হান্টার কমিশনকে কেবল প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কেই সুপারিশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মধ্যে একটি সম্পর্ক বর্তমান, অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে মাধ্যমিক শিক্ষা এবং তার ওপর ভিত্তি করে কলেজীয় শিক্ষা তথা উচ্চশিক্ষায় পৌঁছােনাে যায়, তাই কমিশন উচ্চশিক্ষা সম্পর্কেও কতকগুলি সুপারিশ করে। সুপারিশগুলি হল—
(1) বেসরকারি কলেজ গঠনে উৎসাহদান: উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সরকারকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে যাতে কলেজ গড়ে ওঠে, সে বিষয়ে সরকার প্রয়ােজনীয় উৎসাহদানের কাজ করবে।
(2) কলেজীয় শিক্ষার জন্য অনুদানের ব্যবস্থা: সরকার বেসরকারি সংস্থাকে বা প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দানের উদ্দেশ্যে কলেজীয় শিক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অনুদান মঞ্জুর করবে।
(3) মডেল কলেজ স্থাপন: কতকগুলি আদর্শ কলেজকে সরকারি পরিচালনায় রাখার সুপারিশ করা হয়। এই কলেজগুলি বেসরকারি কলেজগুলির সামনে ‘মডেল হিসেবে কাজ করবে।
(4) সরকারি অনুদান লাভের শর্তাবলি: সরকারি অনুদান পেতে গেলে প্রতিটি কলেজকে কতকগুলি শর্ত পুরণ করতে হবে। কমিশনের মতে, ওই শর্তগুলি হল—
-
কলেজটি স্থানীয় মানুষের প্রয়ােজন মেটাতে সক্ষম হবে,
-
ওই কলেজে উপযুক্ত সংখ্যক এবং যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক থাকবেন,
-
শিক্ষার গুণগত মান ঠিক থাকবে ইত্যাদি।
(5) সরকারি বৃত্তি ব্যবস্থা: দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি চালু করতে হবে।
(6) মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে শিক্ষার ব্যবস্থা: উচ্চশিক্ষা শেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারে, তার জন্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(7) কলেজের পাঠক্রমে বিভিন্ন ঐচ্ছিক বিষয় পাঠের ব্যবস্থা: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের মানসিকতা ও পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য বিভিন্ন কলেজের পাঠক্রমে বিভিন্ন ঐচ্ছিক বিষয় পঠনপাঠনের সুযােগ সৃষ্টি করতে হবে।
(8) চাহিদা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন: কমিশনের সমীক্ষা অনুযায়ী চাহিদা অনুসারে সরকারকে দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে সুপারিশ করে কমিশন তার কর্মপরিধির সীমা লঙ্ঘন করেছিল। সরকার যেহেতু উচ্চশিক্ষা বিষয়ে পর্যালােচনা করার জন্য হান্টার কমিশন গঠন করেনি, তাই সেই সুপারিশগুলিকে কার্যকরী করার কোনো দায়ও সরকারের ছিল না। তবে ওই সুপারিশগুলি যে খুবই তাপর্যপূর্ণ ছিল, তা পরবর্তীকালে স্যাডলার কমিশনের (1918) সুপারিশগুলি পর্যালােচনা করলেই বােঝা যায়।
Leave a comment