প্রশ্নঃ জালিয়াতি বলতে কি বুঝ? মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা বলতে কি বুঝায় ব্যাখ্যা কর। কোন ক্ষেত্রে একজন লোক তার নাম স্বাক্ষর করায় জালিয়াতির দায়ে দোষী হতে পারে?

What do you mean by forgery? Explain what is meant by making a false document. Under what circumstances may a person be guilty of forgery for signing his own name?

জালিয়াতি (Forgery): বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৬৩ ধারায় জালিয়াতির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি জনসাধারণ কিংবা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করার (বা কোন দাবী বা অধিকার সমর্থন করার কিংবা কোন দাবী বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কিংবা কোন ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা স্পষ্ট বা পরোক্ষ চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে অথবা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে বা প্রতারণা করা যেতে পারে এরূপ উদ্দেশ্যে কোন মিথ্যা দলিল বা কোন মিথ্যা দলিলের অংশ বিশেষ প্রস্তত করে তাহলে সে ব্যক্তি জালিয়াতি করেছে বলে গণ্য বিবেচিত হবে।

জালিয়াতির উপাদানঃ এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে জালিয়াতির যে সকল উপাদান পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-

১. অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ প্রণয়ন করতে হবে। 

২. এরূপ দলিল প্রণয়নের উদ্দেশ্য হতে হবে নিম্নরূপ-

(ক) ব্যক্তিসাধারণের কিংবা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধন, কিংবা (খ) কোন ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি পরিত্যাগ করানো, কিংবা (গ. কারোর স্বত্ব বা দাবী সমর্থন, অথবা, (ঘ) প্রতারণা করা বা প্রতারণার সুযোগ সৃষ্টি করা, অথবা, (ঙ কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চুক্তিতে অংশ নেয়া ।

মিথ্যা দলিল প্রণয়নঃ দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারা মতে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন সম্পাদিত হয় বলে গণ্য হবে-

প্রথমত, কোন দলিল কিংবা দলিলের অংশ বিশেষ এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা তার কর্তৃত্ব বলে প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীল মোহরকৃত বা সম্পাদিত বলে বিশ্বাস জন্মানোর উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি কর্তৃক কিংবা যে ব্যক্তির কর্তৃত্ব বলে তা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীল মোহর কৃত বা সম্পাদিত হয় নি বলে সে জানে, অথবা, এমন কোন সময়ে যে সময় তা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহর কৃত বা সম্পাদিত হয় নি বলে সে জানে, অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে অনুরূপ দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ প্রস্তত, স্বাক্ষরদান, সীল মোহর বা সম্পাদন করে বা কোন দলিল সম্পাদন জ্ঞাপক কোন চিহ্ন অংকন করে;

অথবা, দ্বিতীয়ত, যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত হবার পর কোন দলিলের কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আইনানুগ ক্ষমতা ব্যতিরেকেই অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে বাতিল করনের মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করে, দলিলটি অপরাধকারী কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত না হয়ে অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত হয়ে থাকে তা হলে এরূপ পরিবর্তনের সময় সেই অন্য ব্যক্তি জীবিত থাকুক বা না থাকুক এতে অপরাধের কোন তারতম্য হবে না;

অথবা, তৃতীয়ত, যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে দিয়ে কোন দলিল স্বাক্ষরিত, সীল মোহরকৃত, সম্পাদিত বা পরিবর্তিত করায়, যে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা হেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু কিংবা তার প্রতি প্রয়োগকৃত প্রতারণার ফলে, দলিলটির বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে অক্ষম।

উদাহরণঃ 

১. ক. খ কে দিয়ে গ এর প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য একটি লেটার অব ক্রেডিট লিখে নিয়ে পরে গ কে ঠকানোর উদ্দেশ্যে ক ঐ অঙ্কের সাথে একটি শূন্য যোগ করে দশ হাজারের স্থলে এক লাখ করে নেয়। এটা এই অভিসন্ধিতে ক এটা করে যে, গ বিশ্বাস করবে যে, খ এরূপ লিখেছে। এক্ষেত্রে ক জালিয়াতি করেছে বলে গণ্য হবে।

২. ক তার প্রতিনিধি খ এর নিকট তার স্বাক্ষরিত একটি চেক দেয় এবং বলে যে, বিভিন্ন খরচের জন্য অনুর্ধ্ব দশ হাজারের অঙ্ক ঐ চেকে লিখে টাকা যেনো ব্যাংক হতে ভাঙ্গায়ে নেয়। খ প্রতারণামুলক ভাবে কুড়ি হাজার টাকা লিখে চেকটি ভাঙ্গায়ে নেয়। এক্ষেত্রে খ জালিয়াতি করেছে।

৩. ক একটি অসিয়তনামা লেখার জন্য খ কে বলে। যাদের অনুকূলে অসিয়তানামা করার জন্য ক নাম বলে তাদের মধ্যে গোপনে একজনের নাম পরিবর্তন করে। কিন্তু ক এর নির্দেশ মতো সব লেখা হয়েছে বলে অসিয়তনামায় ক এর স্বাক্ষর নেয়। এক্ষেত্রে খ জালিয়াতি করে।

কোন ক্ষেত্রে নিজ নাম স্বাক্ষর করা জালিয়াতিঃ দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারায় দু’টি ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়েছে তা নিম্নরূপ-

ব্যাখ্যা-১ঃ কোন ব্যক্তি তার নিজ নাম স্বাক্ষর করলেও তা জালিয়াতি হতে পারে।

ব্যাখ্যা-২ঃ একটি কল্পিত ব্যক্তির নামে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা এই অভিপ্রায়ে যে, প্রকৃত ব্যক্তির দ্বারা তা করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হবে। অথবা একজন মৃত লোকের নামে মিথ্যা দলিল প্রনয়ন করা এই অভিপ্রায়ে যে, ঐ ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় এই দলিলটি প্রণয়ন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হবে, তাহলে তা জালিয়াতি হবে।

জালিয়াতির দায়ে দায়ী করতে হলে দুটো বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, ৪৬৪ ধারায় বর্ণিত অপকর্মের জন্য একটি মিথ্যা দলিল প্রণয়ন, দ্বিতীয়ত, ৪৬৩ ধারার বর্ণনা মোতাবেক তার অভিপ্রায় হচ্ছে অসাধু। কোন ব্যক্তি যদি তার নাম স্বাক্ষর করে এই অভিপ্রায়ে যে, এটা অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হবে যার স্বাক্ষর তার নিজ স্বাক্ষরের অনুরূপ; অথবা অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর মিথ্যা করে নিজে লিখে দেয় এই অভিপ্রায়ে যে, সেটা অন্য ব্যক্তি কর্তৃক স্বাক্ষরিত হিসেবে ধরা হবে।

উদাহরণঃ 

১. ক একটি বিনিময় বিলে নিজ নাম স্বাক্ষর করে এই অভিপ্রায়ে যে, ঐ নামের অন্য এক ব্যক্তি কর্তৃক তা করা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হবে। এ ক্ষেত্রে ক জালিয়াতি করে।

২. একজন ব্যবসায়ী ক দেউলিয়া হবার আশংকায় তার মালপত্র নিজ সুবিধার্থে খ এর নিকট রেখে দেয় এই অভিপ্রায়ে যে, তার পাওনাদারদের ঠকানো যাবে। লেনদেনটি ভিন্নরূপ দেয়ার জন্য খ এর অনুকূলে একটি প্রত্যর্থ পত্র (Promissory note) লিখে দেয় এবং বিগত দিনের তারিখ বসায় যেনো দেউলিয়ার আশংকার পূর্বেই এটা প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ক জালিয়াতি করেছে।

মামলার নজীরঃ ১. এমপারার বনাম আবদুল হামিদ (AIR 1944 Lahore 330 ) মামলায় আসামী তার চাকুরীর ক্ষেত্রে জন্ম তারিখ ১৮৯১ এর স্থলে ১৮৯৮ করেছিল এবং এর সমর্থনে একটি মিথ্যা দলিল তৈরী করেছিল। আসামী জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্থ হয়৷