অথবা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের বিষয়কল্পনার মূলে মধ্যবিত্তের আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মরূপান্তরের স্বরূপ অন্বেষণের প্রেরণাই মুখ্য।”- উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।
অথবা, “সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নব্য-উপনিবেশ কবলিত পূর্ব বাংলার নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনের
বিস্তৃত পরিসর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসকে এপিক চারিত্রধর্মে উন্নীত করেছে।”- বিশ্লেষণ কর। অথবা, “সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নব্য-উপনিবেশ কবলিত পূর্ব বাংলার নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনের বিস্তৃত পরিসর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসকে এপিক চারিত্রধর্মে উন্নীত করেছে।”- এ সম্পর্কে তােমার অভিমত ব্যক্ত কর।
উত্তরঃ বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে বিরল ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭]। তার ‘চিলেকোঠার সেপাই’ (১৯৮৬) বাংলা উপন্যাস জগতে বহুল পঠিত, নন্দিত ও স্বীকৃত। সর্বজ্ঞ ঔপন্যাসিকের অবলােকন ওসমানের দৃষ্টিকোণের সাথে সমাদৃত হয়ে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ নির্মিত হয়েছে এবং এই ঘটনাপ্রবাহ সমান্তরাল দুটি রেখায় বিন্যস্ত হয়েছে। উনসত্তরের গণঅভূত্থানকালীন উত্তাল রাজনৈতিক শহর ঢাকা এবং শ্রেণিসংঘাত গ্রামীণ জনপদের আশ্রয়ে নির্মিত হয়েছে উপন্যাসের বহির্ঘটনাবৃত্ত। ওসমানের আত্মসন্ধান, আত্মরক্তক্ষরণ ও আত্মউজ্জীবনের অন্তঃপ্রবাহী চেতনাস্রোত গড়ে তুলেছে, ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর মৌল জীবনার্থ। ঘটনার সমান্তরাল দুই রেখার সংকর্ষে ও সংঘর্ষে নির্মিত হয়েছে এ উপন্যাসের অখণ্ড জীবনবৃত্ত।
বিচূর্ণিত, খণ্ডিত, তমসাচ্ছন্ন সময়ের বৃত্তবদ্ধতা থেকে মুক্তি-প্রত্যাশী জাতীয় অস্তিত্বের সম্পূর্ণতা সন্ধানের শিল্প অভিপ্রায়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ স্বাধীনােত্তর কালখণ্ডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এ উপন্যাসের পটভূমিও উনসত্তরের উন্মাতাল সমাজ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ। কিন্তু ঔপন্যাসিকের জীবনজিজ্ঞাসার সর্বমুখিতা। উপন্যাসবিধৃত চেতনাকে নির্দিষ্ট কালপরিসর থেকে মুক্তি দিয়েছে। আত্মরতির অন্ধকার থেকে মধ্যবিত্ত মানসের ক্রমমুক্তির। ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের প্রাণসঞ্চারী ভূমিকার স্বরূপ নিপুণ দক্ষতায় উন্মােচিত হয়েছে এ উপন্যাসে।
পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য বিস্তর। সােনার দাম পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানে কম। কাগজ তৈরি হয় এখানে, অথচ ওদের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে আমাদের সেই কাগজ কিনতে হয়। আমরা গায়ের রক্ত পানি করে পাট ফলাই, সেই পাট বেঁচে ফেঁপে ওঠে লাহাের, করাচি, ইসলামবাদ। ওপরের দিকে একটা বাঙালি অফিসার নেই। আর্মিতে বাঙালি নেই। আয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির সংঘবদ্ধ আন্দোলন। মিটিং- মিছিল, স্লোগান, হরতালে উত্তাল ঢাকা শহর। পাক পুলিশের গুলিতে মরছেও বেশ। ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধ শিল্পী এ ঘটনাকে অবলম্বন করে উপন্যাসটিকে মহাকাব্যিক রূপ দিয়েছেন।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নব্য-উপনিবেশ কবলিত পূর্ব বাংলার নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনের বিস্তৃত পরিসর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসকে এপিক চারিত্রধর্মে উন্নীত করেছে। উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহে মূল দুটি স্রোত বিদ্যমান। এক. নগর জীবন যার জটিল ও দ্বন্দময় চেতনা গড়ে উঠেছে, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত উনুলিত জনস্রোত, শ্রমজীবী, সধারণ মানুষ এবং স্বৈরশাসনের অনুগ্রহপুষ্ট দালাল-মহাজনের সমবায়ে। শাষক-শােষিতের সম্পর্ক নিরূপণ সূত্রেই শ্রেণিসংঘাতের অভিজ্ঞতা জাতীয়বাদী আন্দোলনের সঙ্গে সমীকৃত হয়েছে। ঘটনার এই ধারার কেন্দ্রে স্থাপিত হয়েছে আত্মতুক চেতনালােক থেকে আন্দোলনের দিকে ক্রম-অগ্রসরমান ওসমান গণি, ভাসমান শ্রমিক গণঅ্যুত্থানের স্বতঃস্ফূর্ত সৈনিক খিজির আলি এবং পাকিস্তানি শােষকশক্তির পদাঙ্ক-অনুসারী রহমতউল্লাহ। দুই. সামন্ত চেতনা ও বুর্জোয়া ভাবাদর্শের দ্বন্দ্বময় বৈশিষ্ট্যে গঠিত আমজীবন, যেখানে ভূমিনির্ভর জোতদার এবং ক্ষুদে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ােশ্রেণির সঙ্গে বর্গাচাষি ও বিত্তহীনের শ্রেণিদ্বন্দ্ব অনিবার্যভাবেই শ্রেণিসংঘাতে পরিণত হয়। উপন্যাস কাহিনির স্রোতের দুই বিপরীত মেরুতে রয়েছে আনােয়ার, চেংটু, করমালি, আলিবক্স এবং খয়বার গাজী। একটি সময় পরিধির সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের সমগ্রতা সৃষ্টির প্রয়ােজনে নগর ও গ্রামের জীবনপ্রবাহকে অখণ্ড তাৎপর্যে রূপায়িত করেছেন ঔপন্যাসিক।
উনসত্তরের সংগ্রাম ও মিছিলে তরঙ্গিত রাজনৈতিক শহর ঢাকা। মধ্যবিত্তের ব্যক্তিসর্বস্ব, আত্মপ্রেম ও আত্মনিগ্রহপরায়ণ চেতনা প্রবল গণআন্দোলনের টানে কীভাবে চিলেকোঠার বিচ্ছিন্ন জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে, ওসমান গনি তার দৃষ্টান্ত। উনুলিত, আত্মমুগ্ধ, বিবরবাসী মধ্যবিত্তের প্রতিভূ ওসমান। কেরানি ওসমান পুরাতন ঢাকার এক চিলেকোঠার ভাড়াটে বাসিন্দা। সে উলিত-অস্তিত্ব, তার পরিবারের অন্য সবাই ভারতের অধিবাসী। ওসমানের মধ্যে যে আত্মমুগ্ধতা ও স্মৃতিক্লিষ্টতার বিন্যাস ঘটেছে তা সামন্ত জীবনের টানে নয়- বিচূর্ণ, ভগ্ন বর্তমানের অসংগতিজাত। গণঅভ্যুত্থানের প্রথম পর্যায়ে অনেকটা নির্লিপ্ত দর্শকের মতাে ওসমানের গতিবিধি। সে রাজনীতি-সচেতন অথচ আত্মমগ্ন তার মানস গড়নের মধ্যেই এক ধরনের অক্রিয়তা বিদ্যমান। কিন্তু সংগ্রামে-মিছিলে-রক্তপাতে শিহরিত ঢাকার বহির্জীবন তাকে আকর্ষণ করে। রাজনীতি তার কাছে হয়তাে-বা বুদ্ধিবিলাস, কিন্তু এই অস্ফুট চেতনাবীজ থেকেই জন্ম নেয় সমষ্টিলগ্ন সংগ্রামী জীবনাকাঙ্ক্ষা।
“একটি ঘটনার প্রত্যাশায় ওসমান খাবার কথা ভুলে তাড়াতাড়ি হাঁটে। কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌছাতে না পৌছাতে জানাজা শেষ হলাে। গত কয়েকদিনে সারা পাকিস্তান জুড়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত শহিদদের জানাজা। লম্বা কাতারগুলাে ভেঙে যাচ্ছে, এদিক ওদিক লােকজনের ছােটো ছােটো জটলা। ছাত্রদের পরবর্তী কর্মসূচি জানবার জন্য। ওসমান একবার এ-জটলা একবার ও-জটলার সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু মাইকের পোঁ পোঁ ধ্বনি ছাড়া কিছুই বুঝা যায় না। মাইকের এই ভোতা সংগীত ছাপিয়ে ওঠে স্লোগান, শহিদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না; ‘পুলিশী জুলুম পুলিশী জুলুম বন্ধ করাে, বন্ধ করাে।’ গেটে দাঁড়ানাে উঁচালম্বা সাদা ও ধূসর ঘােড়াদের পা কাপে। দিকে দিকে আগুন জ্বালাে, ‘আগুন জ্বালাে আগুন জ্বালাে’ ওসমানের বুক দারুণভাবে ওঠানামা করে। শ্লোগানগুলাে একটি একটানা আওয়াজে মিলিত হয়ে তার। করােটির দেওয়াল দৃপ্ত করে তােলে : শুওরের বাচ্চা আইয়ুব খান মােনেম খানের চাকর বাকরের দল, দ্যাখ! ভালাে করে। দেখে নে। তােদের সামনে খালি হাতে বুক সর্বস্ব করে তােদের বাপ আইয়ুব খানকে চ্যালেঞ্জ করতে এসেছে এরা! ভরা গলায় ওসমান শ্লোগানের জবাব দেয়, ‘মুক্তি চাই মুক্তি চাই!”
এই উদ্ধৃতি থেকে ওসমানের আত্মস্বরূপের প্রকৃত পরিচয় অনুধাবন সম্ভব। তবুও সমষ্টি থেকে দূরবর্তী ওসমানের জন্য সংঘচেতনার উদ্দীপক হিসেবে অসংগঠিত কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী খিজিরের প্রয়ােজন হয়। খিজিরের অভিজ্ঞতা এবং আত্মদান ওসমানের ব্যক্তিভূগােলের সীমাকে উনসত্তরের সংগ্রামী, জনসমুদ্রে প্রসারিত করে দেয়। তার চেতনাগত বিস্তার অতিক্রম করে যায় বর্তমান সময়বৃত্ত।
“ওসমান ফের ছাদে যায়। শওকতের পাশে দাড়িয়ে রেলিঙে ভর দিয়ে দেখল মাত্র ৭ জন লােকের সঙ্গে শ্লোগান, দিতে দিতে নামল খিজির আলি, সান্ধ্য আইন সান্ধ্য মানি না মানি না; ‘আগুন জ্বালাে আগুন জ্বালাে’-‘দিকে দিকে আগুন জ্বালাে’, ‘জেলের তালা ভাঙবাে’ ‘শেখ মুজিবকে আনব। কয়েক মিনিটের ভেতর নানা দিক থেকে এইসব স্লোগানের। প্রতিধ্বনি বেজে ওঠে। মহল্লার গলি উপগলি শাখাগলি থেকে আরাে সব লােক এসে ছুটছে খিজিরের সঙ্গে। এত লােক কোখেকে আসে? পাড়ায় কি এত মানুষ আছে? হ্যা এবার ওসমান ঠিক ধরতে পেরেছে। মহল্লার জ্যান্ত মানুষের সঙ্গে যােগ দিচ্ছে ১০০ বছর আগে সায়েবদের হাতে নিহত, সায়েবদের পােষা কুকুর নবাবদের হাতে নিহত মিরাটের সেপাই, বেরিলির সেপাই, লক্ষ্মৌ-এর মানুষ, ঘােড়াঘাটের মানুষ, লালবাগের মানুষ। গা একটু ছমছম করলেও ওসমান সামলে নেয়। না তার ভয় কি?”
সংঘচেতনায় উদ্দীপ্ত, কিন্তু সংঘবিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণায় ওসমান চরিত্রের যে দ্বৈততার প্রকাশ, সুদীর্ঘ কলােনিয়াল উত্তরাধিকারবাহী মধ্যবিত্তের স্বভাবের পরিচয়বাহী। খিজির নিহত হওয়ার পরই প্রকৃতপক্ষে আত্মরূপান্তর ঘটতে থাকে ওসমানের। তার বহু যত্নে অর্জিত শ্রেণি-অস্তিত্বই যেন হয়ে ওঠে প্রকম্পিত। একজন মৃত খিজিরকে কেন্দ্র করে সে আবিষ্কার করে অসংখ্য খিজিরের সম্মিলিত স্রোতােধারা : “আমি তাে খিজিরকে চিনি। খিজিরদের horizontal মিছিল | দিনদিন প্রসারিত হচ্ছে।
উপন্যাসের শেষে খিজিরের সন্ধানে যে ওসমানকে সমগ্র ঢাকা শহরে পরিভ্রমণরত দেখি, সে বিবরবাসী আত্মপ্রেমিক ওসমান নয়। ওসমান চরিত্রের প্যাটার্নের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানসের যে সকল বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস ঘটেছে, তা ঊনসত্তরের প্রগতিশীল রাজনীতি সচেতন বুদ্ধিবিলাসী মধ্যবিত্তের জন্য স্বাভাবিক ও সংগত। ওসমানের আত্মরূপান্তরের দর্পণে বাঙালি জাতিসত্তার সম্মুখগামী উত্তরণের সত্যই যেন প্রতীকায়িত হয়েছে।
‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের গ্রামীণ ঘটনাংশে শ্রেণিসংগ্রাম ও তার পরিণতি রূপায়িত হয়েছে। রহমতউল্লাহর মতাে খয়বার গাজীও পাকিস্তানি শাসকচক্রের সেবাদাস। বর্গাচাষিদের নির্মমভাবে শশাষণ করে সে। তার নির্দেশে গ্রামাঞ্চলের বর্গাচাষিদের গরু চুরি করে জমা করা হয় চরের এক নিরাপদ আস্তানায়। ফলে গ্রামের মানুষ এক সময় ক্রুদ্ধ হয়ে আলিবক্সের নেতৃত্বে পুড়িয়ে দেয় খয়বার গাজীর ট্যান্ডল হােসেন আলীর আস্তানা। চেংটুর মধ্যেই শ্রেণি-স্বভাবের স্বতঃস্ফুত বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত। বিপ্লবী কর্মী আলিবক্স তার রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু হলেও চেংটুর স্বভাবে খিজিরের সমধর্মিতা বিদ্যমান। সংগঠিত জনতা অতঃপর গ্রাম্য কুসংস্কারের উৎস বৈরাগীর ভিটা পরিষ্কার করে গণশত্রু খয়বার গাজীর বিচারের লক্ষ্যে গণআদালতের আয়ােজন করে। খয়বার গাজী জুম্মার নামাজের প্রার্থনা করে আদালতের কার্যক্রম বিলম্বিত করে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মিছিল এসে বিনষ্ট করে দেয় গণআদালতের স্পিরিট’। খয়বার গাজীর মৃত্যু দণ্ডাদেশ গণআদালত আর কার্যকর করতে পারে না। খয়বার গাজী পালিয়ে সদ্য জেল ফেরত আওয়ামী লীগ নেতার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় চেংটুকে। চেংটুদের পরিষ্কার করা বৈরাগীর ভিটায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলতে থাকে। আনােয়ারদের গ্রামে সংগঠিত এই ঘটনাধারায় শ্রেণিসচেতন রাজনৈতিক কর্মী আনােয়ারের কোনাে নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
আনােয়ারের মধ্যে সদর্থক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বিধৃত হয়। গণআন্দোলনের নেতৃত্ব ক্রমান্বয়ে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় শ্রেণিসগ্রামে বিশ্বাসী সংগঠনসমূহের দীর্ঘ সংগ্রামের গতি হয় বাধাগ্রস্ত। তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি গণসগ্রামের উদ্দেশ্য থেকে ক্রমান্বয়ে দূরবর্তী হতে থাকে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জাতীয় রাজনীতির এই অন্তঃস্বরূপকেও প্রত্যক্ষ করেছেন নিরাসক্ত দৃষ্টিতে। ঊনসত্তরের প্রবল গণআন্দোলনের টানে জাতীয় মুক্তি সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হলেও সাধারণ মানুষের জীবন প্যাটার্নের গুণগত পরিবর্তন দুঃস্বপ্নই থেকে যায়। ওসমানের আত্মরূপান্তরে এ কারণেই সম্ভবত তার শ্রেণি-সত্তার বিলুপ্তি নির্দেশ করেন ঔপন্যাসিক বাঙালির মুক্তি-আন্দোলন শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্তের স্বপ্নও সংগ্রামে পরিণত হয়।
উপসংহারঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসের বিষয়কল্পনার মূলে মধ্যবিত্তের আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মরূপান্তরের স্বরূপ অন্বেষণের প্রেরণাই মুখ্য। আশির দশকের রাজনীতিপ্রবাহ, সেনাতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের বিনাশী কর্মধারা, মধ্যবিত্তের দোদুল্যমান প্রতিবাদ ও সংগ্রাম, রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের আদর্শগত দূরত্ব, দ্বিধাবিভক্তি প্রভৃতির বাস্তব অভিজ্ঞতা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে উত্তাল সময়খণ্ডের সমাজ-রাজনৈতিক সত্য-অন্বেষায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
Leave a comment