তােমার কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রচনা কর।

অথবা, তােমার কলেজ লাইব্রেরি জরিপ করে অধ্যক্ষের বরাবর একটি প্রতিবেদন লেখ। 

 

তারিখ : ১৭/০৯/২০২১

বরাবর
অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান সরকারি মহিলা কলেজ

ভৈরব, কিশােরগঞ্জ।
বিষয় : কলেজ গ্রন্থাগার সংক্রান্ত প্রতিবেদন।
সূত্র : স্মারক নং- জি. র, ম. ক; ৩০৫৭/২১

জনাব
আপনার প্রেরিত চিঠি (স্মারক নং- জি, র, ম. ক; ৩০৫৭/২১) মােতাবেক কলেজ গ্রন্থাগারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় তথ্যানুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবেদন আপনার সদয় অবগতির জন্য পেশ করছি 一

কলেজ গ্রন্থাগারটির সংস্কার প্রয়ােজন

কিশােরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত জিল্লুর রহমান সরকারি মহিলা কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ । প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত কলেজটি অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে কলেজটি বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘােষিত হয়েছে। তবে কলেজ গ্রন্থাগারটি অযত্ন-অবহেলা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে, যা এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। নিম্নে গ্রন্থাগারের সমস্যা-সংকুল বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হলাে:

১. কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হলেও বর্তমানে গ্রন্থাগারটির অবস্থা খুবই করুণ। বইয়ের সংখ্যাও কম। তার মধ্যে রয়েছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের সাথে সাথে গ্রন্থাগারটির উন্নয়ন মােটেই হয়নি । শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের প্রয়ােজন বাড়লেও বইয়ের সংখ্যা বাড়েনি; বরং কমেছে। অনেক ছাত্র-শিক্ষক বই নিয়ে আর ফেরতই দেয়নি। গ্রন্থাগারিক অনেক বই খুঁজে পাচ্ছেন না, এজন্য বইয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না। বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর বইয়ের জন্য টাকা বরাদ্দের কথা থাকলেও সেই পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয় না।

২. বর্তমানে কলেজের গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা মােট ৫,৫৫০টি, যা প্রয়ােজনের তুলনায় নিতান্তই কম।

৩. কলেজের গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতমানের বই থাকা দরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান ও পাঠগ্রহণের স্বার্থে প্রয়ােজনীয় সহায়ক বই দরকার। গ্রন্থাগারে রেফারেন্স বইয়েরও যথেষ্ট অভাব। তাছাড়া কলেজের গ্রন্থাগারের বইয়ের বিষয়, সংখ্যা ও মানের মধ্যেও সংগতি নেই। এর কারণ, কলেজের গ্রন্থাগারিকের পদটি শূন্য। একজন বাংলা শিক্ষক গ্রন্থাগারিকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাই তিনি প্রয়ােজনীয় সময় দিতে পারেন না।

৪. গ্রন্থাগারে বই রক্ষণাবেক্ষণে বৈজ্ঞানিক কোনাে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় নাই। গ্রন্থাগারে ক্যাটালগ নেই। তাছাড়া বই ইস্যু এবং ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেও কোনাে ব্যবস্থা দেখা যায় না।

৫. গ্রন্থাগারে মােট বইয়ের সংখ্যার কোনাে বিষয়ভিত্তিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। পুরাতন একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও এর সঙ্গে বইয়ের কোনাে মিল নেই।

৬. পাঠ্যবই ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই নেই বললেই চলে।

৭. গত ২ বছর ধরে গ্রন্থাগারে নতন বা আধুনিক সংস্করার কোনাে বই কেনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ শিক্ষাথাদের কাছ থেকে প্রতিবছর গ্রন্থাগারের জন্য চাঁদা আদায় করা হয়।

৮. বইয়ের তালিকা তৈরিতে কোনাে বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অনুসরণ করা হয়না।

৯. গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহের অপরিহার্য পৃষ্ঠাসময়ে কাটা-ছেড়ার দাগ দেখা যায়। আবার কিছু বইয়ের ভেতরের কিছু পরীা খুজে পাওয়া যায় না।

১০. কতিপয় শিক্ষার্থী বিনা প্রয়ােজনে গ্রন্থাগারে বসে আড্ডা দেয়। ফলে গ্রন্থাগারে বসে পড়াশােনার কোনাে পরিবেশ থাকে।

এসব নানা সমস্যা চিহ্নিত করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গ্রন্থাগারটি শিক্ষার্থীদের আদৌ কোনাে উপকারে আসছে না।

এ অবস্থায় নিম্নরূপ সুপারিশ করছি, যার বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারটি শিক্ষার্থীদের যথার্থ উপকারে আসতে পারে :

১. গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানাের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।

২. শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের প্রয়ােজন মেটাতে বিভিন্ন বিষয়ের পর্যাপ্ত সংখ্যক বই ক্রয় করে গ্রন্থাগারে রাখতে হবে ।

৩. সরকারি এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে অনুদান হিসেবে গ্রন্থাগারের জন্য বই সংগ্রহ করতে হবে।

৪. অতি দ্রুত প্রশিক্ষিত গ্রন্থাগারিক এবং ক্যাটালগার নিয়ােগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. গ্রন্থাগারের সকল পুস্তকের হিসাব গ্রহণ করে দশমিক পদ্ধতিতে তালিকা তৈরি করতে হবে।

৬. বইপত্র বাড়িতে ইস্যু করা এবং পাঠাগারে পড়ার উভয় রকম ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্যে ছাত্র/ছাত্রীদের দুধরনের গ্রন্থাগার কার্ড ইস্যু করা দরকার। বই ইস্যু করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।

৭. বই যাতে চুরি কিংবা প্রয়ােজনীয় পৃষ্ঠা কেটে নিয়ে যাওয়া না হয়, সেজন্যে প্রয়ােজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৮. গ্রন্থাগারের জন্যে স্বতন্ত্র তহবিল গড়ে তুলতে হবে এবং তাতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া বার্ষিক চাঁদার যথােপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৯. প্রয়ােজনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রন্থাগারের জন্য বার্ষিক চাঁদা সহনীয় পর্যায়ে বাড়াতে হবে ।

সর্বোপরি গ্রন্থাগারের সার্বিক উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্যে একটি গ্রন্থাগার কমিটি গঠন করে, তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে গ্রন্থাগারের সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে বলে আমি মনে করি।

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : জান্নাতুল ফেরদৌস,

জিল্লুর রহমান সরকারি মহিলা কলেজ।

প্রতিবেদনের শিরােনাম : কলেজ গ্রন্থাগারটির সংস্কার প্রয়ােজন।

প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১:০০ টা।