পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ(Parental Maintenance) আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করুন।

ভরণ-পোষণ বলতে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-২ এ খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে  আমরা বলতে পারি যে, ভরণ-পোষণের ন্যূনতম মানদণ্ড হবে সন্তানের সামর্থ্য ও পিতা মাতার যোক্তিক প্রয়োজন সমন্বয়ের মাধ্যমের তাদের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমান(Good enough life)।

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের বিধান : 

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ সম্পর্কে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩(The Parents’ Maintenance Act, 2013) আইনে যেসকল বিধান বর্ণিত হয়েছে নিচে সেগুলো তুলতে ধরা হলো :

(১) প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে।

  

(২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করবে।

  

(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে।

  

(৪) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তার, বা ক্ষেত্রমত, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না।

  

(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে।

  

(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হতে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তার, বা ক্ষেত্রমত, তাদের সাথে  সাক্ষাত করতে হবে।

  

(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সাথে  বসবাস না করে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তার দৈনন্দিন আয়-রোজগার, বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমত, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করবে।(পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-৩)

উল্লেখ্য, পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী, নানা-নানীর ভরণ-পোষণের কথাও এই আইনে বলা আছে। যেমন-

প্রত্যেক সন্তান তার—

(ক) পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে; এবং

(খ) মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে—

 

ধারা ৩ এ বর্ণিত ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য থাকবে এবং এই ভরণ পোষণ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ হিসাবে গণ্য হবে।

(পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-৪)

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করার দণ্ড

(১) কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে; বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

 

(২) কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় ব্যক্তি—

 

(ক) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করলে; বা

 

(খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করলে—

 

তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে মর্মে গন্য করা হবে এবং  উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

(পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-৫)

উল্লেখ্য, এই আইনের অধীন অপরাধ আমলযোগ্য (cognizable), জামিনযোগ্য (bailable) ও আপোষযোগ্য (compoundable)।

এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ ১ম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য। তবে কোন আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত আমলে নেওয়ার বিধান নেই।

(পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-৬ ও ৭)

এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত আইনের অধীন প্রাপ্ত অভিযোগ আপোষ-নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার, কিংবা ক্ষেত্রমত, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলর, কিংবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করতে পারবে।

 

আবার, উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন অভিযোগ আপোষ-নিষ্পত্তির জন্য প্রেরিত হলে, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার বা কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করে, ইহা নিষ্পত্তি করবে এবং এইরূপে নিষ্পত্তিকৃত অভিযোগ উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বলে গণ্য হবে।

(পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ আইনের ধারা-৮)

যাহোক, পিতা-মাতার অধিকারসমূহ সম্পর্কে প্রত্যেক সন্তান সচেতন হতে হবে এবং পিতামাতার ভরণ পোষণ বিধিমালা-২০১৭ এর খসড়া যেন আলোর মুখ দেখে তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে তা বিশ্বাস করি।

Rate this post