জনসংখ্যা সমস্যা

জনসংখ্যা সমস্যা আমাদের জাতীয় জীবনের এক ভয়ংকর সমস্যা। আমাদের দেশের সম্পদ না বাড়লেও জনসংখ্যা বেড়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ফলে আমাদের জীবনযাত্রার মান প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের দুর্দশা ও দারিদ্র্যের জন্য অধিক জনসংখ্যাই দায়ী। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের কৃষিজমির পরিমাণ কমে আসছে এবং দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিজমি। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে বসতবাড়ির সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেখা যায় বসতবাড়ির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩০টি। বাড়তি মানুষ তৈরি করছে নতুন নতুন শহর এবং পুরনাে শহরগুলাের আয়তন বর্ধিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলাের মধ্যে রয়েছে অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ইত্যাদি। দেশের জনগণকে একটি শিক্ষিত জনগােষ্ঠীতে পরিণত করা গেলে এবং তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারলে অবশ্যই জনসংখ্যা। বৃদ্ধির গতি হ্রাস করা সম্ভব হবে। দেশের জনগণ শিক্ষিত হলে তারা দেশ ও জাতির সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। আইন প্রণয়ন করে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ বন্ধ করতে হবে। সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য ইতােমধ্যে আইন প্রণয়ন করলেও আইনের কঠোর প্রয়ােগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে হচ্ছে না। বহুবিবাহ এখনাে অব্যাহত গতিতে চলছে। আইন করে তা বন্ধ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি রােধ করার লক্ষ্যে বয়স্ক শিক্ষা ও গণশিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে । আশার কথা, সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন। ধীরে ধীরে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারও ইতােমধ্যে আগের চেয়ে অনেক কমেছে। বর্তমান সরকার দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির উর্ধ্বগতি রােধ করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, দেশের শিক্ষিত ও সমাজ-সচেতন নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে।