প্রশ্নঃ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কী?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বুঝ?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কাকে বলে?

অথবা, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সংজ্ঞা দাও।

ভূমিকাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলাে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়ােগ করা। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রবর্তন করেন। তবে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে এ নীতি রাজনৈতিক আলােচনাকে প্রাধান্য লাভ করে নি। আধুনিককালে মন্টেস্কু এ নীতির ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিঃ সাধারণভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের শাসন আইন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে ন্যস্ত করা এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ না করা। অর্থাৎ যখন। সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়, তখন একে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে কতিপয় সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলােঃ

R. C. Agarwal এর মতে, “Where all the power of the government is not be concentrated in the hands of on organ is called separation of power.”

মন্টেস্কুর (Montesquieu) বলেন, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক নীতিকে বুঝায়, যেখানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা পৃথক হবে এবং কেউ কারাে অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না।”

লিপসন (Lipson) এর মতে, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ হলাে সংবিধান অনুসারে সরকারের ক্ষমতা পৃথকীকরণ যা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য।”

মেডিসন (Madison) এর মতে, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ হলাে সরকারের তিনটি বিভাগের উপর ক্ষমতার পৃথক পৃথক ব্যবহার ও নিশ্চিত প্রয়ােগ, যেখানে একে অপরের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ মুক্ত”।

প্রফেসর এ হেকার (Prof. Andrew Hacker) এর মতে, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল অর্থ হলাে আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের কার্যাবলি ভিন্ন হবে এবং তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র শাখা দ্বারা পরিচালিত হবে।

উপসংহারঃ আলােচনার শেষ প্রান্তে আমরা বলতে পারি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ মানে ক্ষমতার বণ্টন অর্থাৎ প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতা আলাদা আলাদাভাবে বণ্টন করা। যার ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।