একটি নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামাের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষ কিছু সুবিধা থাকলেও এর সীমাবদ্ধতাও কম নয়। সেইসব সীমাবদ্ধতা বা ত্রূটিগুলি হল一

(১) যান্ত্রিক ও কৃত্রিম পদ্ধতি: এটি একটি যান্ত্রিক এবং কৃত্রিম শিক্ষাপদ্ধতি। চার দেয়ালে ঘেরা এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই হাঁপিয়ে ওঠে।

(২) সুযোগসুবিধার অভাব: স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে একদিকে প্রবল হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে শিক্ষার প্রতি জনগণের বেড়ে চলা চাহিদা—এই দুটির মধ্যে সামঞ্জস্য আনার জন্য যে পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়ােজন তার ব্যবস্থা করা এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ফলে এই শিক্ষার আশানুরূপ বিস্তার ঘটেনি।

(৩) শিক্ষকনির্ভরতা: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মূলত শিক্ষকনির্ভর একটি প্রক্রিয়া। তাই এই প্রক্রিয়ার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষকের ওপর।

(৪) বৈচিত্র্যহীনতা: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পাঠক্রমে বৈচিত্র্যের অভাব লক্ষপীয়। ফলে নিজস্ব রুচি, চাহিদা, আগ্রহ এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পাঠক্রম শিক্ষার্থীরা পায় না।

(৫) পরিবর্তনণীল নয়: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় পাঠিক্রম পূর্বনির্দি্ট এবং প্রয়ােজনমতাে পরিবর্তনসাপেক্ষ নয়।

(৬) নির্দিষ্ট সময়: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়কেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষালয়ে উপস্থিত হতে হয়।

(৭) পরীক্ষাকেন্দ্রিকতা: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মূলত পরীক্ষা কেন্দ্রিক। এই শিক্ষার দ্বারা একমাত্র বিষয়গত পারদর্শিতা ব্যতীত শিক্ষার অন্য লক্ষ্যগুলি কী পরিমাণে অর্জিত হয়েছে তা জানা যায় না।

(৮) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থীর ওপর জোর করে পাঠক্রমের বােঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সামর্থ্যকে বিবেচনা করা হয় না।

(৯) শিক্ষায় প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ক্ষেত্রে ভরতির নির্দিষ্ট সময় থাকে। শিক্ষার্থী যদি ওই সময়ে ভরতি হতে না পারে, তাহলে তার সেই শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয়।

(১০) যাতায়াতের সমস্যা: পরিবহণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অল্প বয়স এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের পক্ষে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতিতে সমস্যা দেখা দেয়।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় বেশ কিছু ত্রূটি থাকলেও এই শিক্ষাব্যবস্থাটি আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধান স্থান দখল করে আছে।