অথবা, চৈনিক আমলাতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ চীন একটি প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী দেশ। চীনে যে ধরনের আমলাতন্ত্র প্রচলিত আছে তা সব যুগে একই রকম ছিল না। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন শাসনামলে চীনের আমলাতন্ত্র বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। চীন একটি নদী বিধৌত দেশ। বড় বড় তিনটি নদী চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত। নিম্নে চীনের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলাে আলােচনা করা হলাে-
আমলাতন্ত্রের উৎপত্তিঃ অনেকের ধারণা মতে, চিয়েন আমলে চীনের আমলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করার মাধ্যমে। চৌ শাসনামলে সমাজের মাথায় ছিল অভিজাতরা। চৌ আমলে রাজা ও সামন্ত প্রভুরা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সামান্ত প্রভুরা ছিল অভিজাত শ্রেণি এবং তাদের মর্যাদার মাপকাঠি ছিল জমির মালিকানা ও বংশ মর্যাদা।
আমলাতান্ত্রিক বন্টনঃ চিয়েন রাজারা চৌ রাজাদের থেকে কৌশলগত দিক থেকে অনেকটা অগ্রসর ছিল। চিয়েন রাজবংশ চৌ রাজাদের মতাে ভুল পথে পা না বাড়িয়ে সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা খর্ব করে। চৌরা সামরিক পদগুলাে সামন্ত প্রভুদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল। কিন্তু চিয়েন রাজবংশ ঐ পদগুলােতে বেতনভুক্ত কর্মচারি নিয়ােগ করে। অর্থাৎ প্রদেশগুলাের শাসনভার সামন্তপ্রভুদের ওপর অর্পণ না করে বেতনভুক্ত কর্মচারিদের ওপর অর্পণ করা হয়।
দাসপ্রথা নিয়ন্ত্রণঃ চীনের ইতিহাসে সিয়া গােষ্ঠী সর্বপ্রথম দাস প্রথার প্রবর্তন করে। দাসভিত্তিক সমাজে সাধারণত দুই শ্রেণির মানুষ দেখা যেত। দাস মালিক ও দাস। দাস মালিক ও দাস শ্রেণির অবস্থান ছিল পরস্পরবিরােধী। দাস প্রভু ছিল ধনী ও শােষক। ক্রমান্বয়ে সমাজে দাসদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। দাসদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দাস মালিকরা তাদের শ্রেণিস্বার্থ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
দাসদের প্রতি অবিচার নিরসন করাঃ চীনে শাং যুগে উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে শ্রমের যােগান দিত দাসশ্রেণি। তাদেরকে একজন অত্যাচারী তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কাজ করতে দেয়া হতাে। প্রায়শ তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হতাে। অনেক সময় অমানুষিক অত্যাচারে এদের মৃত্যু হতাে। তাদেরকে অত্যন্ত নিচুমানের খাবার দেয়া হতাে। তাদেরকে পালানাের কোনাে সুযােগ দেয়া হতাে না।
শ্রেণিব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণঃ এক পর্যায়ে চীনে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসার ফলে ক্রমেই অনেকে ধনী হয়ে ওঠলাে। বিভিন্ন লােকের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে অনেক গােত্রপ্রধান ধনী হয়ে যায়। বিভিন্ন সংঘর্ষে শত্রু গােত্রের যারা বন্দী হতাে তাদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হতাে। ফলে এভাবেই চীনে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সূচনা হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আস্তে আস্তে চীনে আমলাতন্ত্র কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নত জীবনপ্রণালির আশায় অভিজাতশ্রেণি জনসাধারণ থেকে পৃথক হয়ে একটি আলাদা সামাজিক শ্রেণিতে পরিণত হয়েছিল। চৌ আমলে অভিজাতরাই ছিল প্রধান। চিয়েন আমলে সমাজে আমলাতন্ত্র বিকশিত হয়। আর সামন্ত প্রভুরা ছিল অভিজাতশ্রেণির মূর্ত প্রতীক। জমির মালিকানা ও বংশ গৌরবের ভিত্তিতে শ্রেণি নির্ধারিত হতাে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চীনে আমলাতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপ পরিগ্রহ করতাে।
Leave a comment