প্রশ্নঃ জড়ের প্রকৃতি কী?

অথবা, জড়ের বৈশিষ্ট আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ বাহ্যিক জগতে আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাই যে, বিভিন্ন বস্তু সৃষ্টি হচ্ছে আবার ধ্বংস হচ্ছে। তাদের আকৃতি ও গঠনে অনবরতই পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু শত পরিবর্তন সত্ত্বেও আমরা মনে করি না যে, এসব বস্তুর মূল উপাদান বিনষ্ট হয়েছে। যে কাঠকে পুড়িয়ে ছাই করা হলাে বা যে পাথরকে গুঁড়িয়ে ধুলাে করে ফেলা হলাে, তার মূল উপাদান বিনষ্ট হয়নি বলেই আমরা ধারণা করি। বস্তুর এ মূল উপাদানকে বলা হয় জড়। জড় অচেতন। জড় বিস্মৃতি ও অভেদ্য। এর আরও অনেক গুণ আছে যেগুলাে বিস্মৃতি ও অভেদ্য থেকে সৃষ্টি হয়।

জড়ের প্রকৃতিঃ জড় হচ্ছে জাগতিক বস্তুর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। জড় হলাে স্থায়ী এবং এক হিসেবে সর্বব্যাপক। জাগতিক বস্তুর পরির্তন সাধিত হতে পারে, কিন্তু জড়ের কোনাে পরিবর্তন সাধিত হয় না, কেননা জড় হচ্ছে জাগতিক বস্তুর মূল উপাদান। সুতরাং বলা যায়, জাগতিক বস্তুর সব পরিবর্তনের সাথেও যা অপরিবর্তিত থাকে তাকে বলা হয় জড়। জড় বা বস্তুকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে জড়বাদ। এই জড়বাদীদের মতে, জড় থেকেই বিশ্বের সকল বস্তু, প্রাণ, মন প্রভৃতির উৎপত্তি। আবার জড়ের মধ্যেই সবকিছুর বিনাশ।

জড়বাদের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ জড়বাদীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে একাধিক যুক্তি উপস্থাপন করেন। যেমন-

(১) জড়বাদীরা প্রত্যক্ষণকেই একমাত্র প্রমাণ বলে মেনে নেন। যা প্রত্যক্ষের বিষয় নয় তার অস্তিত্ব স্বীকার করা চলে না। জড়কেই প্রত্যক্ষ করা যায়।

(২) জড়বাদ জগতের বিভিন্ন ঘটনাবলির পারস্পরিক সম্পর্ককে কার্যকারণ সম্পর্কের দ্বারাই ব্যাখ্যা করে। জড় ও গতির ক্রিয়া যান্ত্রিকভাবেই সম্পন্ন হয়। জড় ও গতির মধ্যে কোনাে উদ্দেশ্য বা আদর্শ নেই।

(৩) জড়বাদীরা শক্তির নিত্যতা নিয়মে বিশ্বাসী। জগতের বস্তগুলাের কোনাে গুণগত পার্থক্য নেই। তাদের কেবল রূপগত ও পরিমাণগত পার্থক্য আছে।

(৪) জীবন বা প্রাণের উদ্ভব জড় থেকেই। জড়ের সঙ্গে জীবনের কোনাে গুণগত পার্থক্য নেই। জড়ের তুলনায় প্রাণ জটিল।

(৫) মন বা চৈতন্য জড় থেকেই উদ্ভূত। মস্তিষ্কের কোনাে স্বাধীন চেতনা প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব নেই। জড় প্রকৃতই বস্ত।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জড়ের ধারণার অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নিষ্ক্রিয় নির্জীব ধারণা এখন সুদীর্ঘ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পদার্থবিদ্যা ও গণিতের কৃপায় আমরা শক্তির এক বিস্ময়কর রাজ্যে প্রবেশ করেছি। এ জগৎবস্তর নিষ্ক্রিয় জগৎ নয়। শক্তির প্রচণ্ড লীলানিকেতন। এ বিশ্বজগৎ এক মহা আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ বিশ্বের। যাবতীয় পরিবর্তন সেই শক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বিজ্ঞানশক্তির বাহ্যলীলা দর্শন করে বিস্মিত হয়েছে।

Rate this post