প্রশ্নঃ ঐচ্ছিক ক্রিয়া কি? ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পৰ্কীয় নৈতিক বিজ্ঞান হলাে নীতিবিদ্যা। নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের উপর নৈতিক অবধারণ গঠন করে। এই আচরণ মানুষ, ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক এই দুই ভাবে সম্পন্ন করে থাকে। তাই নীতিবিদ্যায় এই দুইয়ের আলােচনা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

ঐচ্ছিক ক্রিয়াঃ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তি যখন একটি কাজ বিভিন্ন ভাবে সম্পাদন করে তখন তাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে। এ প্রসঙ্গে উইলিয়াম লিলি এর মতামত গ্রহযােগ্য। তিনি বলেন, “ঐচ্ছিক ক্রিয়া এমন এক ক্রিয়া যা মানুষ ইচ্ছা করলে ভিন্নভাবে সম্পাদন করতে পারে।”

মােট কথা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে, এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার অন্য ব্যক্তির কামনাকে সঙ্গি করে ব্যক্তি অন্য একটি পন্থার সাহায্যে ঐ লক্ষ্যে পৌছার জন্য ক্রিয়াটি সম্পাদন করে তখন নীতিবিদ্যার ভাষায় আমরা তাকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলি। সংক্ষেপে বলা যায়, কামনা অভাব যুক্তি বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে।

অনৈচ্ছিক ক্রিয়াঃ অনৈচ্ছিক ক্রিয়া হচ্ছে এমন সব ক্রিয়া যা আমাদের ইচ্ছার বাইরে। অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছা নিরপেক্ষ সব ক্রিয়াই অনৈচ্ছিক ক্রিয়া। এসব ক্রিয়া মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সংঘটিত হতে পারে। যেমন রাস্তায় লাল বাতি দেখামাত্রই গাড়ি থামানাে চোখে কালাে পড়া মাত্রই চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এগুলাে অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার উদাহরণ।

ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক ক্রিয়া মূলত একের এপিঠ ওপিঠ এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য গুলাে নিম্নে তুলে ধরা হলােঃ

১. ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলতে আমরা অভাব এর দ্বারা কামনার বশবর্তী হয়ে পরিকল্পনার যুক্তি, বিচার বিবেচনা ও সিদ্ধান্তে অনৈচ্ছিক ক্রিয়া পুরােপুরি আমাদের ইচ্ছা নিরপেক্ষ অর্থাৎ আমাদের মনের অজান্তেই এই সব ক্রিয়া সম্পাদিত হয় এবং এতে কোনাে অভাব বা লক্ষ্য থাকে না।

২. ঐচ্ছিক ক্রিয়া সম্পাদনে ব্যক্তির একটা অভাব এর সূচনা হয় এবং ব্যক্তি একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তার লক্ষ্য পূরণ করে। পক্ষান্তরে অনৈচ্ছিক ক্রিয়া আপনা আপনি সম্পাদিত হয় এতে ব্যক্তির নৈতিক সিদ্ধান্তের কোনাে স্থান নেই।

৩. ঐচ্ছিক ক্রিয়া সৃষ্টি হয় বাহ্যিকভাবে কিন্তু অনৈচ্ছিক ক্রিয়া সৃষ্টি হয় অভ্যন্তরিণ ভাবে।

৪. ঐচ্ছিক ক্রিয়ার কামনার স্থান অভাব এর পরের স্তরে। পক্ষান্তরে অনৈচ্ছিক ক্রিয়ায় কামনার কোনাে স্থান সেই।

৫. ঐচ্ছিক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে অনেক সময় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় কিন্তু অনৈচ্ছিক ক্রিয়ায় দ্বন্দ্বের কোনাে স্থান নেই। কেননা এটি অভ্যন্তরীণ শরীরবৃত্তীয় বিষয়।

৬. ঐচ্ছিক ক্রিয়া সহজাতমূলক নয়। পক্ষান্তরে অনৈচ্ছিক ক্রিয়া সহজাতমূলক ক্ষুধা তৃষ্ণা ইত্যাদি। সহজাত প্রবৃত্তি মূলক ক্রিয়া।

৭. ভাল ফলাফল ভাল কিছু করা ইত্যাদি ঐচ্ছিক ক্রিয়ার উদাহরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে শ্বাস প্রশ্বাস, রক্ত সঞ্চালন ইত্যাদি অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার উদাহরণ।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে উপরের আলােচনা থেকে আমরা এটাই অনুধাবন করতে পারি যে ঐচ্ছিক ক্রিয়া মূলত অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার এপিঠ ওপিঠ একটির উৎপত্তি হয় বাহ্যিকভাবে এবং অন্যটি সৃষ্টি হয় মানুষের অভ্যন্তরীণভাবে নৈতিক অবধারণ সৃষ্টিতে অনৈচ্ছিক ক্রিয়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করলেও ঐচ্ছিক ক্রিয়া নৈতিকতার ধারণার জন্য জরুরি।