প্রশ্নঃ “কোন ব্যক্তিকে বিচারের পর শাস্তি প্রদান অথবা খালাস দেয়া হলে তাকে একই অপরাধের জন্য পুনরায় বিচার করা যাবে না।”-এই নীতি সংক্রান্ত ফৌজদারী কার্যবিধিতে প্রণীত আইন বর্ণনা কর এবং এই নীতি প্রয়োগের পরিসর ব্যাখ্যা কর।

অথবা, “ইহা অপরাধ আইনে একটি প্রতিষ্ঠিত মতবাদ যে একটি মানুষকে একই অপরাধের জন্য দু’বার অভিযুক্ত করা চলে না।” -এই মতবাদটি পর্যালোচনা কর ও বুঝায়ে দাও 

উত্তরঃ একটি অপরাধের জন্য যদি কোন ব্যক্তির একবার বিচার হয়ে থাকে তবে আর সেই অপরাধের জন্য বিচার করা যাবে না। বিচারে সে ব্যক্তি শাস্তি পেয়ে থাকুক বা খালাস হয়ে থাকুক তাকে আবার বিচারের জন্য ডেকে উত্যক্ত করা যাবে না। এই নীতিবাক্যটির প্রতিফলন ঘটেছে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৩ ধারায়।

এই ধারাটির (১) উপধারায় বলা হয়েছে যে, কোন একটি অপরাধের জন্য উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন একটি আদালত একবার কোন ব্যক্তিকে বিচার করে ঐ অপরাধের জন্য দণ্ডাদেশ কিংবা খালাস দানের পর যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ দণ্ডাদেশ বা খালাসের আদেশ বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত একই অপরাধের জন্য ঐ ব্যক্তির পুনরায় বিচার করা যাবে না, কিংবা একই ঘটনাবলীর উপর অপর কোন অপরাধের ক্ষেত্রে যার জন্য তার বিরুদ্ধে আনীত চার্জ হতে ভিন্ন একটা চার্জ ২৩৬ ধারা মতে আনা অথবা যার জন্য ২৩৭ ধারা মতে দণ্ডাদেশ দেয়া যেতো, তেমন অবস্থায় পুনরায় ঐ ব্যক্তির বিচার করা যাবে না।

(২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন অপরাধের অভিযোগ হতে খালাস প্রাপ্ত হয়েছে বা দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হয়েছে সে ব্যক্তির বিচার পরবর্তীতে এমন একটি সুষ্পষ্টরূপে পৃথক অপরাধের জন্য করা যেতে পারে যার জন্য ২৩৫ (১) ধারায় পূর্বের বিচারই তার বিরুদ্ধে একটি পৃথক চার্জ গঠন করা যেতো।

(৩) উপ ধারার ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তি এমন একটি অপরাধের দরুন দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছে যে অপরাধটি আবার এমনই একটি পরিণতি সৃষ্টিকারী কাজ দ্বারা গঠিত যা ঐ কাজের সহিত একত্রে মিলিত হয়ে যে অপরাধের জন্য পূর্বে সে দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছে তা হতে সম্পূর্ন ভিন্ন একটি অপরাধ সৃষ্টি করেছে, তাহলে সর্বশেষ উল্লেখিত অপরাধের জন্যে পরে তার আবার বিচার হতে পারে; যদি দেখা যায় যে, যখন সে দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছে তখন কথিত পরিণতির উদ্ভব হয়নি অথবা উদ্ভব হয়েছে তেমন তথ্য আদালতের জানা ছিল না।

এই ধারার (৪) উপধারায় বলা হয়েছে যে, এমন কোন কাজ দ্বারা সৃষ্ট কোন অপরাধ হতে খালাস প্রাপ্ত হয়েছে বা দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছে এমন কোন ব্যক্তি ঐ জাতীয় খালাসপ্রাপ্ত কিংবা দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এমন একই কার্য দ্বারা সৃষ্ট অপর যে কোন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হতে পারে এবং এজন্য তার বিচারও করা যেতে পারে এবং এজন্য তার বিচারও করা যেতে পারে যদি প্রথমে যে আদালতটি তার বিচার করেছিল তা ঐ অপরাধটির বিচার করার এখতিয়ার সম্পন্ন না হয়ে থাকে যে অপরাধটির জন্য এখন তার বিচার হচ্ছে।

উদাহরণঃ (ক) ‘ক’ একজন ভৃত্য। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে বিচার করা হলো এবং সে খালাস পেলো। এই আদেশ বহাল থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে একই ঘটনার উপর আর চুরি বা অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা যাবে না।

(খ) ‘ক’ এর বিরুদ্ধে নরহত্যার অভিযোগ এনে বিচার করে খালাস দেয়া হলো দস্যুতার কোন অভিযোগ আনা হয় নি। কিন্তু ঘটনা হতে জানা যায় যে, হত্যা অপরাধটি সংঘটনের সময় ‘ক’ দস্যূতা করেছিল। এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে দস্যুতার অভিযোগ এনে এর বিচার করা যেতে পারে।

(গ) মারাত্মক জখমের জন্য ‘ক’ এর বিচার হলো এবং তাকে শাস্তি দেয়া হলো। আহত ব্যক্তিটি পরে মারা গেল। এমতাবস্থায় অপরাধমূলক নরহত্যার অভিযোগ এনে ‘ক’ এর বিচার করা যাবে।

(ঘ) ক এর বিরুদ্ধে ‘খ’ এর অপরাধমুলক নরহত্যার অভিযোগ এনে বিচার করে শাস্তি দেয়া হলো। পরে একই ঘটনার উপর খ-কে খুন করার জন্য পরে ‘ক’ এর আর বিচার হবে না।

(ঙ) ইচ্ছাকৃতভাবে ‘খ’ কে- আঘাত করার জন্য ‘ক’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ‘ক’ এর বিচার হলো এবং শাস্তি দেয়া হলো। পরবর্তীতে ‘খ’ কে মারাত্মক জখম করার অভিযোগ এনে বিচার করা যাবে না ।

(চ) ‘খ’ এর শরীর হতে কিছু অলংকার সরাবার অপরাধে একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ক এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিচার করা হলো এবং শাস্তি দেয়া হলো। পরবর্তীতে ঐ একই ঘটনার উপর দস্যুতার অভিযোগ এনে ক এর বিচার করা যাবে।

(ছ) ‘খ’ এর যথাসর্বস্ব লুট করার জন্য ‘ক’ ‘খ’ ‘গ’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে একজন তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিচার করে শাস্তি দেয়া হলো। একই ঘটনার উপর ‘ক’ ‘খ’ ও ‘গ’ এর বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ এনে বিচার করা যেতে পারে।