প্রশ্নঃ WID সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, WID সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ অনাদি অনন্তকালের মহান স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এই মানবসমাজ। সৃষ্টির সেই অসহায় জীবনের নানাবিধ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে বিশ্বসমাজ একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেছে। মানব সমাজের সৃষ্টিশীল এ অর্জনে পুরুষের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে নারী। এজন্যই হয়তবা কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তাই সব সমাজেই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম, নারীদের এই উল্লেখযোগ্য ভূমিকাতে কিছু সংগঠন/প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল। যেমনঃ WID ইত্যাদি।

উন্নয়নে নারী (Women in Development):

উৎপত্তি (WID): নারী, পরিবেশ এবং উন্নয়ন-এর আলোচনা ৫০ দশকের শুরুতে হলেও তা আরেকটু পরিমার্জিত হয়ে (WID) নামে ৭০ এর দশকে প্রকাশ পায়। এ সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা শীর্ষক Erter Boscrup এর ‘Woman’s Role in Economy Production’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই মার্কিন নারীবাদীরা WID এর ধারণাটি ব্যবহার করা শুরু করেন।

তত্ত্বগত ভিত্তি (Theoretical Basis): ৫০-৭০ দশকের আধুনিকীকরণ তত্ত্ব এর সাথে সম্পর্কিত। এই তত্ত্বের মতে, মানব সম্পদের উন্নয়নে কৃষি সমাজকে মিত্র উন্নত আধুনিক সমাজে উন্নীত করবে এবং এর ফলে অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সকলের কাছে পৌঁছাবে। ১৯৭০ এর দশকের দিকে এটা পরিষ্কার বোঝা গেল যে, আধুনিকায়নের সুফল যে কারণেই হোক নারীদের কাছে পৌছাচ্ছে না। এমনিক অনেক ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানকে পর্যন্ত উপেক্ষা করা হয়।

মনোযোগ (Focus) লক্ষ্যঃ প্রয়োজনীয় আইনগত এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পর্কিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। নারীর উৎপাদন ক্ষমতার ওপর জোর দেয়া হয় এবং উৎপাদনশীল খাতে নারীর পশ্চাৎপদতা কাটানোর লক্ষ্য কৌশল উদ্ভবের কথা বলে।

সহায়ক কর্ম কৌশল (Accompanying Strategies):

(১) উদ্যোগঃ নারীরা উন্নয়ন উদ্যোগগুলো কীভাবে আরো ভালোভাবে সম্পর্কিত হতে পারে, সেদিকে আলোকপাত করা। 

(২) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডঃ দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মহিলাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা। 

(৩) উৎপাদনশীল ভূমিকাঃ অর্থনীতির সাথে সমন্বিত করে নারীর উৎপাদন ভূমিকা নিশ্চিত করা।

(8) দক্ষতা বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় হ্রাসঃ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের দক্ষতাবৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয় করা। 

(৫) ক্ষমতায়ণঃ নারীদের ক্ষমতায়ণ এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা বৃদ্ধি করা।

(৬) দৃষ্টিভঙ্গিঃ সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার।

(৭) শিক্ষা বা চাকরিঃ শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করা।

(৮) প্রযুক্তির ব্যবহারঃ নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করা। ঋণ প্রদান করা এবং ঋণ সেবা প্রসারিত করা।

(৯) মানসম্মত প্রযুক্তির ব্যবস্থাঃ নারীদের কাজের বোঝা কমানোর লক্ষ্যে মানসম্মত প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা। 

(১০) নারীর কল্যাণমুখী দিকঃ নারীর কল্যাণমুখী দিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিশু, পরিচর্যা ইত্যাদি।

ধারণা (Assumption): সম্পদ ও দক্ষতার সুযোগের অভাবের দরুন নারীরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শরীক হতে পারে না। নারীরা যখন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশিদার হবে, তখন বিদ্যমান অসম, জেন্ডার সম্পর্ক স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

অবদান (Contribution): উন্নয়ন তত্ত্ব এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নারী প্রশ্নটি সামনে আনে। উন্নয়ন তত্ত্ব এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নারী প্রশ্নটি সামনে আনে।

বৈশিষ্ট্য (Features): WID প্রচলিত আধুনিকীকরণ তত্ত্বকেই দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে সেখানে এই ভ্রান্ত ধারণা পোষণা করা হয় যে, উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে নারীরা সম্পৃক্ত নয়।

সীমাবদ্ধতা (Limitations):

(১) প্রচলিত সামাজিক কাঠামোকে WID মেনে নেয়।

(২) কখনোই নারীর অধস্তনতা এবং নিপীড়নের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে না।

(৩) WID সংঘাতহীন, আপোষহীন মনোভাব পোষণ করে এবং নারীরা কেন উন্নয়ন কৌশল থেকে উপকৃত হচ্ছে না, সে প্রশ্ন কখনো তোলে না।

(৪) শ্রেণী, ধনসম্পদ এবং সংস্কৃতির প্রভাব উপেক্ষা করে নারীকে বিমূর্ত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

(৫) WID নারীর কাজের উৎপাদনশীল দিকের উপর বেশি জোর দেয়, কিন্তু নারীর জীবনের প্রজনন দিকটিকে অস্বীকার করে। 

(৬) সম্পদের অপর্যাপ্ততা ও অনভিজ্ঞতার সাথে নারী সুযোগ ও সামর্থ্যের ঘাটতির দরুন নারীর কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রকে প্রায়ই সীমিত করা হয়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্যে WID: অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। WID সমাজের প্রতিটি বিষয়কে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করে। উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও নারী উন্নয়নকে বিচ্ছিন্ন মনে করা হয় না WID পদ্ধতিতে। বরং উন্নয়নের ক্ষেত্র থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কে লাভবান হচ্ছে বা নারী পুরুষের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা WID নীতি । তাই WID একটি সর্বজনীন বিষয়।