অথবা, ঠিক মাঝখানে একটি মৃত বালিকা শুইয়া রহিল, তাহাকে কেহ লঙ্ঘন করিতে পারিল – ব্যাখ্যা কর

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘মধ্যবর্তিনী’ গল্পে হরসুন্দরী ইচ্ছে করেই স্বামী নিবারণকে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করায়। তার সতিনের নাম শৈলবালা- নববধূটি একটি ছোটো বালিকা। তাদের সাতাশ বছরের সংসার জীবনে কোনো কাব্যরসের গন্ধ না থাকায় নিবারণ শৈলবালাকে ঘরে এনে তার প্রতি যথেষ্ট প্রেম অনুভব করে। শৈলবালা যেন ঘরের কোনো কাজকর্ম না করে তার জন্য হরসুন্দরীকে নির্দেশ দেয়। এ প্রবঞ্চনা থাকা সত্ত্বেও হরসুন্দরী তা মাথা পেতে মেনে নেয়। শুধু তাই নয়, নিবারণ শৈলবালার আবদার মিটাতে অফিস থেকে টাকা পর্যন্ত চুরি করে। অফিসের সাহেব ভালো মানুষ হওয়াতে নিবারণকে দু’দিন সময় বেঁধে দেয় টাকা তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য। নিবারণ এবার হরসুন্দরীর কাছে আসে গহনার জন্য কিন্তু সে তো গহনা আগেই শৈলবালাকে দিয়ে দিয়েছে। তাই তারা দু’জনে মিলে শৈলবালার কাছে গহনা চেয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে নিবারণ পৈত্রিক বাড়ি বিক্রি করলেও চাকরি হারায় তারপর দু স্ত্রী নিয়ে নিবারণ স্যাঁতসেঁতে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠে। শৈলবালা এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার উপর সে গর্ভবতী থাকার কারণে অসুখ আরো বাড়তে থাকে। অনেক সেবা করেও তাকে বাঁচানো যায় না। নিবারণের প্রথমে বড় একটা আঘাত লাগে কিন্তু কিছুদিন পরে সে একটা মুক্তির আনন্দ অনুভব করে। নিবারণ আবার আগের মতো হরসুন্দরীর পাশে এসে চোরের মতো শয়ন করে। কিন্তু তাদের দু’জনের মনের দুঃখ ততদিনে বেড়ে গেছে এবং একজন আরেকজনের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তারা পাশাপাশি শয়ন করলেও তাদের মনে হয়েছে তাদের মাঝখানে ঠিক মৃত শৈলবালা শুয়ে আছে। তাই তারা মৃত শৈলবালাকে অতিক্রম করতে পারল না।