“তারাপদ হরিণশিশুর মতো বন্ধনভীরু, আবার হরিণেরই মতো সংগীতমুগ্ধ।”

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘অতিথি’ গল্পে তারাপদ পিতামাতার চতুর্থ পুত্র এবং সে শৈশবেই পিতৃহীন হয়। আলোচ্য উক্তিটি তার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় কথা হলো সে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে। অথচ তার মধ্যে কোনো জেদ বা গোঁ প্রকাশ পায় না। তবে সে কোনো বন্ধনেই আবদ্ধ হতে চায় না। গ্রামের সবাই, পরিবারের সবাই তাকে ভালোবাসে। আর সেই তারাপদ সাত আট বছর বয়সে যাত্রার দলের গানে মুগ্ধ হয়ে গ্রাম ছাড়ে। গ্রামের লোকেরা তাকে খুঁজে বাড়ি আনল কিন্তু এরূপ সে আরো দু-তিনবার পলায়ন করল। ফলে সকলেই তার আশা পরিত্যাগ করে। একটি যাত্রা দলের অধিকারী ও সদস্যরা সবাই তাকে স্নেহ করে। আবার সে বন্ধন ছিন্ন করে অন্যত্র যায়। পাঁচালির দলে ভিড়ে পাঁচালি শিখে যোগ দেয় জিমন্যাস্টিকের দলে। সেখানে সে বাঁশি বাজাত। আবার নন্দীগ্রামের জমিদাররা যাত্রা খুলেছে বলে সেই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তারাপদ হরিণশিশুর মতো বন্ধনভীরু, আবার হরিণের মতো সংগীতমুগ্ধ। যাত্রার গানই তাকে প্রথমে ঘরছাড়া করেছিল। শেষবারে সে এক জিমন্যাস্টিক দলের সাথে গ্রাম ত্যাগ করেছিল। এবার সে নন্দীগ্রামে জমিদার বাবুর মহাসমারোহে এক শখের যাত্রা খুলেছে শুনে সেখানে যাত্রা করে। কিন্তু মতিলাল বাবুর নৌকায় উঠে সে এবার সবকিছু ভুলে যায়। নৌকায় সে রান্না-বাড়া, বাজার করা, নৌকাচালনা থেকে আরম্ভ করে মাঝিদের নৌকার দাঁড়টানাসহ সব কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও পাঁচালি, কথকতা, কীর্তনগান, যাত্রাভিনয়ের সুদীর্ঘ খণ্ড সকল তার কণ্ঠে ছিল। তাই সে গানেও সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে এবং সবার প্রিয়জন হয়ে ওঠে। যখন সে একটি এলাকার মানুষদেরকে মুগ্ধ করে- তখনই সে সেখান থেকে বাঁধন কেটে নতুন স্থানে গমন করে।