প্রশ্নঃ আরেফ আলী শেষ পর্যন্ত কেন সত্যপ্রকাশে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়?

উত্তরঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহr ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসের আরেফ আলী বুঝতে পারে, শ্রেণি-বিভক্ত এ সমাজে অভিজাত পরিবারের সন্তান কাদেরের পক্ষে দরিদ্র মাঝির স্ত্রীকে ভালােবাসা অবান্তর ব্যাপার। নিহত নারীটির প্রতি কাদেরের এই নির্মমতা ইন্দ্রিয় পরায়ণতা ও সহানুভূতিহীনতা আরেফকে তার কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে সচেতন করে তােলে। ইচ্ছে করলেও এ থেকে সে পালিয়ে যেতে পারে না। তার মতে, মানুষের জীবন এত মূল্যহীন নয়।

যুবক শিক্ষক আরেফ আলী নিজের সমূহ বিপদের সম্ভাবনার কথা জেনেই সে ঘটনাটি দাদাসাহেব ও পুলিশকে জানায়। সত্য প্রকাশের দায়িত্বভার এমনই প্রবল যে, কোনাে ভয় কিংবা পরিণামভীতি আরেফ আলীকে তার কর্তব্য থেকে বিরত করতে পারেনি। যুবক শিক্ষক এতদিন দাদাসাহেবকে যা বলতে পারেনি সেই নির্মম, অপ্রিয় অথচ অনিবার্য সত্যই দ্বিধাহীনভাবে ও প্রত্যয়দৃঢ় কণ্ঠে কাদের মিঞাকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জীবনবােধের গভীরতা থেকে আরেফ আলী প্রত্যয় অর্জন করেছিল। সে প্রত্যয় গড়ে উঠেছিল মুক্তি ও আদর্শের মাত্রাযােগে। তাই সে নিরাপদ আশ্রয়, নিরাপদ জীবন পেছনে ফেলে সত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায়।

আরেফ আলী, এক সময় সমস্ত সংশয় কাটিয়ে ওঠে। সে ভাবে, যুবতী নারীর সঙ্গে কাদেরের নিন্দনীয় সম্পর্কে ও তার দ্বারা কৃত অত্যন্ত গুরুতর অপরাধের ঘটনা প্রকাশ না করে সে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। তাই শেষ পর্যন্ত সে সত্য প্রকাশ করে দেয়। এখানেই আরেফ আলী পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে অস্তিত্বময় হয়ে ওঠে। আপষ, ভয়, দ্বিধা- কোনাে কিছুই আর তাকে কাবু করতে পারে না। সে দায়িত্ববান, কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করায়। ফলে ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার কাহিনি হয়ে ওঠে। সৌন্দর্যপ্রিয়, কোমল-হৃদয়, ভীতু-স্বভাব, লাজুক ও দুর্বলচিত্র একটি তরুণ কীভাবে স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হলাে এবং নিজ ব্যক্তিসত্তা নিয়ে জগতের মুখােমুখি দাঁড়াল-আরেফ আলীর চরিত্রে সেই জীবন-সত্যই রচিত হয়েছে।

যুবতী নারীর সঙ্গে কাদেরের সম্পর্কটি নিন্দনীয় ছিল এবং হত্যাকাণ্ডটি অতিশয় গুরুতর অপরাধ, তখন তা প্রকাশ না করে যুবক শিক্ষক বিবেকবােধ থেকে বিরত থাকতে পারেনি। তাই সত্যপ্রকাশে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে।