কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটি যেসব মূল্যবান সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুপারিশ সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করা হল一

(১) অ্যাবট-উড সুপারিশ অনুঘায়ী শিক্ষা পরিচালনা: স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা অ্যাবট-উড রিপাের্টের সুপারিশ অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

(২) স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: কারিগরি ও বৃত্তি বিষয়ক উচচশিক্ষার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের যেমন ব্যবস্থা থাকবে, তেমনি গবেষণার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

(৩) ছায়ার টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন: শিল্প সংস্থায় ফোরম্যান, চার্জম্যান প্রভৃতির মতাে পদগুলিতে কাজ করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য ‘হায়ার টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। ‘হায়ার টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট লাভ করার পর কোনাে ব্যক্তি শিল্প সংস্থার কর্মে নিয়ােজিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

(৪) জীবিকা অর্জনের সুযােগ সৃষ্টি: উচ্চ কারিগরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা যাতে জীবিকা অর্জনের সুযােগ পায়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(৫) আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা: শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন: শিল্প সংস্থার জন্য দক্ষ শ্রমিক (skilled worker) সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট সংখ্যক ‘টেকনিক্যাল স্কুল’ স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষা গ্রহণের পর এই ধরনের টেকনিক্যাল স্কুলে ছয় বছর পড়াশােনা করার সুযােগ লাভ করবে।

(৭) জুনিয়ার টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন: শিল্প সংস্থার জন্য অর্ধদক্ষ শ্রমিক (semi-skilled worker) সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জুনিয়ার টেকনিক্যাল স্কুল’ বা ‘ট্রেড স্কুল স্থাপন করতে হবে।উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা এই জাতীয় স্কুলে দু’বছরের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযােগ পাবে।

বয়স্ক শিক্ষা সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটি যে সকল সুপারিশ করেছেন, তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল

(১) বয়স্ক শিক্ষার ওপর গুরুত্বপ্রদান: সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বয়স্ক শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দানের সুপারিশ করা হয়। রিপাের্টে বলা হয় বয়স্ক শিক্ষার দায়িত্ব পুরােপুরিভাবে সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।

(২) শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ: বয়স্ক শিক্ষার জন্য গঠিত শ্রেণিতে কখনােই 25 জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না।

(৩) আকর্ষণীয় উপস্থাপন: শিক্ষাকে বয়স্ক শিক্ষার্থীদের কাছে। আকর্ষণীয় করে তােলার জন্য চার্ট, বেতার, চিত্র প্রদর্শন, নৃত্যগীত, গ্রামােফোন প্রভৃতির সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।

(৪) বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষাদান: বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে যে সমস্ত শিক্ষার্থী যােগদান করবে, তাদের বয়স হবে 10 বছর থেকে 40 বছরের মধ্যে। ওই বয়সের মহিলাদের জন্য সম্ভব হলে পৃথকভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৫) সমাজসেবী সংগঠনগুলিকে উৎসাহদান: বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন যাতে বয়স্ক শিক্ষাদানের কাজে অগ্রসর হয়, সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

(৬) গ্রন্থাগার স্থাপন: শিক্ষাপ্রসারের কাজকে ত্বরান্তিত করার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়ােজনে ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।