[1] রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়। ফলে জাপান অধিকৃত কোরিয়ার উত্তরাংশ রাশিয়ার কাছে এবং দক্ষিণাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এসময় থেকে কোরিয়ার ৩৮° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরাংশে রাশিয়া এবং ৩৮° উত্তর অক্ষরেখার দক্ষিণাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

[2] অস্থায়ী কমিশনের ব্যর্থতা: কোরিয়ার সমস্যা নিয়ে মস্কোতে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় (১৯৪৫ খ্রি., ডিসেম্বর)। এই বৈঠকে উভয় রাষ্ট্র এক যুগ্ম কমিশন গঠনের কথা বলে। এই কমিশনের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে এক অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

[3] কোরিয়ায় দুই সরকার প্রতিষ্ঠা: অস্থায়ী কমিশনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ার সমস্যাকে জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে। সাধারণ সভা তার ৯টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিশন (United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK) গঠন করে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্তি হন বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে. পি. এস. মেনন। এই কমিশনের ওপর কোরিয়ায় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু রাশিয়া জাতিপুঞ্জের সদস্যদের উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচনের (১০ মে, ১৯৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে এক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন প্রভাবিত এই সরকারের প্রধান হন সিংম্যান রি (১৯৪৮ খ্রি., ১৫ আগস্ট)। ঠিক একই সময়ে উত্তর কোরিয়াতেও কমিউনিস্ট নেতা কিম-ইল-সুঙের নেতৃত্বে সােভিয়েত প্রভাবিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

[4] দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর উত্তর কোরিয়ার আক্রমণ: জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন এবং নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিপুঞ্জ দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে দাঁড়ালে রাশিয়া ও চিন উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয়। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ বাধে।

[1] সংকটে অংশগ্রহণ: উত্তর কোরিয়া ছিল রাশিয়ার দখলে। রাশিয়া এখানে তাদের অনুগত একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল মার্কিন অধীনস্থ। উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করলে আমেরিকা দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য দেওয়া শুরু করে। জাতিপুঞ্জ উত্তর কোরিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং মার্কিন সেনাপতি ডগলাস ম্যাকআর্থারকে জাতিপুঞ্জ বাহিনীর সেনাপতি করে আমেরিকা কোরিয়া যুদ্ধে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

[2] সংকট সৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব

  • রাষ্ট্রপুঞ্জকে প্রত্যক্ষ মদত দান: আমেরিকার প্রত্যক্ষ যােগদানের জন্যই কোরিয়া যুদ্ধ বা কোরিয়া সংকট ধনতন্ত্র ও সাম্যবাদের ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে রূপান্তরিত হয়। আমেরিকার প্রচ্ছন্ন মদতেই জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী দেশরূপে চিহ্নিত করেছিল।

  • সেনা প্রেরণে: মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতি দেন (১৯৫০ খ্রি., ২৫ জুন)। এই উদ্দেশ্যে তিনি মার্কিন সেনানায়ক জেনারেল ম্যাক আর্থারকে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন। জাতিপুঞ্জের সমর্থন থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনাে অসুবিধে হয়নি।

  • যুদ্ধবিরতিতে: দীর্ঘ আলাপ-আলােচনার পর অবশেষে ১৯৫৩ খ্রি. ২৭ জুলাই উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পানমুনজমে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

  • সীমারেখা স্থিরীকরণে: এই শান্তিচুক্তির দ্বারা ৩৮° অক্ষরেখাকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমারেখা বলে ঘােষণা করা হয়।