অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ : কালিদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’। শকুন্তলার জীবন কাহিনি অবলম্বন করে কালিদাসের এই নাটকটি রচনা করেছেন। একদা সম্রাট দুষ্মন্ত মৃগয়া উপলক্ষ্যে কণ্বমুনির আশ্রম সীমান্তে উপনীত হয়ে মহর্ষির আতিথ্য গ্রহণ করেন। অবশ্য মহর্ষি কণ্ঠ তখন আশ্রমে ছিলেন না। সম্রাট দুষ্মন্ত শকুন্তলার অসামান্য রূপ-লাবণ্য দর্শনে মোহিত হয়ে এবং তার জন্ম-পরিচয় জেনে গান্ধর্ব মতে তাকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর রাজনীতিতে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে দুষ্মন্ত ফিরে যান। কিন্তু প্রত্যাশিত কাল পূর্ণ হওয়ার পরেও দুষ্মন্তের কোনো সংবাদ না পেয়ে শকুন্তলা চিন্তান্বিত হয়ে পড়েন। স্বামীর চিন্তায় যখন তিনি তন্ময়, তখন ঋষি দুর্বাসার আগমন ঘটে। দুর্বাসার আহ্বান শুনতে পাননি শকুন্তলা। তার জন্য দুর্বাসা তাকে এই বলে অভিশাপ দেন যে শকুন্তলা যার কথা চিন্তা করছে সেই তাকে বিস্মৃত হবে। শকুন্তলার দুই প্রিয় সখী অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদা ক্রুদ্ধ ঋষিকে তুষ্ট করে অভিশাপ খণ্ডনের একটি উপায় জানতে পারেন। উপায়টি হল শকুন্তলা যদি কোনো অভিজ্ঞান দেখাতে পারেন তাহলে রাজার তাঁকে মনে পড়বে। কণ্বমুনি আশ্রমে ফিরে এসে শকুন্তলাকে পতিগৃহে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শকুন্তলা তখন সন্তানসম্ভবা পথে এক নদীর জলে রাজা দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটি শকুন্তলার আঙুল থেকে খুলে পড়ে যায়। তাই রাজসভায় উপস্থিত হয়ে কোনো অভিজ্ঞান দেখাতে পারেননি শকুন্তলা। এরজন্য তাঁকে অপমানিত হতে হয় এবং রাজসভা থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি কশ্যপমুনির আশ্রমে স্থান লাভ করেন। সেখানেই তাঁর সন্তান ভরতের জন্ম হয়। এদিকে নানা সূত্রে হারিয়ে যাওয়া এই আংটিটি রাজা দুষ্মন্তের হাতে এসে পৌঁছায়। পূর্বের সকল কথা তার স্মরণে আসে। কিন্তু বহু অন্বেষণ সত্যেও তিনি শকুন্তলাকে ফিরে পান না। তারপর একদিন অসুর দমন করে স্বর্গ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কশ্যপমুনির উপবনে উপনীত হয়ে এক সর্বাঙ্গ সুন্দর দুরন্ত বালককে প্রত্যক্ষ করেন। এই বালকই ভরত। তারই সূত্রধরে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুনর্মিলন ঘটে।
নাটকটির মধ্যে ভাবাবেগ এবং রসসৃষ্টির উৎকর্ষতা সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিশেষত এর চতুর্থ অঙ্কে প্রকৃতির যে সজীবতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানবহৃদয়ের যে অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ বন্ধন ও কবিত্ব শক্তির সঙ্গে কবি গার্হস্থ্য জীবনবোধ ও পরিমিতি বোধের যে পরিচয় দিয়েছেন এবং চরিত্র সৃষ্টিকে স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করেছেন তাতেই ভারতীয় নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে শকুন্তলা এক অসাধারণ সৃষ্টি। এই নাটকে কোথাও অতিনাটকীয়তা নেই। স্বচ্ছন্দ গতিতে পরিণামের দিকে এগিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ নাটকটি শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে দ্বিধাহীন চিত্তে মত প্রকাশ করা যায়।
পত্ৰলেখা : সংস্কৃত সাহিত্যের অমর কথাকার বানভট্টের ‘কাদম্বরী’ কথাকাব্যের একটি অন্যতম চরিত্র হল পত্রলেখা। পত্রলেখা নামটিও মধুর। পত্রলেখা সুন্দরী, লাবণ্যময়ী, তিনি ‘কাদম্বরী’র অন্যতম প্রধান চন্দ্রাপীড়ের তাম্বুল করঙ্কবাহিনীরূপে নিযুক্ত হন।
‘কাদম্বরী’ গ্রন্থের মুখ্যকাহিনি চন্দ্রাপীড় বৈশম্পায়ন-মহাশ্বেতা-কাদম্বরী কাহিনি। কুলুতেশ্বর দুহিতা পত্রলেখার কাহিনি মূল কাহিনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই গ্রন্থের উপসংহার থেকে জানা যায় যে, পত্রলেখা চন্দ্রপ্রিয়া রোহিণী; মর্ত্যজন্মে চন্দ্রমা চন্দ্রপীড়ের পরিচর্যার জন্য তিনি পৃথিবীতে পত্রলেখা রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ‘প্রাচীন সাহিত্য’-এর কাব্যের উপেক্ষিতা প্রবন্ধে পত্রলেখার প্রতি বাণভট্টের উপেক্ষার দিকটি যুক্তির সাহায্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথ এই প্রবন্ধে লিখেছেন—“পত্রলেখা পত্নী নহে, প্রণয়িনী ও নহে, পুরুষের সহচরী। এই প্রকার অপরূপ সখিত্ব দুই সমুদ্রের মধ্যবর্তী একটি বালুতটের মতো।……এই সম্বন্ধটি অপূর্ব সুমধুর, কিন্তু এর মধ্যে নারী অধিকারের পূর্ণতা নাই।……চন্দ্ৰাপীড়ের এই আদর এই আলিঙ্গনের দ্বারাই পত্ৰলেখা কবি কর্তৃক অনাদৃতা।
পত্রলেখা যুবরাজ চন্দ্রাপীড়ের ‘তাম্বুল করঙ্কবাহিনী’, স্বর্গ থেকে স্বয়মাগত চন্দ্ৰাপ্ৰিয়া রোহিণী; তিনি চন্দ্রাপীড়ের সহচরী, প্রেমের দূতী। চরিত্রটি গৌণ। কাব্যে যতটুকু তাঁর যোগ্যস্থান, ততটুকুই অর্পিত হয়েছে, বাণভট্ট তাঁকে উপেক্ষা করেননি—স্বল্প পরিসরে এমন ভাবে তাঁকে দেখিয়েছেন, যাতে পত্রলেখার স্মৃতি যে কোনো পাঠক মনে রেখাপাত করে।
রঘুবংশ : মহাকবি কালিদাসের অমর মহাকাব্য ‘রঘুবংশ’। বিদ্যাসাগর বলেছেন—‘সংস্কৃত ভাষায় যত মহাকাব্য আছে তন্মধ্যে কালিদাস প্রণীত ‘রঘুবংশম্’ সর্বাপেক্ষা ও সর্বাংশে উৎকৃষ্ট”। প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, জীবন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, কল্পনার মৌলিকতা এবং মননধর্মীতা এই কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর প্রতিটি শ্লোক যেন এক একটি নিটোল মুক্ত। রস পরিণামের ওপর যদি কাব্যের উৎকর্ষ নির্ভর করে তাহলে এই কাব্য যে বহু বিচিত্র রসের ধারায় সমৃদ্ধ যে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
‘রঘুবংশম্’ ভারতবর্ষের বহু পরিচিত একটি রাজবংশের ঐতিহাসিক কাহিনির কাব্যরূপ—অনেকটা পুরাণের বংশ বর্ণনার মতো। একটি রাজবংশে কত বিচিত্র চরিত্রের মানুষের আবির্ভাব হয়েছে, ধর্মে-কর্মে সুপ্রতিষ্ঠিত বংশ কেমন করে ক্রমশ অগ্রসর হয়েছে কালিদাস সেই দিকে অঙ্গুলি সংকেত করেছেন। এই বংশ পুরাণের বহু বিখ্যাত সূর্যবংশ। রঘুবংশ সূর্যবংশের কীর্তিকাহিনি। ভারতবর্ষের অন্তরে যে মানবতার সমুন্নত আদর্শ আছে এবং যাঁর প্রেরণার বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছেন, সেই একই আদর্শ কালিদাসকে অনুপ্রাণিত করেছে। ‘রঘুবংশ’ ভারতীয় সমুন্নত মানবাদর্শের মহাকাব্য।
উনিশটি সর্গে রাজা দিলীপ থেকে আরম্ভ করে অগ্নিবর্ম পর্যন্ত ঊনত্রিশ জন রাজার কাহিনি কবি এই কাব্যে বিবৃত করেছেন। রঘুর থেকে বংশের প্রতিষ্ঠা তাই গ্রন্থের নাম ‘রঘুবংশম্’।
পার্বতী পরমেশ্বরের বন্দনা দিয়ে কবি কাব্য শুরু করেছেন। তারপর দিলীপের জন্ম। তার স্ত্রীর পুত্র কামনা, রঘুর জন্ম, অজ রাজার কাহিনি, অন্ধ ইন্দুমতির পরিণয়, দশরথের জন্ম পর্যন্ত অষ্টম সর্গের কাহিনি। নবম থেকে পঞ্চদশ পর্যন্ত রামায়ণের কাহিনি। তারপর লবকুশের জন্ম এবং এদের আখ্যান অষ্টাদশ সর্গ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য : (ক) ‘রঘুবংশ’ একটি মহাকাব্য। এই মহাকাব্যে রাজা রঘু ও দিলীপের চরিত্র সুচিত্রিত। (খ) কালিদাস কাহিনি গ্রহণ করেছেন বাল্মীকি রামায়ণ থেকে। তবে হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ থেকে তিনি কাহিনি সংগ্রহ করে মৌলিকতার পরিচয় দিয়েছেন। (গ) বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতির বর্ণনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা অনুপম। (ঘ) কালিদাসের দৃষ্টি স্বর্গ-মর্ত্য বিহারী। পৌরাণিক উপমাগুলির বহু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করবার মতো। শব্দ ও অর্থের এমন সংযোগ খুব কম কাব্যেই লক্ষ করা যায়। কালিদাসের অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বহুদর্শীতা গ্রন্থটির মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে সেইজন্য ‘রঘুবংশ’-এর প্রতিটি শ্লোক স্বয়ংপ্রভ মণির ন্যায় সমুজ্জ্বল।
দুর্বাসার অভিশাপ : ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কে দুর্বাসার শাপের প্রসঙ্গটি রয়েছে। প্রসঙ্গটি কালিদাসের মৌলিক উদ্ভাবন এবং নাট্যরস সৃষ্টিতে চরিত্র চিত্রণে প্রসঙ্গটির গুরুত্ব সর্বাধিক।
মৃগয়াবিহারী দুষ্মন্ত যখন কঘের তপোবনের প্রবেশ করে শকুন্তলার রূপ দেখে মুগ্ধ হন এবং তাকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করে রাজা তাঁর নিজ রাজ্য ফিরে যান, তখন থেকেই শকুন্তলার পতি বিরহে বিরহিণী হয়ে ওঠেন। রাজার সঙ্গে শকুন্তলার কথা হয়েছিল রাজ্যে ফিরে গিয়ে তিনি শকুন্তলাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বহুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যখন দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে পাঠালেন না তখন শকুন্তলা গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন।
একদিন যখন তপোবনে নিত্য কর্মাদি পরিত্যাগ করে পতিচিন্তায় শকুন্তলা আচ্ছন্ন ঠিক সেই সময় মহর্ষি দুর্বাসা ভিক্ষা চাইতে আসেন। কিন্তু প্রত্যুত্তর না পেয়ে ক্রোধান্বিত দুর্বাসা শকুন্তলাকে এই শাপ দেন যে—অতিথিসেবা না করে তুমি যার চিন্তায় আচ্ছন্ন তুমি তাকে চিনতে পারলেও সে তোমাকে চিনতে পারবে না।
এই অভিশাপ অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদা জানতে পেরে দুর্বাসার পদতলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাতে দুর্বাসা তাদেরকে বলেন, যদি কোনো অভিজ্ঞান দেখাতে পারে তাহলে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১। দুর্বাসার অভিশাপ নাট্য প্রযোজনা ও নাট্য কৌতুহলকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কাহিনি সপ্তম অঙ্ক প্রসারিত হয়েছে।
২। দুর্বাসার শাপ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—“দুর্বাসার শাপ কবির রূপক মাত্র। দুষ্মন্ত-শকুন্তলার বন্ধনহীন গোপন মিলন চিরকালের অভিশাপে অভিশপ্ত। উন্মত্ততার উজ্জ্বল উন্মেষ ক্ষণকালে জন্যই হয়। তাহার পর অবসাদে অপমানে বিস্মৃতির অন্ধকার আসিয়া আক্রমণ করে—ইহা চিরকালের বিধান।”
৩। প্রেমের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য এই শাপের প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে ‘রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“যে অন্ধ প্রেম সম্ভোগ আমাদিগকে স্বাধিকার প্রমত্ত করে তাহা ভর্তুশাপের দ্বারা খণ্ডিত, ঋষি শাপের দ্বারা প্রতিহত ও দৈব রোষের দ্বারা ভস্মসাৎ হইয়া থাকে। শকুন্তলার কাছে যখন আতিথ্য ধর্ম কিছুই নহে, তখন শকুন্তলার প্রেম আর কল্যাণ রহিল না।”
৪। পাশ্চাত্য নাট্যকারগণ যে শিল্পীজনোচিত সংযমের কালিদাস সেক্ষেত্রে কাব্যের শাসনকে মেনেছেন। এ ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“তিনি অনুতাপ ও দুঃখ সমুজ্জ্বল করিয়া দেখাইয়াছেন। কিন্তু পাপকে তিরস্করণের দ্বারা কিঞ্চিৎ প্রচ্ছন্ন করিয়াছেন। এই শাপ বা অলৌকিক ব্যাপারের দ্বারা তিনি শিল্পীজনোচিত সংযমের পরিচয় দিয়াছেন।
৫। দুষ্মন্তের অপরাধকে (নাগরিক বৃত্তি) দুর্বাসার শাপের আচ্ছাদনে আবৃত করে রেখেছেন। তাই সবদিক থেকেই দুর্বাসার শাপ’ নাট্যকার কালিদাসের কবি কল্পনার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদা : মহাকবি কালিদাসের অপূর্ব সৃষ্টি অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদা চরিত্র সংস্কৃত সাহিত্যে একান্তই দুর্লভ। মহাভারতের কাহিনিভাগ গ্রহণ করে স্বীয় কবি প্রতিভার বৈশিষ্ট্যে চরিত্র দুটিকে সজীব করে গড়ে তুলেছেন।
অনুসূয়া ও প্রিয়ংবদা উভয়ে আশ্রম পরিবেশে প্রতিপালিত। উভয়ে শকুন্তলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। শকুন্তলার সুখসৌন্দর্য বৃদ্ধি করাই এদের একমাত্র কাব্য। শকুন্তলার সুখের জন্যই তারা সদা ব্যস্ত। শকুন্তলার সব কাজেই তারা তাকে সাহায্য করেছে।
রাজার সঙ্গে শকুন্তলার প্রণয় ব্যাপারে তাদের আগ্রহ অপরিসীম। তাই দুর্বাসার শাপে শকুন্তলাকে অভিশপ্ত দেখে অত্যন্ত ভয় বিহ্বল হয়ে পড়েছেন এবং পদতলে পতিত হয়ে মুনিকে শান্ত করেছেন। তাদের কাছে শকুন্তলা এতই প্রিয় যে শাপের কথা জেনেও শকুন্তলাকে জানায়নি, পাছে শকুন্তলার মনে রাজার সম্বন্ধে বিরূপ মনোভাব জাগ্রত হয়।
উভয় চরিত্রের মধ্যে সাদৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। অনুসূয়া চিন্তাশীল ধীর, স্থির, গম্ভীর প্রকৃতি, সংযতবাক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। প্রিয়ংবদা লঘুচিত্ত, চপল, বাকপটু ও কৌতুক প্রিয় হাস্য পরিহাস চতুর। গান্ধবর্মতে উভয়ের মিলন ঘটিয়ে প্রিয়ংবদা যেখানে নিশ্চিন্ত ও আনন্দিত, অনুসূয়া সেখানে সখীর ভবিষ্যৎ রাজগৃহে আদর যত্নের চিন্তায় ব্যাকুল প্রিয়ংবদা সেখানে চিন্তা করছেন যে, তাত কণ্ব এই বিবাহে অনুমোদন করবেন কিনা, সেখানে অনুসূয়া বিবাহের কথা প্রতিপাদন করে কণ্ঠের অনুমোদন পাওয়া স্বাভাবিক বলে যুক্তি দেখিয়েছেন।
দুটি চরিত্র সৃষ্টির যথেষ্ট নাটকীয় তাৎপর্য রয়েছে। শকুন্তলা চরিত্রকে পূর্ণতা প্রদানের জন্য এই চরিত্র সৃষ্টি। এরা না থাকলে শকুন্তলার একার পক্ষে স্বীয় প্রণয় নিবেদন করা অসম্ভব ও হাস্যকর হয়ে পড়ত এবং প্রেমালাপ পরিচালনা দুর্বহ হয়ে উঠত।
রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন সাহিত্য গ্রন্থ ‘কাব্যের উপেক্ষিতা’ প্রবন্ধে এই দুই চরিত্রকে কাব্যের উপেক্ষিত রূপে অভিহিত করে বলেছেন—“একা শকুন্তলা শকুন্তলার এক তৃতীয়াংশ, শকুন্তলার অধিকাংশই অনুসূয়া এবং প্রিয়ংবদা, শকুন্তলাই সর্বাপেক্ষা অল্প। বারো আনা প্রেমালাপ তো তাহারাই সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়া দিল।……রাজসভায় দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে যে চিনিতে পারেন নাই তাহার প্রধান কারণ সঙ্গে অনুসূয়া-প্রিয়ংবদা ছিল না।
কুমারসম্ভব : কালিদাসের দুটি মহাকাব্য ‘রঘুবংশ’ ও ‘কুমার সম্ভব। দুখানি কাব্যই কালিদাসের প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করেছে। সংস্কৃত কাব্য ভাণ্ডারে এ ধরনের মহার্ঘ রত্ন খুব কমই আছে।
তারকাসুরের অত্যাচার পর্যুদস্ত দেবতাদের সৈনাপত্য করবার জন্য শিবের ঔরসে পার্বতীর গর্ভে কুমার কার্তিকের জন্ম সম্ভাবনা ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যের প্রধান বর্ণনীয় বিষয়।
এই কাব্যের ১৭টি সর্গ। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন ১৮টি সর্গ। প্রথম ৮টি কালিদাসের রচনা, বাকি অংশ অন্য কোনো লেখকের সংযোজনা। সে যাইহোক এই কাব্য শুরু হয়েছে নগাধিরাজ হিমালয়ে বর্ণনা দিয়ে এবং কাব্যের তৃতীয় সর্গ খুব উল্লেখযোগ্য। এই সর্গে পুরাণ প্রসিদ্ধ মদন ভস্মের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ভাষার মাধুর্যে বর্ণনার চাতুর্যে এবং ঘটনার চমৎকারিত্বে এই সর্গটি এক বিস্ময়। হিমালয় এই কাব্যে জড় পাথরমাত্র নয়। তিনি চেতন গুণসম্পন্ন। তিনি উদার মহৎ ও অতিথি বৎসল। অতুলনীয় তার ঐশ্বর্য, প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যও অপরিসীম।
‘কুমারসম্ভব’ কাব্যে যে বিদেহী প্রেমের স্বরূপ অঙ্কিত রয়েছে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। প্রাচীন সাহিত্যে ‘কুমারসম্ভব’ ও ‘শকুন্তলা’ প্রবন্ধটি তার বড়ো প্রমাণ।
এই কাব্যে নিসর্গ বর্ণনা অনুপম। বিশেষ করে অষ্টম সর্গে প্রকৃতি বর্ণনা, মানবজীবনের কামনা বাসনাকে প্রকৃতির দর্পণে প্রতিবিম্বিত কর প্রেম ও সৌন্দর্যের কবি কালিদাস এক অপূর্ব নিসর্গ দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন।
কালিদাসের বর্ণনা এখানে অলংকৃত ও কাব্যগুণ সমৃদ্ধ। পৌরাণিক বিশ্বাস ও সংস্কারকে ক্ষুণ্ন না করেও কালিদাস তাঁর কাব্যে এক আশ্চর্য স্বপ্নমায়া বিস্তার করেছেন।
প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, কল্পনার মৌলিকতা এবং মননধর্মীতা এই কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর প্রায় প্রতিটি শ্লোক যেন এক একটি নিটোল মুক্তা।
রস পরিণামের ওপর কাব্যের উৎকর্ষ নির্ভর করে। এই কাব্যে শান্ত বীর, করুণ, শৃঙ্গাররস্য ? প্রভৃতি রসের প্রবাহ অবারিত ভাবে প্রবাহিত হয়েছে।
‘কুমারসম্ভব’-এর কাহিনি কালিদাসের মৌলিক সৃষ্টি নয়। ‘শিবপুরাণ’, ‘পদ্মপুরাণ’ প্রভৃতিতে এই কাহিনির বর্ণনা পাওয়া যায় তবে বিষয়ের উপস্থাপনায় ও কাব্যগুণে কালিদাসের মৌলিকতা প্রশংসনীয়।
রবীন্দ্রনাথ নানাভাবে ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তবে প্রমাণ রয়েছে ‘চৈতালী’ কাব্যে, ‘কুমারসম্ভব’ ও ‘শকুন্তলা’ প্রবন্ধে, ‘তপোবন’ প্রবন্ধে, ‘চিত্রা’ কাব্যের ‘বিজয়িনী’ কবিতায়।
মেঘদূত : কবি কালিদাসের সর্বাধিক পরিচিত এবং সর্বাপেক্ষা সমাদৃত রচনা মেঘদূত সাহিত্যের নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণিতে ফেলা সম্ভব নয়। এটিকে খণ্ড করা বা যথার্থে গীতিকাব্য বলা যেতে পারে। সমগ্র প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য এমন বস্তুভারহীন, আত্মভাবনাময় রচনা মেঘদূতের আগে একটিও রচিত হয়নি।
শতাধিক শ্লোক সমন্বিত মেঘদূত কাব্যটিকে দুটি পর্বে বিভক্ত করা যায়। কাব্যের প্রথম ৫টি শ্লোক কবি নায়কের অবস্থানটি বর্ণনা করেছেন এবং পরবর্তী অংশটি নায়কের উক্তিতে বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। স্বাধিকার প্রমত্ত এক যক্ষ প্রভু কুবেরের অভিশাপে এক বৎসরের জন্য রামগিরি পবর্তে নির্বাসিত হয়েছিলেন। আট মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর ১ আষাঢ়ে আকাশে ভাসমান মেঘখণ্ড দর্শনে তার বিরহ হৃদয় প্রিয়সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ব্যাকুলতার প্রাবল্যে যক্ষ ভুলে যান জড়চেতনের পার্থক্য। তিনি মেঘকে দূতরূপে কামনা করে তাকে তার বিরহী প্রিয়া, যে অলকাপুরীতে অবস্থান করছেন, তার কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। মেঘের যাত্রাপথ দুটি বিভক্ত-পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ। প্রথম পর্বে বর্ণিত হয়েছে অলকাপুরীতে যক্ষবধূর অবস্থান বর্ণনা।
মেঘদূত কাব্যের কাহিনি বলতে কিছুই নেই, যা আছে তা শুধুমাত্র চিত্রময় বর্ণনা। রামগিরি থেকে যাত্রা শুরু করে মেঘখণ্ড কীভাবে আম্রকূট পর্বত, রেবানদী, দর্শন দেশের রাজনীতি, বিদিশ, তারপর উজ্জয়িনী, গম্ভীরা, দশপুর নগর, কৈলাস পর্বতের পথ পার হয়ে অবশেষে অলকাপুরীতে পৌঁছাবে, তারই পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্রময় বর্ণনা পূর্বমেঘখণ্ডে পাওয়া যায়। এরপরেই উত্তরমেঘখণ্ডে অলকাপুরীর অপূর্ব সৌন্দর্য বর্ণনা তারপর মেঘের সঙ্গে যক্ষাপ্রিয়ার দর্শন। সেখানে মেঘ বিরহী যক্ষপ্রিয়াকে জানিয়েছে— “শেষের মাজান, গময় চতুরো লোচনে মিলয়িতা।” অর্থাৎ আর চারটি মাস তুমি চোখ বুঝিয়ে কাটিয়ে দাও, তারপর প্রভুশাপের অবসানে তোমার দয়িত তোমার কাছে ফিরে আসবে।
প্রেম ও প্রকৃতি চেতনার সার্থক সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনবদ্য মেঘদূত কথাটি। সমগ্র প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে এটিই একমাত্র বিরহমূলক কাব্য। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ একটু ভিন্ন দৃষ্টি কোণ থেকে এই কাব্যটির বিচার করেছেন। তিনি মনে করেন, এখানে শুধু যক্ষ ও যক্ষপ্রিয়া—এই দুই নর-নারীর বিরহ চেতন বর্ণিত হয়নি। নিখিল বিশ্ব মানবের বিরহের বর্ণনাই এখানে প্রধান উপজীব্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন, “কেবল অতীত বর্ণনা নহে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রহিয়াছে অতল স্পর্শ বিরহ। আমরা যাহার সহিত মিলিত হইতে চাহি সে মানস সরোবরের অগম্যতীরে বাস নেই।” মেঘদূত কাব্যের জনপ্রিয়তা আজও অম্লান।
চারুদত্ত : শূদ্রক রচিত ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকের নায়ক পল্লি-নিবাসী ব্রাহ্মণ যুবক চারুদত্ত। ব্যবসায়ে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, কিন্তু দান-ধ্যান করে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে পড়েন। তাঁর সংসারে আছেন স্ত্রী ধৃত এবং বালক পুত্র রোহসেন। উজ্জয়িনীর সেরা নটী তথা গণিকা বসন্তসেনা চরুদত্তের গুণে মুগ্ধ হন। একদিন কামদেবের মন্দির থেকে প্রত্যাবর্তন কালে রাজ শ্যালক দুবৃত্ত শকারের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে বসন্তসেনা চারুদত্তের গৃহে আশ্রয় নেন। চারুদত্ত অতিশয় ভদ্রভাবে তাকে গ্রহণ করেন এবং অন্ধকার নামলে নিজে তাঁকে স্বগৃহে পৌঁছে দেন। চারুদত্তের গৃহ থেকে যাওয়ার পূর্বে বসন্তসেনা তাঁর অলংকারগুলি চারুদত্তের কাছে গচ্ছিত রেখে যান। কিন্তু সেই রাত্রেই সেগুলি চুরি হয়। অবশ্য এই চুরির কারণ বসন্তসেনার কাছে অজ্ঞাত ছিল না। এদিকে চারুদত্ত তাঁর বন্ধুর রত্ন হার বন্ধু মৈত্রেয়র হাত দিয়ে বসন্তসেনার কাছে পাঠান। মৈত্রেয় বসন্তসেনাকে জানাল, চারুদত্ত পাশাখেলায় বসন্তসেনার অলংকারগুলি খুইয়েছেন। তাই এই রত্ন হারটি পাঠিয়েছেন। বসন্তসেনা সব বুঝতে পারলেও রত্ন হারটি গ্রহণ করেন এবং চারুদত্তের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়। এরপর একদিন বসন্তসেনা শকারের দ্বারা আক্রান্ত হন। বসন্তসেনা কিছুক্ষণের জন্য হতচেতন হয়ে পড়লে শকার তাকে মৃত ভেবে পথে ফেলে দিয়ে যান এবং চারুদত্তের নামে হত্যার অভিযোগ আনেন। বিচারে চারুদত্তের মৃত্যুদণ্ড হয়। বধ্যভূমিতে যেদিন চারুদত্তের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, সেদিন তারই অন্যতম ভৃত্য সংবাহক বসন্তসেনার কাছে উপস্থিত হন। এই সংবাহকই মৃতপ্রায় বসন্তসেনাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। বসন্তসেনার উপস্থিতিতে চারুদত্তের মুক্তি ঘটে এবং শকারের প্রাণদণ্ড হয়। রাজ্য চারুদত্তের চারিত্রিক দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বেনা নদীর তীরে একটি বিস্তীর্ণ রাজ্য খণ্ড দান করেন। চারুদত্ত বসন্তসেনাকে তাঁর বধূরূপে স্বীকার করে নেন।
মৃচ্ছকটিকে নাটকে নায়ক চরিত্র চারুদত্ত হলেও এই নামে ভাসের রচিত একটি নাটক রয়েছে। উভয় নাটকের চারুদত্তের চরিত্র পরিকল্পনা প্রায় একই ধরনের। বিষয়টি কে কার কাছ থেকে ধার করেছিলেন, সে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। তবে চারিত্রিক দৃঢ়তায়, প্রেমের মহনীয়তায় এবং হৃদয়ের উদরতায় শুদ্রকের চারুদত্ত চরিত্রটি ভাসের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল।
মালবিকাগ্নি মিত্র : কালিদাসের প্রথম জীবনের নাটক মালবিকাগ্নিমিত্র এমনটাই ধারণা পণ্ডিতদের। বিদিশার রাজা অগ্নিমিত্র ও বিদর্ভ রাজকন্যা মালবিকার প্রণয় অবলম্বনে মোট পঞ্চাঙ্কে রচিত নাটক হল মালবিকাগ্নিমিত্র। এ নাটকে দ্রুতলয়ে সংঘটিত জীবনচিত্রে বাস্তবরস সৃজনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। রঙে-রসে-বৈচিত্র্যে নাটকটিকে পূর্ণ করে তুলেছেন। নাটকের চরিত্র চিত্রণে সবক্ষেত্রেই অসামান্য দক্ষতার পরিচয় না মিললেও কোনো কোনো চরিত্রাঙ্কনে তার শকুন্তলার পরিচয় মেলে। পঞ্চমত, রাজা প্রজাদের ছবি, অন্তঃপুরের বিলাস বৈভবের চিত্রাঙ্কনের ক্ষেত্রে কালিদাস যথার্থই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
মৃচ্ছকটিক : সংস্কৃত সাহিত্যের এক অন্যতম দিকপাল নাট্যকার শূদ্রকের রচিত মৃচ্ছকটিক নাটকটি সংস্কৃত সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এই নাটক শূদ্রক সবরকম অলৌকিতা পরিহার করে জীবনধর্মী বাস্তবসম্মত একটি কাহিনি মৃদুকঠিন নাটকে পরিবেশন করেন। উজ্জয়িনীর অধিবাসী চারু দত্ত ও করে বিলাসিনী বসন্তসেনের প্রণয় এক মুখ্য উপজীব্য। শুধু সংস্কৃত সাহিত্যে নয়, সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে মৃচ্ছকটিক এক অসামান্য সৃষ্টি। শূদ্রক এ নাটকে যে বাস্তবতার ও সমাজ মনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন সংস্কৃত সাহিত্যে তেমন নিদর্শন কমই আছে। যেমন এ নাটকে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা, বিচার ব্যবস্থার তৎকালীন দাস প্রথার বিররণ ইত্যাদির স্পষ্ট পরিচয় মেলে। এছাড়াও বলা যায় মৃচ্ছকটিক রাজা রানি প্রধান নাটক নয়, সাধারণ মানুষ গণিকা, বণিক, চোর, শ্রমণ, চণ্ডাল, জুয়াড়ি ইত্যাদি বহু সাধারণ চরিত্র এ নাটকে ফুটে উঠেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য—‘বসন্ত সেনা’ চরিত্রটি এক গণিকাকে নায়িকার আসনে বসিয়ে শূদ্রক বৈপ্লবিক চিন্তা-র পরিচয় দিয়েছেন। দেহ ব্যবসায়ী হয়েও প্রেমের আলোয় তিনি অম্লান। তাই বলা যায় বহুমাত্রিক বাস্তবতার ছাপ রেখে মৃচ্ছকটিক সংস্কৃত সাহিত্যের একক পথিক।
মালতী মাধব : মালতী মাধব-কে বহু সমালোচক ভবভূতি-র প্রথম নাটক হিসাবে গণ্য করেন। মালতী মাধব সংস্কৃত সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য প্রকরণ। প্রকরণের দাবি মান্য করেই ভবভূতি এর কাহিনি পরিকল্পনা মৌলিক দাবি করলেও, এই দাবি সর্বাংশে সত্য নয়। গুণাঢ্যের ‘বৃহৎকথা’-য় এ কাহিনির বীজ মেলে। তবে কাহিনি পরিকল্পনা করতে গিয়ে লেখক ওই কাহিনি থেকে বহু দূরে সরে এসেছেন, ফলে মৌলিকতার ছাপ কাহিনিতে ফুটে উঠেছে। পদ্মাবতীর রাজমন্ত্রী ভূরিবসু-র কন্যা মালতী ও বিদর্ভ রাজমন্ত্রী দেবরাতের পুত্র মাধবের পরস্পরের সংঘর্ষ ও প্রণয় কাহিনিই এই নাটকের উপজীব্য বিষয়। এ নাটকের অভিনবত্ব লুক্কায়িত আছে প্রেমে কাহিনি ও রসসৃজনের মধ্যে। নাটকে মধ্যবিত্ত সমাজের একটি ছাত্রের সাথে ধনী দুহিতার প্রণয় দেখানো হয়েছে সে যুগের পক্ষে এ কাহিনি খুবই আধুনিক। এছাড়াও ভয়ানক ও বীভৎস রস-সৃজনে ভবভূতির দক্ষতা যা মহাশ্মশনের বর্ণনায় চরমে পৌঁছেছে তা নাটকটিকে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে।
Leave a comment