“এই মানুষ আছে রে মন যারে বলে মানুষ রতন।”
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি বাউল পদাবলীর অন্তর্গত। মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টা নিরন্তর খেলা করে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হলো অমূল্য রতন। এই অমূল্য রতনের আরাধনা ছাড়া মানুষ নকল জিনিসের পূজায় ব্যস্ত। তাই বাউলরা মনে করেন এই জগৎ সংসার কেবল একটি কৃত্রিম ব্যাপার যা শুধু মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। তিনি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে বলেছেন মানুষের মাঝে। ঈশ্বর মানুষরূপেই মানুষের মধ্যে বিরাজ করেন। তাই লালনের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে:
“এই মানুষে সেই মানুষ আছে
আমার হইল কি ভ্রান্তি মন
আমি বাইরে খুঁজি ঘরের ধন।”
মনের মানুষের সন্ধান করা বাউল সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের প্রধান লক্ষ্য। বাউল সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা অর্চনা, নামাজ রোজা কিংবা মসজিদ-মন্দির-গীর্জা, গয়া-কাশী-কাবা কোনো কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করেন না। অর্থাৎ ধর্মের প্রথাগত কোনো বিষয়াদি তারা পালন করেন না। বাউলদের মধ্যে মূলত সকল ধর্মের একটি মিলন পরিলক্ষিত হয়। এজন্য বাউলরা সহজেই বৈষ্ণব বা হিন্দু ধর্ম কিংবা মুসলিম সুফি মতবাদ ঘেঁষা শব্দাদি ব্যবহার করতে পারেন। তারা নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন করেন না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা স্বাধীন মতামতে বিশ্বাসী। তাদের কাছে সকল ধর্মের মানুষ সমান। অর্থাৎ তাদের কাছে মানুষই হলো আরাধনার প্রধান বিষয়। মনুষ্যত্বই তাদের প্রধান অবলম্বন। মানবতাবাদের চেয়ে তাদের কাছে আর কোনো বড়ো ধর্ম নেই। তাই বাউল সম্রাট লালনের উক্তি:
“এই মানুষ আছে রে মন
যারে বলে মানুষ রতন
ডুবে দেখ দেখি মন তারে
কিরূপ লীলাময়।
Leave a comment