অথবা, এরিস্টটলের মতে পলিটি ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর।
ভূমিকাঃ আজকের রাষ্টবিজ্ঞান যে সকল মহান ব্যক্তিত্বের নিকট ঋণী তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের নাম সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য। তিনি ১৫৮টি দেশের সংবিধান পর্যালােচনা করে দু’টো মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ করেন। ‘পলিটি’ ও ‘গণতন্ত্র’ এদের মধ্যে অন্যতম দুটি সরকারব্যবস্থা।
পলিটি ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যঃ পলিটি ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আলােচনার পূর্বে এদের পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা প্রয়োজন-
পলিটিঃ সাধারণ ভাষায় মধ্যতন্ত্র বা Polity বলতে সমাজের সাধারণ স্বার্থে নাগরিক সাধারণ কর্তৃক পরিচালিত শাসনকে বােঝায়। কিন্তু বিশেষ অর্থে মধ্যতন্ত্র বা Polity বলতে এমন এক ধরনের সংবিধানকে বুঝায়। যেখানে চরম প্রকৃতির ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলিকে পরিহার করে তাদের গুণাবলীর মিশ্রণ সাধিত হয়েছে।
অধ্যাপক Sabine বলেন, Polity এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে এককভাবে শুধু ধনীরা নয় কিংবা এককভাবে শুধু দরিদ্ররা নয়- বরং ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপাদানসমূহের সুসমন্বিত অংশের প্রাধান্য বিরাজ করে।
গণতন্ত্রঃ যে শাসনব্যবস্থায় শাসনক্ষমতা বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং শ্রেণীস্বার্থ রক্ষায় পরিচালিত হয়, এরিস্টটলের মতে এ শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলে। এরূপ শাসনব্যবস্থা আইনের তােয়াক্কা না রেখে নিজেদের মতামতে সরকার পরিচালনা করে। পলিটি ও গণতন্ত্রের মধ্যকার পার্থক্য নিম্নে দেখানাে হলাে-
(১) পলিটি শুদ্ধ প্রকৃতির সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত। আর গণতন্ত্র বিকৃত প্রকৃতির সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত।
(২) পলিটি বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকে ও এর মাধ্যমে জনগণের সাময়িক কল্যাণ সাধিত হয়। আর গণতন্ত্র বহুজনের দ্বারা চালিত হলেও এটি জনগণের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে পরিচালিত হয় না।
(৩) পলিটি অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের মাঝে সমন্বয়সাধন করে। এটি সমগ্র জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়। আর গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র শ্রেণীর স্বার্থে পরিচালিত সমগ্র শ্রেণীর স্বার্থে নয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল সর্বপ্রকার সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রচলিত শাসন ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে মধ্যতন্ত্র হচ্ছে সর্বোত্তম, কেননা এটাই সকলের স্বার্থে পরিচালিত হয়। এটি অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের মাঝে সমম্বয়সাধন করে।
Leave a comment