‘একবার আপনারে চিনলে পরে যায় অচেনারে চেনা।’

উত্তর: বাউল মতাদর্শ প্রাচীন ভারতীয় তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এর উদ্ভবের সাথে নিবিড় সংযোগসূত্র রয়েছে সুফি মতবাদের। ভারতবর্ষে মুসলমান আগমনের পর হিন্দু-মুসলমান বিপরীত ধর্ম ও সংস্কৃতির সংঘর্ষের প্রথম দিকে দক্ষিণ ভারতে, পরে উত্তর ভারতে এবং শেষে বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর মূল প্রবণতা ছিল ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন। পরমাত্মার অংশ হচ্ছে জীবাত্মা। পরমাত্মার স্থিতি হচ্ছে জীবাত্মার মাঝে, কাজেই আপনার আত্মার পরিশুদ্ধি ও পরিচয়ই খোদাপ্রাপ্তির উপায়, তাই আত্মার স্বরূপ উপলব্ধির সাধনাই বাউলদের ব্রত। বাউল সম্প্রদায়ের মতাদর্শ হচ্ছে- Know thyself. নিজেকে চেন। এটিই বাউল সম্প্রদায়ের মূল কথা। বাউলরা মতাদর্শকে রূপকের ছদ্মাবরণে প্রকাশ করেছেন। তারা এই প্রতীক গ্রহণ করেছেন দেহাধার, বাহ্যবস্তু এবং জগৎ জীবনের বিচিত্র কর্ম প্রচেষ্টা থেকে। নিজেকে চেনা, নিজেকে জানা, নিজের আত্মার স্বরূপ জানতে পারলেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া সহজ হয়ে যায়। বাউলদের গানের ভাষা সহজ সরল হলেও তাঁদের সাধনতত্ত্ব অত্যন্ত রহস্যময় ও জটিল। সাধারণ মানুষ সহজে তাদের এই সাধনতত্ত্বের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। যারা আপনাকে চিনতে পারে, স্বীয় সত্তার স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে তাদের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষার মনের মানুষ এসে ধরা দেয়। ‘একবার আপনারে চিনলে, পরে যায় অচেনারে চেনা।’ কারণ-

‘আপনাকে চিনলে পরে চেনা যায় পরওয়ার দিগারে।

সাঁই নিরাকারে নিরন্তর খেলচে খেলা এই আকারে ॥”