প্রশ্নঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ধর্মীয় সংস্কারগুলাে সংক্ষেপে আলােচনা কর।
অথবা, ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অবদান আলােচনা কর।
উপস্থাপনাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দুনিয়ায় আবির্ভাব ঘটেছিল বিশ্ব মানবের ত্রাণকর্তা হিসেবে। তিনি ছিলেন বিশ্বের জন্য রহমত। তাই তিনি আরবের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মহাসংস্কার সাধন করেছিলেন। ঐতিহাসিক রায়মন্ড লার্জ বলেন- The founder of Islam is, in fact the promoter of the first social and international revolution of which history gives mention.
মুহাম্মদ (স)-এর ধর্মীয় সংস্কারঃ
১. একত্ববাদ প্রতিষ্ঠাঃ পৌত্তলিকতা, বস্তুপূজা ও ধর্মীয় কুসংস্কারে সমগ্র আরব উপদ্বীপের ধর্মীয় জীবন যখন নিমজ্জিত রাসূল (স) তখন সেখানে তৌহিদের অমােঘ বাণী প্রচার করে এক প্রচণ্ড আলােড়ন সৃষ্টি করেন। তিনি ঘােষণা করলেন, আল্লাহ এক, তার কোনাে অংশীদার নেই। মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসূল।
২. পৌত্তলিকতার অবসানঃ বহুকালের অহীর জ্ঞান বর্জিত নিরক্ষর পৌত্তলিক আরবদের শিরকতন্ত্রের মূলে রাসূল (স)-এর তাওহীদের বাণী চরম আঘাত হানে। শেষ পর্যন্ত জড়বাদী পৌত্তলিকদের মাঝে তিনি তৌহিদবাদী ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৩. নবী রাসূলের প্রতি বিশ্বাসঃ মহানবী (স) শিক্ষা দিলেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ও সৎপথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অগণিত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। সকলের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনতে হবে। কারাে ব্যাপারে কোনাে পার্থক্য করা চলবে না।
৪. শরীয়ত শিক্ষাঃ ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি কালেমা, নামায, রােযা, হজ্জ ও যাকাত সম্পর্কে মানুষকে এমনভাবে শিক্ষা দিলেন, যা প্রতিটি বিশ্বাসীর জীবনকে এক নতুন আলাের পথের সন্ধান দিল।
৫. পারলৌকিক জীবনে বিশ্বাসঃ জাহেলী মানুষেরা মৃত্যুর পর হাশর, পুনরুত্থান, কিয়ামত বেহেশত দোযখ কিছুই বিশ্বাস করত না। মহানবী (স) শিক্ষা দিলেন, এ দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর সবাই পুনরুত্থিত হবে এবং কৃতকর্মের ফলাফল ভােগ করবে।
৬. ইহুদি খ্রিস্টানদের ধারণার অপনােদনঃ ইহুদি খ্রিস্টানদের ধারণা ছিল, তারা যতই পাপকর্ম করুক না কেন, তাদের শাস্তি পেতে হবে না, পেলেও অল্প কদিন শাস্তি ভােগ করতে হবে। কেননা তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে গেছেন স্বয়ং যীশু। মহানবী (স) তাদের এ অলীক ধারণার অপনােদন করে ঘােষণা দিলেন, কুরআনের বাণী, একের বােঝা অন্য কেউ বহন করবে না।
৭. জন্মান্তরবাদ-এর পরিবর্তনঃ অজ্ঞতার যুগের আরেকটি অন্ধ বিশ্বাস জন্মান্তরবাদ। অর্থাৎ মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হয়ে পূর্ব কর্মফল ভােগ করার জন্য আবার পৃথিবীতে আগমন করবে। এ ধারণা বিদূরিত করে ঘােষণা করলেন, কোনাে মানুষই মৃত্যুবরণের পর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে না।
উপসংহারঃ মহানবী (স) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না; বরং তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। ফলে তিনি একটি শক্তিশালী জাতি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন- His life is the noblest record of a work nobly and faithfully performed.
Leave a comment