প্রমথ চৌধুরী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ

উত্তর: প্রখ্যাত লেখক প্রমথ চৌধুরী যশোর জেলায় ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগস্ট তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দুর্গাদাস চৌধুরী পাবনা জেলার হরিপুর গ্রামের জমিদার বংশের সন্তান ছিলেন। প্রমথ চৌধুরীর পিতা সে আমলের একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তার শৈশব ও কৈশোরের কিছুকাল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে অতিবাহিত হয়। তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এনট্রান্স এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দর্শন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে বি. এ. পাস করেন। তিনি ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে এসে কলকাতা হাইকোর্টে স্বল্প সময়ের জন্য যোগদান করেন। তবে তিনি আইন ব্যবসায়ে মনোযোগ দিতে পারেননি। তিনি কিছুদিন আইন কলেজে অধ্যাপনা করেন। কলকাতায় ঠাকুর এস্টেটে ম্যানেজার হিসেবেও কিছুকাল কাজ করেন। প্রমথ চৌধুরী ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী’ পদক লাভ করেন।

তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর তারিখে শান্তিনিকেতনে পরলোকগমন করেন।

প্রমথ চৌধুরী পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে পাশ্চাত্য সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ছাত্র জীবনেই সংস্কৃত, ফরাসি ও ইতালি ভাষায় যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যে তার স্বচ্ছন্দ অধিকার ছিল। তার সাহিত্য রচনার পিছনে ফরাসি সাহিত্যের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি বীরবল আখ্যা গ্রহণ করে সাহিত্য সাধনা করেছিলেন। বাংলা গদ্যরীতির উৎকর্ষ সাধনে প্রমথ চৌধুরীর বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানের কথ্য ভাষারীতি সাহিত্যে যে অপ্রতিরোধ্য স্থান দখল করে নিয়েছে তার পিছনে প্রমথ চৌধুরীর অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ‘সবুজপত্র’ নামে একটি বিখ্যাত সাহিত্য মাসিক সম্পাদনার মাধ্যমে প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে কথ্যরীতি প্রবর্তনের চেষ্টা চালান। তিনি ছিলেন ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও সমালোচক। প্রমথ চৌধুরী সম্পর্কে সমালোচক ডক্টর রবীন্দ্রনাথ রায় মন্তব্য করেছেন- “বাংলা সাহিত্য Formal ও Familiar দুই ধরনের রচনার ধারাই পাশাপাশি চলছিল। রবীন্দ্রযুগে শেষোক্ত ধারাটি বৈচিত্র্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। এ ধারায় নতুন প্রতিশ্রুতি প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে। প্রত্নতত্ত্ব থেকে সমসাময়িক রাজনীতি পর্যন্ত এমন কোন বিষয় নেই যা তার প্রবন্ধে স্থান পায়নি।……….তার স্বরে কোনো কিছু প্রমাণ করা যেমন তার উদ্দেশ্য ছিল না। তেমনি আত্মময় মৃদু ভাষণও তার অধিগত ছিল না। তার প্রবন্ধগুলো ছিল বৈঠকি আলাপি ধরনের।”

প্রমথ চৌধুরীর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ হলো বীরবলের হালখাতা, দু-ইয়ারী, ঘরে বাইরে, প্রবন্ধ সংগ্রহ ইত্যাদি। গল্প চার ইয়ারী কথা, নীললোহিত, সেকালের গল্প, গল্প সংগ্রহ ইত্যাদি। কবিতা সনেট পঞ্চাশৎ।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।

Rate this post