শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ উপন্যাস অবলম্বনে মৃণাল চরিত্রের পরিচয়

রবীন্দ্রনাথের সময়েই শরৎচন্দ্রের ঔপন্যাসিক প্রতিভা বিকশিত হয়েছিল। পারিবারিক জীবনের পটভূমিয়ে স্নেহপ্রেমের জটিলতা ও বঙ্কিম গতির স্বাচ্ছ চিত্র অঙ্কনে রবীন্দ্রনাথের মতো তিনিও গভীর পর্যবেক্ষণশীল কথাসাহিত্যিক। বরং বলা যেতে পারে, শরৎ সাহিত্য আরো অনেক বেশি জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিদিনের চালচিত্র। সমালোচক মোহিতলাল মজুমদারের। মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, “তিনি জীবনকে বিস্তৃত করিয়া দেখেন নাই, কিন্তু যেটুকু দেখিয়াছেন গভীর করিয়া দেখিয়াছেন। সে গভীরতা কল্পনার নয়, যতটা অনুভূতির। এই সহানুভূতি যেখানে যতটুকু পৌঁছিতে পারিয়াছে ততটুকুই তাঁহার কল্পনার প্রসার। তিনি যাহা দেখিয়াছেন বিনা সংকোচে তাহার সবটুকু প্রকাশ করিয়াছেন।”

শরৎচন্দ্র পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ ক’টি উপন্যাস লিখেছেন। তার মধ্যে অন্যতম গৃহদাহ
উপন্যাস। একটি ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি নির্ভর এই উপন্যাসে নর নারীর জীবন শুধু নয়, মনোবিশ্লেষণের প্রতিও ছিলেন গভীর অনুভূতিপ্রবণ। বাঙালি পরিবারের প্রতিদিনের ঘরসংসার, প্রেম, বিবাহ, সমাজ ও সামাজিক বিশ্বাস-অবিশ্বাস এ উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে ফুটে উঠেছে ছবির মতো। মহিম ও সুরেশ দুই বন্ধু। একসাথে উঠাবসা থাকলেও চিন্তা চেতনায় দু’জন দুই মেরুর বাসিন্দা। মহিম সংস্কারবাদী শান্ত সহজ নির্দ্বান্দ্বিক, সুরেশ সম্পূর্ণ বিপরীত। কিন্তু তাতেও তাদের সম্পর্কে ছিল না টানাপোড়েন। উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র অচলাই দু’জনের মধ্যে প্রথম পার্থক্য উদঘাটন করেছে। দোলাচলতায় অস্থির অচলা কোন সিদ্ধান্তেই অচলা থাকতে পারেনি। এই উপন্যাসের আরেকজন নারী চরিত্র মৃণাল। অপ্রধান চরিত্র হলেও মৃণাল পুরো ঘটনার মধ্যে গভীর স্থান দখল করে আছে। বাংলার চিরন্তন নারীর পরিচয় নিয়ে মৃণাল উপন্যাসে উপস্থিত। ধৈর্য, সহ্য, সংযমে মৃণাল অচলার সম্পূর্ণ বিপরীত। মৃণাল মহিমকে ভালোবাসলেও তার বিবাহিত জীবনে বয়স্ক স্বামীর প্রতিও সে যথেষ্ট দায়িত্বশীল। মৃণালের সরল রসিকতার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে মানুষের অন্তরের চির চাওয়া আর বাইরের মেনে নেওয়ার পার্থক্য। অচলা মৃণালকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি কারণ মৃণাল সহজ, স্বাভাবিক, অচলা স্বাভাবিকের ঊর্ধ্বে।

মৃণাল আমাদের পরিচিত। সমাজে সংসারে সে লক্ষ্মী। অসীম ধৈর্য আর সহিষ্ণুতা মৃণালকে পাঠকের কাছে আপনজন করে তুলেছে। ভাগ্যবিড়ম্বিত বলে মৃণালের কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তু পাঠকের সেজন্য দরদ রয়েছে। এখানেই মৃণালের সার্থকতা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।

Rate this post