রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে দেখা যায়, আচার্য অদীনপুণ্য ছিলেন অচলায়তনের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। কিন্তু অচলায়তনে গুরুর আগমন সংবাদ শুনে তার মনে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। অচলায়তনের প্রতিবাদী পঞ্চকের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্ত করানাের বিষয়ে মহাপক, উপাধ্যায় প্রমুখের সিদ্ধান্তের স্পষ্ট বিরােধিতা করেন তিনি। আসলে আচার্যের মনে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে ধর্মীয় আদর্শের এক নিজস্ব ধরন যা অচলায়তনের ঈশ্বরভাবনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই দাদাঠাকুরের সঙ্গে কথােপকথনে এতদিনের আচার্য হিসেবে তাঁর যে আচরণ, বিশ্বাস এবং কর্মপদ্ধতি, তার প্রতি গভীর অনাস্থা প্রকাশ পেয়েছে।
অচলায়তনে প্রাণের গতিকে রুদ্ধ করে দেয় শাস্ত্রীয় আচারসর্বস্বতা। আর তার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন আচার্য। তাই এ যাবৎ কাল পর্যন্ত তিনি কখনােই দর্ভকপল্লিতে আসেননি। অষ্টাঙ্গশুদ্ধি উপবাসের তৃতীয় রাতে বালক কুশলশীল তৃয়ার্ত অবস্থায় মারা গেলেও সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন তিনি। কিন্তু, ক্রমশ তিনি উপলদ্ধি করেন, শাস্ত্র বা আচার মানুষের মনকে চারপাশ থেকে বেঁধে ফেলে, স্বাধীন ভাবনা এবং আত্মার বিকাশের পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। অচলায়তনের আচার্যের সেই অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার কথাই প্রশ্নোধৃত অংশে ব্যক্ত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে দাদাঠাকুর শূনকদের সঙ্গে নিয়ে অচলায়তনের দ্বার খুলতে প্রবেশ করেন। কিন্তু মহাপক, উপাধ্যায়দের মনে গুরুর স্বরূপ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। শত্রুবেশে বা যােধার বেশে গুরুকে দেখতে প্রস্তুত ছিল না অচলায়তন। “তােমাকে কে মানবে?”মহাপঞ্জকের এই কথার মধ্যে স্পষ্টই শােনা যায় গুরুকে না মানার এই উদ্ধত ঘােষণা। মহাপক যখন এই সংশয় এবং বিরূপতা প্রকাশ করছেন তখনই ‘গুরু’র রূপে আগত দাদাঠাকুর প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
শূনকদের সঙ্গে করে গুরু অচলায়তনের প্রাচীর, দরজা সব ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার ফলে বাইরের আলাে, হাওয়া, পাখির ডাক বহু বছর পর আবার সেখানে প্রবেশ করেছে। সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে যেভাবে দাদাঠাকুর বা গুরুর প্রবেশ ঘটেছে, তা মহাপঞকের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে। তাই গুরুকে না মানার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন মহাপক। অন্যদিকে, দাদাঠাকুর মহাপঞকের এই বিরূপতাকে সাদরে গ্রহণ করেন। অচলায়তনের প্রথাবদ্ধ জীবনধারায় যে তিনি স্বাগত হতে পারেন না এ বিষয়ে দাদাঠাকুর নিশ্চিত ছিলেন। তাই লড়াই-এর নিশ্চিত সম্ভাবনা তিনি অনুমান করেছেন। অচলায়তনে যে পরিবর্তন তিনি আনতে চেয়েছেন, দীর্ঘকাল ধরে সযত্নে লালিত আচারসর্বস্বতা বা স্থবিরতায় যে আঘাত তিনি করতে চেয়েছেন তা যে সার্থক হয়েছে এ বিষয়ে দাদাঠাকুর নিশ্চিত হয়েছেন।
বিশিষ্ট নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অচলায়তন (১৯১৮) নাটকের সহজ অভিনয়যােগ্য রূপান্তরিত রচনাটির নাম গুরু।
‘গুরু’ নাটকটিতে গুরু হলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার অস্তিত্ব প্রতিটি মানুষকে শুদ্ধ করে তােলে। যিনি সকল শিক্ষানীতির উর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গুরু র আগমন বার্তা নিয়েই সমস্ত অচলায়তনে ভীষণ তােড়জোড় পড়ে গেছে। গুরুর উদ্দেশ্যেই তাদের যত শিক্ষা ও সাধনা। অচলায়তনের প্রতিটি কর্ণধার উপাধ্যায়, আচার্য, মহাপঞ্চক, সঞ্জীব ইত্যাদি ব্যক্তিত্ব গুরুর আগমনে ব্যতিব্যস্ত। তাদের ধারণা গুরু এলে তাদের সমস্ত চিন্তা ভাবনা, পাপ-পুণ্যের ধারণা পূর্ণ হবে। যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন নিয়মনীতির বেড়াজালে বেঁধে ফেলে অচলায়তনে পরিণত করেছেন তারা এমনকি স্থপিত্তনের রাজা মন্থরগুপ্তও গুরুর আগমনে বিচলিত।
নিম্নশ্রেণির যুনকদের একজন নেতা আছে যাকে তারা দাদাঠাকুর বলে মানে। প্রকৃতপক্ষে এই দাদাঠাকুরই হল গুরু। অর্থাৎ শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠাতা গুরু অবলীলাক্রমে প্রতিটি মানুষের সাথে মিলেমিশে অপার আনন্দে জীবনযাপন করে। কিন্তু তারই নির্দেশ-পালকরা নিজেদের উচ্চ মনে করে এই অপার আনন্দ থেকে দূরে সরে থাকে। তাই এদের শিক্ষা ভালােবাসাহীন, সূক্ষ্ম ইট, কাঠের বেড়াজালে আবদ্ধ।
‘অচলায়তন’ কথার অর্থ হল অচল আয়তন, অর্থাৎ কালের গতিতে যে স্থান অচল হয়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথের গুরু একটি রূপক নাটক। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানের অন্তঃসারশূন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকেই তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার যে পরিকাঠামাে গড়ে তােলা হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীরা একটি গণ্ডির মধ্যে থেকে কেবল জ্ঞান আরহণ করে, তাদের সার্বিক বিকাশ ঘটে না। কারণ তারা নিয়মের বেড়াজালে এতটাই জর্জরিত যে স্বাভাবিক চিন্তা করার সামর্থ্য তারা হারিয়ে ফেলে।
অচলায়তনে ছােটো বালক শিক্ষার্থীরা আচার্য, উপাচার্য ইত্যাদি উচ্চপদস্থ কর্ণধারের কাছ থেকে নানারকমের শিক্ষাগ্রহণ করে যার অধিকাংশই বিভিন্ন কুসংস্কার। যেমন—কাকিনী সরােবরের নৈঋত কোণে ঢােড়া সাপের খােলস খোঁজা, লােকের গায়ে হাই না তােলা, সপ্তকুমারিকা গাথা পাঠ করা, উত্তরের জানলা না খােলা ইত্যাদি। আবার এই ধরনের কোনাে কাজ করে ফেললে তার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা। তাই এখানে শিক্ষার্থীরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। তারা তাদের কৌতূহল, ইচ্ছা, মনের সাধ প্রকাশ করতে পারে না এবং অধ্যাপকদের নির্দেশিত নিয়মনীতির অন্ধ অনুসরণ করে। যার ফলে তারা একটি পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না এবং তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা ও মানবিক বােধ-এর বিকাশ ঘটে না। এর ফলে তারা আনন্দহীন জীবন যাপন করে। মানুষের সঙ্গে মানুষের চিরকালীন সম্পর্ককে অবহেলা করে নিম্নশ্রেণির মানুষদের ঘৃণা করে। তাই তারা জীবনের মূল স্রোত থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে ফেলে। এভাবেই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচলায়তন হয়ে ওঠে।
‘গুরু’ নাটকে মােট কটি সংগীত রয়েছে? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে।
রূপক নাটক হিসেবে ‘গুরু’-র সার্থকতা আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে যে নাট্যদ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে সংলাপ রচনায় নাট্যকারের সার্থকতা আলােচনা করাে।
“অচলায়তনে এবার মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে।” -মন্ত্ৰ ঘুচে গান বিষয়টি ব্যাখ্যা করাে।
“আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত।” বক্তার এই মন্তব্যের কারণ কী?
“আমাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত।” বক্তার এই মন্তব্যটি কতটা সমর্থনযোগ্য বলে তুমি মনে কর?
“আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি।” -বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা একথা বলেছেন? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?
সুভদ্রের উত্তর দিকের জানলা খােলা অচলায়তনে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল?
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”—মন্তব্যটি শুনে শ্রোতার মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
“উনি গেলে তােমাদের অচলায়তনের পাথরগুলাে সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুথিগুলাের মধ্যে বাঁশি বাজবে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাঁকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাঁকে হারাতে হয়।” মন্তব্যটির মর্মার্থ আলােচনা করাে।
“আজ কোনাে নিয়ম রক্ষা করা চলবে বলে বােধ হচ্ছে না।”- কেন এই দিনে নিয়ম রক্ষা করা সম্ভব নয় বলা হয়েছে?
“ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌঁছােয় না।” -সেখানে তলােয়ার না পৌঁছানাের কারণ কী?
“খােলা জায়গাতেই সব পাপ পালিয়ে যায়।” -মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“দুজনে মিলে কেবলই উত্তর দক্ষিণ পুৰ পশ্চিমের সমস্ত দরজা জানলাগুলাে খুলে খুলে বেড়াব।” -বক্তা এই মন্তব্য করেছেন কেন?
“পঞ্চকদাদা বলেন অচলায়তনে তাঁকে কোথাও ধরবে না।” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“…তফাতটা এই যে, তােমরা বােঝা বয়ে মর, আমি হালকা হয়ে বসে আছি।” -বক্তা এই মন্তব্যটির মধ্যে দিয়ে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“অচলায়তনে এবার মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে।” -অচলায়তনে মন্ত্রের প্রভাব কেমন ছিল?
“তােমার জয়জয়কার হবে সুভদ্র। তিনশাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল তুমি ঘুচিয়েছ।”- এই কথার মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই, কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তাে চিরকালের।”- এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“…নিয়ে এস হৃদয়ের বাণী। প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও।”- মন্তব্যটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“তােমাদের হাতে দিয়ে আমার যে শান্তি আরম্ভ হল তাতেই বুঝতে পারছি গুরুর আবির্ভাব হয়েছে।” -মন্তব্যটির মাধ্যমে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“কিন্তু দেখছি হাজার বছরের নিষ্ঠুর মুষ্টি অতটুকু শিশুর মনকেও চেপে ধরেছে, একেবারে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছে রে।” – বক্তা এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে কী বলতে চেয়েছেন?
“পৃথিবীতে জন্মেছি পৃথিবীকে সেটা খুব কষেবুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।” -বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“এমন জবাব যদি আর-একটা শুনতে পাই তা হলে তােদের বুকে করে পাগলের মতাে নাচব…”— এ কথা বলার মধ্যে দিয়ে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
Leave a comment