প্রশ্নঃ খোদাবাদ বলতে কী বোঝ?
অথবা, ঈশ্বর সম্পর্কে তোমার ধারণা লিখ।
অথবা, ঈশ্বরবাদ কী?

ভূমিকাঃ ঈশ্বরের অস্তিত্ববিষয়ক মতবাদ দর্শনের অন্যতম একটি সমস্যা। ঈশ্বরের অস্তিত্ববিষয়ক মতবাদের মধ্যে ৪টি মতবাদই প্রধান। সর্বেশ্বরবাদ মতবাদীদের মতে, ঈশ্বর সর্বত্রই অবস্থান করছেন, সবকিছুই ঈশ্বর দেখছেন ও নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ মতের লোকেরা ঈশ্বর ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করতে পারে না।

ঈশ্বরের ধারণাঃ যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক খোদার বিভিন্ন ধারণা প্রচার করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

(১) প্লেটোঃ প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো খোদাকে মঙ্গলের প্রতীকরূপে ধারণা করেছেন। তার মতে, খোদার ধারণা ও মঙ্গলের ধারণা অভিন্ন।

(২) এরিস্টটলঃ এরিস্টটলের মতে, খোদা হচ্ছেন জগতের প্রধান চালক। তার কোন চালক নেই। তিনি শুদ্ধ আকার এবং শুদ্ধ ক্রিয়া। তিনিই জগতের লক্ষ্য।

(৩) প্লাটিনাসঃ প্লাটিনাসের মতে, খোদা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অনন্ত ও অসীম এবং অনির্বচনীয়। তিনি নির্গুণ, সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণময়। অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে তাকে জানা যায়।

(৪) ডেকার্টঃ ডেকার্টের মতেও খোদা এক, অদ্বিতীয়, অসীম ও অনন্ত। তিনি সর্বশক্তিমান দ্রব্য। তিনি জগতের স্রষ্টা।

(৫) স্পিনোজাঃ স্পিনোজার মতে, খোদাই একমাত্র পরম দ্রব্য। তার অসংখ্য গুণের মধ্যে মানুষ কেবল ‘বিস্তৃতি’ ও ‘চৈতন্য’কে জানতে পারে। ঈশ্বরের স্বরূপ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সসীম বস্তু ও মন খোদারই প্রকাশমাত্র। এদের নিজস্ব সত্তা নেই।

(৬) লাইবনিজঃ লাইবনিজের মতে, খোদা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎপরমাণু। কেবলমাত্র চিৎপরমাণুই অস্তিত্বশীল। খোদা থেকেই অন্যান্য চিৎপরমাণুর সৃষ্টি।

(৭) কান্টঃ কান্টের মতে, কেবল নৈতিক যুক্তির ভিত্তিতেই খোদার অস্তিত্ব স্বীকার করা যায়। পরপারে পুণ্যবানদের পুরস্কার ও পাপীদের শাস্তি বিধানের জন্য খোদার অস্তিত্ব,অপরিহার্য।

(৮) হেগেলঃ হেগেলের মতে, খোদাই পরমাত্মা বা পরম ধীশক্তি যিনি জগতের সবকিছুর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মাত্রায় নিজেকে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। এই পরমাত্মা হচ্ছে অসীম ও অনন্ত আত্মচৈতন্য, যিনি জড়, প্রাণ ও মনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত। 

(৯) ব্রাডলিঃ ব্রাডলির মতে, পরমসত্তা হচ্ছে পরম অভিজ্ঞতা, পরমসত্তা নৈর্ব্যক্তিক। কিন্তু খোদা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, খোদা হচ্ছেন পরমসত্তার অবভাস।

(১০) লোটজারঃ লোটজারের মতে, খোদা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পরমসত্তা। তার সৃষ্টিকার্য তার অনন্ত ভালবাসার মহিমা প্রকাশ করে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সকলেই ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, জগৎস্রষ্টা এবং আধ্যাত্মিক দ্রব্য বলে স্বীকার করেছেন। তিনি জগতের সবকিছুর আধার। তিনি অসীম ও পূর্ণ হয়েও সসীম ও অপূর্ণের মাঝে বিরাজিত। তিনি সকল আদর্শ ও নৈতিকতার উৎস। সত্য, কল্যাণ, সুন্দর সব কিছুই তার মাঝে মূর্ত হয়ে ওঠে।