কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৮৭০) সংগঠক, সাংবাদিক, লেখক, সমাজকর্মী। কলকাতার এক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী, পরিবারে তার জন্ম। তার পিতামহ শান্তিরাম সিংহ ছিলেন জোড়াসাঁকো জমিদারির দেওয়ান। তিনিই সিংহ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। অন্যান্য ধনী ও অভিজাত পরিবারের সন্তানদের মতো কালীপ্রসন্নও ইংরেজ শিক্ষক এবং দেশীয় খ্যাতনামা পণ্ডিতদের নিকট বাড়িতে শিক্ষালাভ করেন।

কালীপ্রসন্ন ছিলেন বিদ্বান, বিদ্যোৎসাহী, স্বদেশ ও স্বজাতিবৎসল। নিজের তেরো বছর বয়সে বাংলা ভাষার অনুশীলনের জন্য তিনি বিদ্যোৎসাহিনী সভার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ সভা পরবর্তীকালে কবি মধুসূদন ও নীলদর্পণ প্রকাশক জেমস লংকে সংবর্ধিত করে ঐতিহাসিক কীর্তি অর্জন করেছিলেন। সর্বস্ব পণ করে অষ্টাদশ পর্ব মহাভারতের গদ্যানুবাদ করিয়ে কালীপ্রসন্ন বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন। যে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতমণ্ডলী এ মূলানুবাদ কর্মে ব্রতী হয়েছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আট নয় বছরের একান্ত পরিশ্রমের পরে দুই খণ্ডে এ মহাগ্রন্থের প্রকাশ সম্ভব হয়। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। দ্বিতীয় খণ্ডের প্রকাশকাল ১৮৬৬। বস্তুত হুতোম প্যাঁচার নকশা তার শ্রেষ্ঠ মৌলিক রচনা। এতে কলকাতার সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এবং কলকাতার কথ্য ভাষাকে প্রথম সাহিত্যে স্থান দেওয়া হয়েছে। বাংলা গদ্যের উন্নয়নে হুতোম প্যাঁচার নকশা মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। সতেরো খণ্ড সংস্কৃত মহাভারতের বাংলা গদ্যানুবাদও তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। এটি বাংলা সাহিত্যেরও একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, কালীপ্রসন্ন মাত্র ত্রিশ বছরের জীবনে তার এসব কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৮৭০ সালের ২৪ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।

 

Rate this post