কায়কোবাদের পরিচয় দাও।
উত্তর : মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী (১৮৫৭-১৯৫১) সাহিত্য ক্ষেত্রে কায়কোবাদ নামে পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি। তিনি একই সঙ্গে গীতিকবি ও মহাকবি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয়তাবোধের যে প্রেরণা বাংলা সাহিত্যে জেগে উঠেছিল কবি কায়কোবাদ ছিলেন তারই অনুসারী। অতি অল্প বয়স থেকে কায়কোবাদের সাহিত্য প্রতিভাব স্ফুরণ ঘটে। মাত্র তেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য বিরহ বিলাপ (১৮৭০) প্রকাশিত হয়। তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৫), মহাশশ্মশান (১৯০৪), শিবমন্দির (১৯২২), অমিয়ধারা (১৯২৩), শশ্মশানভস্ম (১৯২৪) ও মহরম শরীফ (১৯৩২)।
কায়কোবাদ বাংলার অপর দুই মহাকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের ধারায় মহাকাব্য রচনা করেন। তবে নবীনচন্দ্রই ছিলেন তার প্রধান আদর্শ। কায়কোবাদের মহাকাব্য হচ্ছে মহাশশ্মশান। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত এ কাব্য জয়পরাজয় অপেক্ষা ধ্বংসের ভয়াবহতা প্রকট হওয়ায় এর নাম হয়েছে মহাশ্মশান। এটি তার শ্রেষ্ঠ রচনা এবং এর দ্বারাই তিনি মহাকবিরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তার গীতিকবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ও আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পেয়েছে। কায়কোবাদের কাব্যসাধনার মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চাৎপদ মুসলমান সম্প্রদায়কে তার অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী, যার প্রকাশ ঘটেছে তার বিভিন্ন রচনায়। তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। সুতরাং বলা যায়, কায়কোবাদ সবসময় অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে কাব্য রচনা করেছেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment