স্বাবলম্বন 

অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজের চেষ্টা, শক্তি ও কর্ম দিয়ে জীবন পরিচালনার নাম স্বাবলম্বন । এর অন্য নাম আত্মনির্ভরশীলতা বা আত্মনির্ভরতা। স্বাবলম্বনের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রম । গভীর আত্মবিশ্বাসই মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের সর্বোত্তম পন্থা স্বাবলম্বন । স্বাবলম্বী মানুষকে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় না। বিশ্বের স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিদের অনেকেই ছিলেন স্বাবলম্বী। তারা নিজের প্রয়ােজন নিজের চেষ্টা ও কর্ম দিয়ে মেটাতেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (স.) নিজেই মেষ ও ছাগল চরাতেন। দিল্লির বাদশা আওরঙ্গজেব নিজ হাতে টুপি সেলাই করে এবং কুরআন শরিফ নকল করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যারা অলস ও কর্মভীরু তারা স্বাবলম্বী হতে পারে না। অলসতা স্বাবলম্বনের প্রধান অন্তরায়। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বুদ্ধি দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন এবং কাজ করার উপযােগী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। এসবের সদ্ব্যবহার করে মানুষ সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারে। স্বাবলম্বী ব্যক্তি অন্যের সাহায্যের আশায় বসে থাকে না, নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়েই নিজের প্রয়ােজন। | মেটায়। স্বাবলম্বনের শিক্ষা প্রধানত পরিবার থেকেই শুরু হয়। শৈশবে পিতামাতার স্বনির্ভর জীবনযাপন দেখে শিশুরা পর্যায়ক্রমে স্বাবলম্বী হতে শেখে। ছাত্রজীবনেও স্বাবলম্বিতা শিক্ষা করা যায় । যে ছাত্র বা ছাত্রী কঠোর পরিশ্রম ও গভীর মনােযােগের সাথে পাঠ অনুশীলন করে তার কখনাে প্রাইভেট পড়ার প্রয়ােজন হয় না। অনেক শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে লেখাপড়া করে বৃত্তি অর্জন করে এবং বৃত্তির টাকা দিয়েই লেখাপড়ার খরচ মেটায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পরীক্ষায় ভালাে ফললাভ করে যে বৃত্তি পেতেন তা দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত স্বাবলম্বনের প্রয়ােজন রয়েছে। যে জাতি স্বাবলম্বী হতে পারে না, সে জাতি চিরকাল পেছনে পড়ে থাকে। কালক্রমে সে জাতি নিশ্চিহ্ন ও ধ্বংস হয়ে যায়। তাই সুন্দর, সচ্ছল ও সখী জীবনের জন্য স্বাবলম্বন প্রয়ােজন। স্বাবলম্বন জীবনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।