টাইম ট্রাভেল নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। টাইম ট্রাভেল সম্ভব কি না, টাইম ট্রাভেল করে সত্যিই ভবিষ্যতে বা অতিতে যাওয়া যাবে কি না, আদতেও কেউ কখনো টাইম ট্রাভেল করেছে কি না এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় আমাদের মাঝে। তবে মজার ব্যাপার হল এটি এখনো আমাদের মনে একটি অমীমাংসিত রহস্য হয়েই আছে। এমনকি বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাও এই রহস্য সমাধানে কম ঘাম ছুটান নি। অসংখ্য গবেষণা, তত্ত্ব কিংবা পরীক্ষা কোন কিছুই এই রহস্যের সম্পূর্ণ ইতি টানতে পারে নি।

তবে কোন কোন বিজ্ঞানী নিজেদের পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে টাইম ট্রাভেল নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন, যার মধ্যে স্টিফেন হকিং এর বিখ্যাত একটি পরীক্ষা অন্যতম। তবে এই বিখ্যাত পরীক্ষাটি কিন্তু মোটেও কোন জটিল তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ছিল না।

স্টিফেন হকিং সরল ভাবে কোন এক্সপেরিমেন্ট বা পরীক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি জটিল কোন পরীক্ষণে না গিয়ে সহজ সরল পরীক্ষণের মাধ্যমে জটিল কোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে তিনি টাইম ট্রাভেল নিয়ে করেছিলেন অদ্ভুত একটি পরীক্ষা। অবশ্য পরীক্ষা না বলে একে ‘শ্যাম্পেন পার্টি’ বললেও ভুল হবে না। হ্যাঁ, তিনি টাইম ট্রাভেল নিয়ে এই পরীক্ষাটি করেছিলেন একটি পার্টি আয়োজন করে।

স্টিফেন হকিং এর পরীক্ষা

২৮ জুন, ২০০৯ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট স্থানে তিনি টাইম ট্রাভেলারদের জন্য একটি শ্যাম্পেন পার্টির আয়োজন করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে পার্টি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কাউকে কিছু জানতে দেবেন না, যেন আগে থেকে জেনে কেউ যেন তার পরীক্ষণটি ব্যর্থ না করে দেয়। তাই তিনি কঠোর গোপনীয়তার সাথে পার্টি টি আয়োজন করেন এবং শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই গোপনীয়তা রক্ষা করেন।

এই পার্টির জন্য তিনি একটি নিমন্ত্রণ পত্র ছাপান। এই নিমন্ত্রণ পত্রটি ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য। এতে ছিল পার্টির স্থান, সময় সহ সমস্ত বিস্তারিত বিবরণ। এমনকি টাইম ট্রাভেলার রা পথ যেন হারিয়ে না ফেলেন তার জন্য পার্টি আয়োজনের নির্দিষ্ট স্থানের অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশও উল্লেখ করা ছিল। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই পরীক্ষণটি ডিসকভারি চ্যানেল থেকে পুরোপুরি ভিডিও ধারণ করা হচ্ছিল।

স্টিফেন হকিং এর যুক্তি ছিল, “যেহেতু আমি একজন মোটামুটি বিখ্যাত মানুষ, কাজেই কোন না কোন ভাবে এই নিমন্ত্রণ পত্রের কপি হাজার বছর পরেও টিকে থাকবে যা কিনা অবশ্যই ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেলার এর চোখে পরবে এবং ওয়ার্ম-হোল টাইম মেশিনে করে আমার পার্টিতে এসে যোগদান করবেন।”

হ্যাঁ, মূলত এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই তিনি এমন একটি পরীক্ষা চালান। খুবই সাধারণ একটি তত্ত্ব কিন্তু অখণ্ডনীয়। বর্তমানে আমরা যেমন অতীতের এই গবেষণা সম্পর্কে জানছি, ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেলারদেরও জানা টা অসম্ভব কিছু।

অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়ে তিনি প্রস্তুত হয়ে তার দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু তাঁকে হতাশ করে দিয়ে পার্টিতে কোন টাইম ট্রাভেলার উপস্থিত হন নি। তার ভাষ্যমতে, “কি লজ্জার বিষয়! আমি আশা করছিলাম ভবিষ্যতের মিস ইউনিভার্স আমার দরজায় এসে উপস্থিত হবেন।”

এটিই ছিল স্টিফেন হকিং এর পরীক্ষাটি। খুব সাদামাঠা কিন্তু কার্যকরী এই পরীক্ষা টি দিয়ে স্টিফেন হকিং ধারনা দিয়েছেন যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব হলে অবশ্যই কোন না কোন ভবিষ্যতের মানুষ তার এই পার্টিতে উপস্থিত হতেন। অবশ্য তিনি এটি জোরালো ভাবে কখনো দাবি করেন নি যে টাইম ট্রাভেল আদৌ সম্ভব নয়।

তবে অনেক বিজ্ঞানীর মতে এই পরীক্ষার অনেক খুঁত রয়েছে। কেউ কেউ ধারনা করেন যে হয়তো টাইম ট্রাভেল সম্ভব কিন্তু ভবিষ্যতের কোন মানুষ এই পার্টি সম্পর্কে জানতেই পারেন নি। আবার অনেকের মতে, যেহেতু ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেলার অতীতের এই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে জেনে থাকবেন, তাই জেনে শুনেই অতিতে ভ্রমণ করে এই আয়োজনে ভবিষ্যতের কেউ অংশগ্রহণ করতে আসে নি।

কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান 

Based on This Article