অথবা, উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদ কাকে বলে?
ভূমিকাঃ বিবর্তনবাদ জগতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কিত একটি মতবাদ। বিবর্তনবাদ অনুসারে এ বিশ্ব আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। জগতের অসংখ্য জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ তথা সকল জীবন ও অজৈব সত্তা সহজ-সরল আদিম অবস্থা থেকে বিকশিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে এবং এই বিবর্তনধারা অগ্রসর হয়ে চলেছে নিরন্তর। এ জগৎ এক অবিরাম পরিবর্তনপ্রবাহ। আর এ পরবর্তনধারায় নিয়ত বদল হচ্ছে জগৎ, জীবন, সমাজ তথা সমাজের সবকিছু।
এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবর্তনের ধারণা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বিবর্তনের স্বরূপ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন বিবর্তন যান্ত্রিক, কেউ বলেন উদ্দেশ্যমূলক, কারাে মতে সৃষ্টিশীল, আবার কারাে মতে এটি উন্মেষমূলক। তাই জগতের উৎপত্তি সম্পর্কীয় উপরােক্ত চারটি মতবাদই প্রধানত লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-
উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদঃ উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদ একটি অভিনব বিবর্তনবাদ। এই বিবর্তনবাদের দুজন উল্লেখযােগ্য দার্শনিক হলেন লয়েড মর্গান এবং স্যামুয়েল আলেকজান্ডার। বিবর্তনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে নতুন উন্মেষ ঘটে বলে মর্গান সর্বপ্রথম বিবর্তনকে উন্মেষমূলক বিবর্তন বলে বর্ণনা করেন।
এ মতবাদ অনুসারে, জগতের বিবর্তনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে নতুন নতুন সত্তা বা গুণের উন্মেষ ঘটে যা পরবর্তী স্তরের পুনর্বিন্যাস নয়। উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদীরা জাগতিক প্রক্রিয়ার নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা স্বীকার করলেও তাদের মতে বিবর্তনের প্রতিটি স্তরে অভিনবত্ব বিদ্যমান। উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদীরা বলেন, মন প্রাণ থেকে আর প্রাণ জড় থেকে উন্মােষিত হলেও প্রাণের মধ্যে এমন এক গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জড়ের মধ্যে নেই। আবার মনের মধ্যে এমন গুণ রয়েছে যা প্রাণে নেই। তাদের মতে, জড় থেকে প্রাণ এবং প্রাণ থেকে মন পর্যায়ক্রমে বিচ্ছিন্ন থাকলেও প্রাণ জড়ের জটিল আকারমাত্র নয়। প্রাণ হলাে নতুন গুণ ও শক্তিবিশিষ্ট এমন এক সত্তা যা তার উন্মেষের আগে জড়ের মধ্যে নিহিত ছিল না। আবার মনও জটিল আকারের জড় ও প্রাণের পুনর্বিন্যাস মাত্র নয়। বরং মন হলাে এমন গুণ ও শক্তিসম্পন্ন এক নতুন সত্তা যা তার উন্মেষের আগে জড় ও প্রাণ প্রভৃতি স্তরের মধ্যে নিহিত ছিল না।
উন্মেষবাদ অনুসারে, পূর্ববর্তী স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে নতুন গুণের আবির্ভাব ঘটলেও পরবর্তী স্তর পূর্ববর্তী স্তরের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে। এই উন্মেষেবাদের তাৎপর্য বােঝা প্রয়ােজন। হেনরি লিউইস এ দুই গুণের পার্থক্য করে বলেন, বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে যে গুণ থাকে, উপাদানগুলাে যােগ করলে যদি ঐ গুণ পাওয়া যায় তবে তা হবে যােগজাত গুণ।
মর্গানের মতে, বিবর্তনপ্রক্রিয়ার আদি উপাদান একাধারে জড় ও মানস শক্তি। তিনি বলেন, ঈশ্বর হলাে তেজশক্তি যার কার্যক্ষমতা নতুনের উন্মেষ ঘটায় এবং উন্মেষমূলক বিবর্তনের সমস্ত গতিকে পরিচালিত করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সৃজনমূলক ও উন্মেষমূলক বিবর্তনবাদ কোনােটিই পরিপূর্ণ যুক্তিযুক্ত এবং সন্তোষজনক মতবাদ নয়, তারপরও বিবর্তনের ধারা বিকাশে এই মতবাদ দুটির গুরুতকে কোনােক্রমেই অস্বীকার করা যায় না।
Leave a comment