প্রশ্নঃ আধুনিকীকরণ ও নির্ভরশীলতা তত্ত্বের মধ্যকার পার্থক্য লিখ। নির্ভরশীলতা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

অথবা, আধুনিকীকরণ ও নির্ভরশীলতা তত্ত্বের মধ্যকার পার্থক্য লিখ। নির্ভরশীলতা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সমাজবিজ্ঞানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে দু’টি আলোচিত তত্ত্ব হচ্ছে আধুনিকীকরণ ও নির্ভরশীলতা তত্ত্ব। এ দু’টি তত্ত্বের ব্যাখ্যার সমাজবিজ্ঞানীদের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।

নির্ভরশীলতা ও আধুনিকীকরণ তত্ত্বঃ আধুনিকীকরণ তত্ত্ব হলো প্রাচ্য রাষ্ট্রসমূহের পাশ্চাত্যকরণের প্রচেষ্টা। সাধারণত প্রাচ্য রাষ্ট্রসমূহ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ানদের অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এটিই হচ্ছে আধুনিকীকরণ তত্ত্ব। আধুনিকীকরণ তত্ত্বের সমালোচনায় তৈরি হচ্ছে নির্ভরশীলতা তত্ত্ব। আধুনিকতা ও নির্ভরশীলতা তত্ত্ব পরস্পর বিপরীতধর্মী।

নির্ভরশীলতা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যঃ নির্ভরশীলতা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ-

(১) বিশ্বব্যাপী ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দু’ধরনের রাষ্ট্র বিদ্যমান। (ক) মেট্রোপলিস (খ) স্যাটেলাইট। 

(২) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহ মেট্রোপলিসদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

(৩) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনভাবে সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।

(৪) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহে স্বনির্ভর অর্থনীতি নেই।

(৫) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহে মেট্রোপলিসদের প্রভাব চরমভাবে বিদ্যমান।

(৬) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহ কাঁচামাল রপ্তানি করে ও শিল্পজাত পণ্য আমদানি করে।

(৭) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহ চূড়ান্ত কোনো বিপ্লব সংগঠিত করতে পারে না।

(৮) মেট্রোপলিস রাষ্ট্রসমূহের কাঁচামাল আমদানি করে ও শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করে।

(৯) স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহ মেট্রোপলিস প্রদত্ত ঋণের ওপর নির্ভরশীল।

(১০) বর্তমান বিশ্বের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে নির্ভরশীলতা তত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ নির্ভরশীলতা তত্ত্বই দেখিয়েছে যে, স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহের পুঁজি গঠন প্রক্রিয়া কীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ বাধার কারণে স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে না।

আধুনিকীকরণ তত্ত্বের সাথে নির্ভরশীলতা তত্ত্বের পার্থক্যঃ আধুনিকীকরণ তত্ত্বের সাথে নির্ভরশীলতা তত্ত্বের পার্থক্য হলোঃ-

(১) আধুনিকীকরণ তত্ত্বে নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্ভরশীলতা তত্ত্বে মেট্রোপলিস ও স্যাটেলাইট রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

(২) নির্ভরশীলতা তত্ত্বের সমালোচনা হিসেবে আধুনিকায়েন তত্ত্বের উৎপত্তি হয়।

(৩) বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় নির্ভরশীলতা তত্ত্বের তুলনায় আধুনিকায়ন তত্ত্ব বেশি উপযোগী।

(৪) নির্ভরশীলতা ও আধুনিকায়ন তত্ত্ব বিপরীতধর্মী হলেও বিশ্বব্যবস্থা ব্যাখ্যায় দু’টি তত্ত্বই উপযোগী।

(৫) আধুনিকায়ন তত্ত্ব হলো নির্ভরশীলতা তত্ত্বের সমালোচনা বিশেষ আর নির্ভরশীলতা তত্ত্ব হলো ঔপনিবেশিকতা ও পুঁজিবাদের সমালোচনা বিশেষ।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ভরশীলতা ও আধুনিকায়ণ উভয় তত্ত্বই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দু’টি তত্ত্ব সমাজ বিজ্ঞানের আলোচনা ও গবেষণার পরিধিকে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। এক কথায় বলা যায়, অনুন্নত ও উন্নত প্রায় সকল রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার আওতাভুক্ত করেছে।