ধারা-১২ঃ বিদেশী দলিল (Foreign instrument) —এমন কোন দলিল যদি এতদুপায়ে লিখিত, প্রস্তুত বা প্রদেয় নয়, সেগুলিই বিদেশী দলিল বিবেচিত হবে।

আলােচনা

বিদেশী দলিলের যে গুণ থাকতে পারে (What features may exist in Foreig! Instruments): সুতরাং যে দলিল (ক) বাংলাদেশে লিখিত, কিন্তু বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রদেয়, অথবা (খ) বাংলাদেশের বাইরে লিখিত, অথচ বাংলাদেশে প্রদেয় সে দলিলকেই বিদেশী দলিল বলে গণ্য করা হয়। আরাে সহজ ভাষায় একটি বিদেশী বিনিময় বিল যেভাবে গঠিত হতে পারে তাহলোঃ

(১) বিলটি বাংলাদেশের বাইরে লিখিত হতে পারে এবং বাংলাদেশের বাইরে যেকোন দেশের অধিবাসী দ্বারা পরিশােধ্য ও লিখিত হতে পারে;

(২) বিলটি বাংলাদেশের বাইরে লিখিত হতে পারে এবং বাংলাদেশের বাইরে পরিশােধ্য হতে পারে বা বাংলাদেশের ভিতরে বসবাসকারী যেকোন ব্যক্তির নামে লিখিত হতে পারে;

(৩) বিলটি বাংলাদেশে লিখিত হতে পারে এবং বাংলাদেশের বাইরে পরিশােধ্য বা বাংলাদেশের বাইরের কারাে নামে লিখিত হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে পরিশােধ্য হতে পারে।

দেশী ও বিদেশী দলিলের পার্থক্যঃ দেশী দলিল ও বিদেশী দলিলের মধ্যে একটি প্রধান আইনগত পার্থক্য এই যে, দেশী দলিলের প্রত্যাখ্যান হলে তার জন্য Protest-এর প্রয়ােজন হয় না, কিন্তু বিদেশী দলিলের প্রত্যাখ্যান হলে যে দেশে উহা লিখিত বা প্রস্তুত সে দেশের আইন অনুসারে প্রয়ােজনবােধে উক্ত দলিলের জন্য Profest-এর প্রয়ােজন হতে পারে। এছাড়া এতদুভয়ের আরাে দেখা যায় যে-

(ক) দেশী দলিল যেকোন সময় প্রস্তুত করা যায়। কিন্তু, বিদেশী দলিল পরিশােধর পূর্বে মেয়াদ হিসেবে কিছু সময় মঞ্জুর করতে হয়।

(খ) দেশী দলিলে স্ট্যাম্প লাগানাে হয়, কিন্তু বিদেশী দলিলে ষ্ট্যাম্প লাগে না।

(গ) দেশী দলিল ১ কপি করলেই চলে, কিন্তু বিদেশী দলিল নূন্যতম ৩ কপি করতে হয়।

(ঘ) প্রস্তুতকালে দেশী দলিলের পরিশােধের তারিখ বর্ণিত থাকে। কিন্তু বিদেশী দলিলে স্বীকৃতির সময় পরিশােধের তারিখ নির্ধারিত হয়।

বিদেশী দলিলের মাশুল (Duty in Foreign Instruments): বিনিময় বিল এবং অঙ্গীকারপত্র বাংলাদেশে পরিশােধিত, হস্তান্তরিত অথবা কার্যকরী হলে (acted upon) এবং অন্যান্য দলিলাদি যখন বাংলাদেশে অবস্থিত কোন সম্পত্তি সম্পকীয় অথবা বাংলাদেশে কিছু করার সাথে সম্পর্কীয় হয় সেক্ষেত্রে। এসব বিনিময় বিল ও অঙ্গীকারপত্র ষ্ট্যাম্প আইনের আওতায় মাশুলযােগ্য হয়, যদিও বাংলাদেশের বাহিরে কোন স্থানে সম্পাদিত দলিলাদি এ শুল্ক হতে বাদ পড়ে।

আবার ষ্ট্যাম্প আইনের বিধানুযায়ী একটি দলিল যদিও বাংলাদেশের বাইরে সম্পাদিত হয়েছে এবং যদি সে দলিল বাংলাদেশে বিদ্যমান কোন স্থাবর সম্পত্তি সম্পৰ্কীয় হয়, সেক্ষেত্রে এরূপ দলিলে ষ্ট্যাম্প শুল্ক প্রদেয় হবে [AIR 1928 Patna. 134]। যেখানে কোন দলিল বাংলাদেশে সম্পাদিত হয় এবং সে দলিল বাংলাদেশে অবস্থিত কোন সম্পত্তি সম্পর্কীয় অথবা বাংলাদেশে অথবা বাংলাদেশের বাহিরে কোন জিনিসভিত্তিক করা হয়েছে অথবা করা হবে, (উহাতে কিছু আসে যায় না)-এ প্রকার দলিলে ষ্ট্যাম্প শুল্ক প্রদেয় হবে। একটি দলিল বাংলাদেশের বাহিরে সম্পাদিত কিন্তু সে দলিল বাংলাদেশে অবস্থিত কোন সম্পত্তি সম্পৰ্কীয় নয় [2 Cal. 87] অথবা বাংলাদেশে কোন বিষয়বস্তু বা কোন জিনিসের উপর করা হয়েছে, অথবা হবে, সে সংক্রান্ত নয়—সে ক্ষেত্রে সে দলিলে স্ট্যাম্প আইনে ষ্ট্যাম্প শুল্ক আদায়যােগ্য নয় [AIR 1928 Patna, 134]।

বাংলাদেশের বাহিরে সম্পাদিত বিনিময় বিল ও অঙ্গীকারপত্র বা অঙ্গীকারপত্র মাশুলযােগ্য হয় না, যে পর্যন্ত না সেগুলি বাংলাদেশের কোন লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যকর (acted upon) হয়। acted upon শব্দ সমষ্টি-এর অর্থ হচ্ছে, গৃহীত বা গ্রহণ করা হয়েছে বা স্বীকৃত, পরিশােধিত, গ্রহণ বা পরিশােধের জন্য উপস্থাপন, পৃষ্ঠাঙ্কিত, হস্তান্তরিত বা অন্যভাবে বিনিমেয়; কিন্তু এ শব্দসমষ্টি পরিশােধের কোন নােটিশ বা দাবী অন্তর্ভুক্ত করে না, যদি না কোন বিলের সঙ্গে সেগুলি সংযুক্ত করা হয় (22 Mad, 337]।

একটি বিদেশী বিনিময় বিল বা অঙ্গীকারপত্র সাক্ষ্যে স্বীকৃত হয় যদি এর ধারক উপরােল্লিখিত কাজগুলির কোনটাই না করে থাকেন; এবং উহা ষ্ট্যাম্পকৃত না থাকলেও উহার উপর মামলা করা চলবে। ডিক্রীর আদেশ জারী করার পূর্বেই উহাতে যদি বাংলাদেশী ষ্ট্যাম্পযুক্ত করা হয়, তাহলেই উহ এতদুদ্দেশ্যে যথেষ্ট হবে [32iC.582; 52ic.477]।

ঢাকার একটি ফার্মের ব্যবসায়িক কাজকর্মের পরিচালনার স্বার্থে ইংল্যান্ডে সম্পাদিত একটি চুক্তি [1 Mad. 134], ইংল্যান্ডে সম্পাদিত কোন একটি আম-মােক্তারনামা বাংলাদেশে কার্যকর বা acted upon হওয়ার জন্য [23 Cal. 187], চট্রগ্রামে একটি বন্ধক দলিল সম্পাদিত হলে [55 1C965], বাংলাদেশের কোন সম্পত্তির একটি বন্ধকী দলিল ইংল্যান্ডে সম্পাদিত হলে [AIR 1928 Patna. 134], সে সব দলিলপত্র এবং এ ধরণের অন্যান্য দলিলপত্র এবং এ ধরনের অন্যান্য দলিলপত্র ষ্ট্যাম্প আইনে মাশুলযােগ্য হয়। এরূপ একটি বিদেশী দলিল কোন মােকদ্দমায় পেশ করা হলে এবং বাদী যদি সে দলিলের সে অংশটির উপর নির্ভর করেন, যে অংশটি বাংলাদেশের স্থাবর সম্পত্তি সম্পৰ্কীয় নয়, সেক্ষেত্রে কোন ষ্ট্যাম্প শুল্ক প্রদেয় হবেনা [AIR 1928 Patna.134]।

একটি বিদেশী বিনিময় বিল এবং অঙ্গীকারপত্র বাংলাদেশে ততদিন থাকতে পারে যতদিন পর্যন্ত লেনদেনের জন্য উহাকে acted upon বা কার্যকর করা হয় না। কিন্তু সেসব বিল বা পত্র মাশুলযােগ্য হওয়ার সাথে সাথে উহাদের প্রথম ধারক কর্তৃক সেগুলি ষ্ট্যাম্পযুক্ত না হলে, সে ত্রুটি নিরসন করা বা সারান যাবে না। একটি বিনিময় বিল বা অঙ্গীকারপত্র ছাড়া যেকোন একটি বিদেশী দলিল বাংলাদেশে প্রাপ্তি ৩ (তিন) মাসের মধ্যেই উহাকে স্ট্যাম্পযুক্ত করতে হবে। উক্ত ৩ (তিন) মাসের মধ্যে উহাকে ষ্ট্যাম্পযুক্ত করা না হলে জরিমানা বা দন্ড প্রদানের পর সে ত্রুটি সারান যাবে [Mullah]।

Rate this post