের ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। ন্যায়-ধারণা হল আর্থনীতিক নীতিসমূহের সিদ্ধান্ত বিশেষ। বার্কার বলেছেন: “Upon this theory the idea of justice is derived from the facts, or deduced from the principles of economics.” ঊনিশ শতকে ইউরোপীয় মহাদেশে আধুনিক শিল্পব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। এই সময় এই মতবাদের সৃষ্টি হয় যে আর্থনীতিক ক্ষেত্রেই ন্যায়ের ধারণার উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে। প্রথমে ফরাসী ও জার্মান চিন্তাবিদ্রা এবং পরবর্তী কালে বাকুনিন ও বিভিন্ন রুশ চিন্তাবিরা এই মতবাদ প্রচার করেন। সাম্যবাদী সমাজে ন্যায়ের ধারণা স্বতন্ত্র প্রকৃতির। এই ধারণা ধনতান্ত্রিক সমাজের ন্যায়ের ধারণা থেকে আলাদা। মার্কসীয় দর্শন অনুসারে সমাজে যে শ্রেণী আর্থনীতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হয়ে পড়ে, সেই শ্রেণীই অন্যান্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণীর উপর জোর করে আইন চাপিয়ে দেয়। সমাজে প্রাধান্যকারী এই শ্রেণী যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ন্যায়ের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে, সংশ্লিষ্ট সমাজে সেইভাবে ন্যায়ের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। এই অবস্থায় আর্থনীতিক দিক থেকে প্রাধান্যকারী শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হিসাবে ন্যায়ের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর্থনীতিক অবস্থার নির্দিষ্ট কোন সময়ে সমকালীন প্রভাবশালী শ্রেণীর নিজের কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের উপর রাষ্ট্রীয় আইনকে আরোপ করে। বার্কার বলেছেন: “….the impersonal source of law is similarly the inevitable imperative imposed upon that class by its own economic interest in the given conjuncture.” যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র থাকবে এবং রাষ্ট্রীয় আইন ও ক্ষমতাবান শ্রেণী থাকবে, ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান শ্রেণীর স্বার্থেই রাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত ও প্রযুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যায়ের উৎস হবে আর্থনীতিক শক্তি যা অনিবার্যভাবে গতিশীল ও সক্রিয় (“…the source of the notion of justice… will be the fact of economic strength, moving and acting as it must.”)।

তবে সাম্যবাদের সর্বোচ্চ স্তরে সমাজ হবে অ-রাজনীতিক ও আইনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। এই সাম্যবাদী সমাজ আইনবিহীন। এই সমাজ পরিচালিত হবে ন্যায়ের ধারণার বিমূর্ত এক ভাবকল্পের মাধ্যমে। ন্যায় ধারণার এই বিমূর্ত ভাবকল্পের কোন আর্থনীতিক উৎস থাকে না। তবে ন্যায়ের ধারণার অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। বহু শতাব্দী ধরে ন্যায়ের এই ধারণা চলে আসছে। ন্যায়ের এই ধারণার একটা ভিত্তি আছে। এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না। তবে এই ভিত্তি আর যাইহোক আর্থনীতিক শক্তি নয়।

ন্যায়ের আর্থনীতিক উৎস সম্পর্কে প্রধোঁর ধারণা:

ন্যায় ধারণার আর্থনীতিক উৎস প্রসঙ্গে প্রধোঁ (Proudhon)-র অভিমত আলোচনা করা আবশ্যক। আর্থনীতিক উৎস থেকেই প্রধোঁও তাঁর ন্যায়ের ধারণাটিকে নিয়েছেন। এ কথা ঠিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মার্কসীয় ধারণার সঙ্গে প্রধোর ধারণার পার্থক্য বর্তমান। প্রধোঁ মার্কসের মত আর্থনীতিক বাস্তব ঘটনাসমূহ বা তথ্যাদি থেকে তাঁর ন্যায়ের ধারণা আহরণ করেননি। আর্থনীতিক বাস্তব ঘটনা নয়, প্রুধোঁ আর্থনীতিক নীতি থেকে ন্যায়ের ধারণা সংগ্রহ করেছেন। কতকগুলি আর্থনীতিক নীতি এবং প্রাথমিকভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার নীতি (mutualite)-র ভিত্তিতে তিনি ন্যায়ের ধারণায় উপনীত হয়েছেন। মার্কসের মত তিনি শ্রেণী সংঘাতের কথা বলেননি। তিনি সমাজে বিভিন্ন বৃত্তিগত গোষ্ঠী এবং এই সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক প্রয়োজনীয়তা ও পারস্পরিক সেবামূলক সংযোগ সম্পর্কের কথা বলেছেন। এই বক্তব্য অনুযায়ী আর্থনীতিক উৎসসঞ্জাত ন্যায়ের ধারণা সমাজের বিশেষ কোন শ্রেণীর স্বার্থের ভিত্তিতে সৃষ্টি হবে না। সমগ্র সমাজের স্বার্থের ভিত্তিতে ন্যায়ের ধারণা গড়ে উঠবে। পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সমাজের সকল বৃত্তিগত গোষ্ঠীকে নিয়ে গড়ে উঠবে ন্যায়ের এই ধারণা। ‘ন্যায়’ সম্পর্কিত এই ধারণার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে দ্যুগুই (Duguit)-এর আইনগত দর্শনের কথা বলা হয়।

সংহতি ও ন্যায়—দ্যুগুইয়ের ধারণা:

দ্যুগুই প্রুধোর ‘পারস্পরিক বোঝাপড়ার নীতি’ (mutualite) – র জায়গায় সংহতির নীতি (solidarity) কথাটি ব্যবহার করেছেন। পারস্পরিক বোঝাপড়াকেই দ্যুগুই সংহতি হিসাবে দেখিয়েছেন। এবং তিনি এই ধারণাটি প্রুধোঁর কাছ থেকেই পেয়েছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে জাতীয় সমাজ হল প্রধানত একটি আর্থনীতিক সমাজ। এই কারণে আর্থনীতিক কাঠামো ও কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে এই সমাজের পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সমাজে বিভিন্ন বৃত্তিগত গোষ্ঠী বর্তমান। এই সমস্ত গোষ্ঠী উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত থাকে। পারস্পরিক বিনিময় প্রথার ভিত্তিতে গোষ্ঠীগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই সমস্ত গোষ্ঠীর কোনটিই একেবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বর্তমান। যে-কোন সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ ও স্বাচ্ছন্দ্যের স্বার্থে প্রয়োজন হল সর্বাধিক উৎপাদন। সর্বাধিক উৎপাদনই হল সকল সমাজের লক্ষ্য। কারণ সর্বাধিক উৎপাদন সর্বাধিক ভোগের সুযোগ সৃষ্টি করে। সর্বাধিক উৎপাদনের জন্য আবশ্যক হল সর্বাধিক সহযোগিতা। সর্বাধিক সহযোগিতায় এসে যায় সংহতির নীতি। আবার সংহতির নীতি সুত্রে এসে পড়ে ন্যায়ের ধারণা। এই ন্যায়ের ধারণা হল স্বয়ংসঠিক বা ন্যায্য। এ হল একটি মূল্যবোধ। এই ন্যায়কে আইনের নৈর্ব্যক্তিক উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। দ্যুগুই-এর অভিমত অনুসারে এ হল ‘ন্যায্যতার অনুশাসন’। প্রুধোঁর মতানুসারে এ হল আর্থনীতিক আইন। বার্কার বলেছেন: “…the maximum of production… entails the maximum of cooperation. This maximum of co-operation involves and supplies the principle of solidarity; and this principle of solidarity furnishes in turn the notion of justice, the notion of what is right in itself, the notion of value, which is the impersonal source of law. The name which Duguit gives to this notion is that of regle de droit. This…is a conception similar to Proudhon’s and droit économique….’

সংহতি ও ন্যায়-ধারণার সম্পর্কে বার্কারের অভিমত:

বার্কার ন্যায়ের উৎস সম্পর্কিত দ্যুওইয়ের মতবাদকে স্বীকার করেননি, সমালোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে ‘সংহতি’ ন্যায় ধারণার সম্পূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। সংহতি স্বয়ং বা তার প্রকৃতির মাধ্যমে ন্যায়ের ধারণা সৃষ্টি করে না। তা ছাড়া কেবল সংহতির মাধ্যমে ন্যায়ের ধারণাও ব্যাখ্যা করা যায় না। বার্কার বলেছেন: “Solidarity… cannot be the whole source of our notion justice: taken by itself, and in itself, it cannot produce or explain the notion.” বিষয়টি উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বার্কার বলেছেন যে মৌচাকের সংহতি আছে; কিন্তু কেবলমাত্র এই সংহতির ভিত্তিতে ন্যায়-ধারণার সৃষ্টি হয় না। মৌমাছিদের মধ্যে আত্মবিকাশের স্বাধীনতা নেই। বাস্তব আত্মবিকাশের এই স্বাধীনতা ন্যায়-ধারণা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিবেচিত হয়। বার্কারের আরও অভিমত হল, উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংহতিই একমাত্র বিষয় নয়। উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের অবদানও অনস্বীকার্য। এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: উদ্ভাবনী ক্ষমতা, দক্ষপরিচালন-ব্যবস্থা প্রভৃতি। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সামাজিক সংহতির মত ব্যক্তিগত উদ্যোগও হল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বার্কারের অভিমত অনুসারে, এই ব্যক্তিগত উদ্যোগও ন্যায় অনুশাসনের অন্যতম নীতিতে পরিণত হতে পারে।

(৪) ন্যায় ধারণার উৎস হিসাবে নীতিশাস্ত্র

নীতিবোধ ও ন্যায়-ধারণা: নার্কার নীতিশাস্ত্রকে ন্যায়-ধারণার উৎস হিসাবে গণ্য করার পক্ষপাতী। তাঁর মতানুসারে ন্যায়ের উৎস হল জনসম্প্রদায়ের নৈতিক মান। সাধারণ নৈতিক চেতনার দ্বারাই এই নৈতিক মানের সৃষ্টি হয়। এবং এই সাধারণ নৈতিক চেতনাই নৈতিক মানকে বাস্তবে কার্যকর করে। সুতরাং জনসম্প্রদায়ের নৈতিক মান সাধারণ নৈতিক চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে। বার্কার বলেছেন: “…the moral standard of the community, precipitated in and enforced by the general moral conscience, will be the source of notion of justice….” এই ন্যায়-ধারণার মধ্যে নিহিত থাকে একটি মূল্যবোধের ব্যবস্থা বা একটি সমন্বিত মূল্যবোধ। এবং এই মূল্যবোধের ব্যবস্থাই হল রাষ্ট্রীয় আইনের (positive law) নৈর্ব্যক্তিক উৎস। অধ্যাপক বার্কার নৈতিকতা বলতে মূল্যবোধসমূহের সম্যক সংরক্ষণ ও পরিপোষণের কথা বলেছেন। এই নৈতিকতা বা নৈতিক মান ব্যতিরেকে সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা অসম্ভব প্রতিপন্ন হয়। আবার ন্যায়-ধারণা বর্জিত সমাজে আইন নীতিহীন হয়ে পড়ে। এবং বার্কারের অভিমত অনুসারে নীতিহীন সমাজে ন্যায়-ধারণার অস্তিত্ব অসম্ভব।

আইনের মূল্যবোধ ও বৈধতা: বার্কার এ ক্ষেত্রে নৈতিকতার সঙ্গে আইনের সংযোগ-সম্পর্ক প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে আইনকে মূল্যবোধ ও বৈধতাযুক্ত হতে হবে। মূল্যবোধযুক্ত হওয়ার জন্য আইন সাধারণ নৈতিক চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া দরকার। ন্যায় ধারণার মধ্যেই নিহিত আছে সাধারণ নৈতিক চেতনা। আইনকে এই সাধারণ নৈতিক চেতনাকে প্রতিপালন করতে হবে। তা হলেই আইন মূল্যবোধ যুক্ত হবে। নৈতিকতা বর্জিত আইন হল মূল্যবোধহীন। সুতরাং মূল্যবোধ সম্পন্ন হওয়ার জন্য আইনকে সাধ্যানুযায়ী সম্ভবমত সাধারণ নৈতিক চেতনার দাবিসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। নৈতিক চেতনার এই পরিণতি হল ন্যায় সম্পর্কিত ধারণার অভিব্যক্তি। এইভাবে মূল্যবোধযুক্ত আইন মানব সম্পর্ক সংক্রান্ত ন্যায়ের অনুশাসনকে বাস্তবায়িত করবে। ন্যায়ের এই অনুশাসনের উৎপত্তি হয় নীতিশাস্ত্র থেকে। তা ছাড়া আইন বৈধতাযুক্তও হওয়া দরকার। জনসম্প্রদায়ের বিধিসম্মত কর্তৃপক্ষের দ্বারা ঘোষিত, স্বীকৃত ও প্রযুক্ত হলে আইন বৈধ বলে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ আইনকে মূল্যবোধসমৃদ্ধ এবং বৈধতাযুক্ত হতে হবে এবং শেষ উপায় হিসাবে আইনকে সাধারণ নৈতিক চেতনার দাবিগুলিকে পূরণ করতে হবে। বার্কার বলেছেন: “In order that law may be valid, it is enough that it should satisfy the canon of declaration, recognition, and experiment by a constituted authority acting on behalf of the community. In order that it may have value, over and above validity, law must also satisfy…. the canon of conformity to the demands of moral conscience as expressed in the general notion of justice.”

আইন ও নৈতিকতা: নৈতিকতা ও আইনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বর্তমান, এ কথা অনস্বীকার্য। এতদসত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বার্কার এই পার্থক্য প্রসঙ্গেও আলোচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে আইন ও নীতিশাস্ত্র এক নয়। বৈধতা ও নৈতিকতা সমার্থক নয়। মানুষের বাহ্যিক আচরণের সঙ্গে আইন সংশ্লিষ্ট। আইনের দাবি মিটে যায় বাহ্যিক আচরণ পালিত হলেই। অপরদিকে নীতিশাস্ত্র বা নৈতিকতা বাহ্যিক আচরণের সঙ্গে যেমন সম্পর্কিত, তেমন আভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, কোন একটি কাজ বৈধ বলে বিবেচিত হবে যদি তা আইনানুমোদিত আচরণের অনুগামী হয়। অপরদিকে নৈতিকতার মানদণ্ড আভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যেই বর্তমান। বাহ্যিক প্ৰকাশ যাই হোক না কেন, একটি আচরণ আভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যের দ্বারা প্রণীত হলে তা নৈতিক আচরণ হিসাবে বিবেচিত হবে। বৈধ আচরণের ক্ষেত্রে আইনের অনুমোদন আবশ্যক এবং নৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে আবশ্যক হল আভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্যের চরিত্র ও তার অনুমোদন। বার্কার বলেছেন: “An act is legal, whatever its motive, so long as it is the act demanded by the law. An act is not moral, whatever its outword show may be, if it is not inspired by an internal motive and does not proceed from a ‘state of character concerned with choice.”

আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক নির্ধারণ: পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও, আইন ও নীতিবিদ্যার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বর্তমান। আইন ও নীতিবিদ্যা উভয়েই ঔচিত্য সম্পর্কে আগ্রহী। অনুজ্ঞাসূচক অর্থে উভয়কেই ব্যবহার করা হয়। আবার উভয়েই জীবনের অভিন্ন বিষয়গুলি নিয়ে ব্যস্ত (“Law and ethics are both concerned with what should be, and they both speak in the imperative mood: they both deal, in the main, with identical areas of life….” এই অবস্থায় আইন ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া আবশ্যক। আইন ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনার ব্যাপারে বার্কার দুটি পদ্ধতির কথা বলেছেন। প্রথম পদ্ধতিটি অনুসারে বলা হয় যে, আইন ন্যূনতম একটি নৈতিক মান নির্ধারণ করে দেয়। এই মান অর্জন করা প্রত্যেকের পক্ষে আবশ্যিক। মানুষের আচরণের ন্যূনতম একটি সাধারণ মান আইন নির্দিষ্ট করে দেয়। প্রত্যেকে পরিষ্কারভাবে আচরণের এই ন্যূনতম মানটি অনুধাবন করতে পারে। স্বভাবতই সকলের আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানটিকে সমরূপ একটি নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে আইনের ভূমিকা স্কুল শিক্ষকের মত। শাস্তিমূলক শৃঙ্খলার মাধ্যমে আইন আচরণ সম্পর্কিত অভ্যাসকে বাস্তবায়িত করে। এবং এইভাবে আইন মানুষকে নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন করে তোলে। তবে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বার্কার সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে আইনকে ন্যূনতম নৈতিক মান হিসাবে ধরে নিলে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য অপসারণের প্রবণতা দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে নৈতিকতাই আর থাকবে না। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অনুসারে বলা হয় যে, বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইন হল এক সমরূপ নিয়মমাত্র। সকলের উপর আইন সমানভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে। কেবলমাত্র মানুষের বাহ্যিক আচরণের ক্ষেত্রেই আইন সীমাবদ্ধ থাকে। নৈতিক আচরণের জন্য আবশ্যিক বাহ্যিক শর্তাদি সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে আইন উদ্যোগী হয়। অর্থাৎ আইন বাহ্যিক বিধি-ব্যবস্থার একটি সাধারণ কাঠামো সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। এইভাবে স্বাধীন ও সহজভাবে নৈতিক চেতনা প্রকাশিত ও পরিলক্ষিত হতে পারে। এদিক থেকে বিচার করলে আইনকে নৈতিকতার ন্যূনতম মান বলা যায় না। বরং আইন হল সর্বোচ্চ মর্যাদাযুক্ত শর্তাদি যা নৈতিকতার সংরক্ষক হিসাবে ভূমিকা পালন করে। নৈতিক উন্নয়নের পথে বিভিন্ন বাহ্যিক বাধা অনিবার্যভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। আইন এ সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে অপসারিত করে। অর্থাৎ আইন এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতার প্রতিবন্ধক হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। বার্কার বলেছেন: “All moral development is inevitable confronted by external obstacles or hindrances it is the function of law to remove the obstacles’ or ‘hinder the hindrances’.”

ন্যায়ের নীতিশাস্ত্র উৎস সম্পর্কে বার্কারের অভিমত:

আইন ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত দুটি পদ্ধতির মধ্যে অধ্যাপক বার্কার দ্বিতীয় পদ্ধতিটিই সমর্থন করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে দ্বিতীয় পদ্ধতিটির মাধ্যমে আইন ও নৈতিকতাকে অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও যথার্থভাবে সংযুক্ত করা সম্ভব। আইনকে ন্যূনতম নৈতিক মান হিসাবে বিবেচনা করলে আইনের ভূমিকা হবে ন্যূনতম যা তার নিজের পক্ষেই প্রতিকূল বলে প্রতিপন্ন হবে। আবার এই ব্যবস্থা নৈতিকতারও ক্ষতি করবে। ন্যূনতম নৈতিকতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের পূর্ণাঙ্গ নৈতিকতার বিকাশ ঘটে না। অপরদিকে আইনকে যদি বাহ্যিক শর্তাদির সর্বোত্তম ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তা হলে নৈতিকতার বিকাশের জন্য সহায়ক ও অধিকতর অনুকূল একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার ফলে নৈতিকতার উন্নয়ন সাধিত হয়। আইন নৈতিকতাকে সংরক্ষণ করে এই অর্থে যে, আইনের মাধ্যমে নৈতিকতার স্বাধীন কাজকর্মের স্বার্থে সহায়ক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার আইন নৈতিকতার ভবিষ্যৎ পথকেও প্রশস্ত করে। আইন পূর্ণাঙ্গ নৈতিকতাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করে থাকে। বার্কার বলেছেন: To stand outside in self restraint, and yet to defend with power to be separate and yet connected-such is the relations of law to morality.”