উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘অতিথি’ গল্পে কাঁঠালিয়ার জমিদার মতিলা, বাবু নৌকা করে সপরিবারে স্বদেশে যাচ্ছিল। পথমধ্যে সে নৌকায় স্থান করে নেয় তারাপদ। সে পথের মধ্যে নন্দীগাঁয়ে নামতে চায়। মুহূর্তের মধ্যে নৌকার সবার মন. জয় করে। শৈশব থেকেই সে ঘরছাড়া হয়েছিল গানের কারণে। তারাপদ তার পিতামাতার চতুর্থ সন্তান এবং শৈশবেই সে পিতৃহীন হয়েছিল। শৈশবেই সে বিভিন্ন সময় ঘর ছেড়ে পালাত। প্রথমে সে বিদেশি যাত্রার দলের সাথে ঘর ছেড়েছিল। তারাপদ হরিণশিশুর মতো বন্ধনভীরু, আবার হরিণের মতো সংগীতমুগ্ধ। যাত্রার গানই তাকে প্রথমে ঘরছাড়া করেছিল। শেষবারে সে এক জিমন্যাস্টিক দলের সাথে গ্রাম ত্যাগ করেছিল। এবার সে নন্দীগ্রামে জমিদারবাবুর মহাসমারোহে এক শখের যাত্রা খুলেছে শুনে সেখানে যাত্রা করে। কিন্তু মতিলালবাবুর নৌকায় উঠে সে এবার স্বকিছু ভুলে যায়। নৌকায় সে রান্না-বাড়া, বাজার করা, নৌকাচালনা থেকে আরম্ভ করে মাঝিদের নৌকার দাঁড়টানাসহ সব কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও পাঁচালি, কথকতা, কীর্তনগান, যাত্রাভিনয়ের সুদীর্ঘ খণ্ড সকল তার কণ্ঠে ছিল। তাই সে গানেও সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে এবং সবার প্রিয়জন হয়ে উঠে। যেমন-
“বাঁশির মতো সুমিষ্ট পরিপূর্ণস্বরে দাওরায়ের অনুপ্রাস ক্ষিপ্রবেগে বর্ষণ করিয়া চলিল; দাঁড়ি-মাঝি সকলেই দ্বারের কাছে আসিয়া ঝুঁকিয়া পড়িল; হাস্য করুণা এবং সংগীতে সেই নদীতীরের সন্ধ্যাকাশে এক অপূর্ব রসস্রোত প্রবাহিত হইতে লাগিল।”
সুতরাং বলা যায়, সংগীতই তারাপদকে ঘরছাড়া করেছিল এবং মানুষের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিতেও সংগীত একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
Leave a comment