ঐতিহাসিকভাবে বুর্জোয়া শ্রেণী খুবই বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে: সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বুর্জোয়া শ্রেণী উদীয়মান শ্রেণী হিসাবে দেখা দেয়। এই বুর্জোয়া শ্রেণী সামন্ত সমাজে উৎপাদন-শক্তির বিকাশ সাধনে উদ্যোগী হয়। এই উদ্যোগের পথে প্রতিবন্ধকতা করে রাষ্ট্রশক্তির অধিকারী সামস্তশ্রেণী। তাছাড়া সামন্ত-সমাজের চেতনার উপরিকাঠামোও এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সামন্তবিরোধী সকল শক্তিকে বুর্জোয়া শ্রেণী সংঘবদ্ধ করেছে এবং সামস্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চরম আঘাত হেনেছে। এইভাবে সম্পন্ন হয়েছে বুর্জোয়া বিপ্লব। এই বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্ততন্ত্রের অবসান ও ধনতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। এই কারণে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে মার্কস এঙ্গেলস বলেছেন: ‘ঐতিহাসিকভাবে বুর্জোয়াশ্রেণী খুবই বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে’ (“The bourgeoisie, historically has played a most revolutionary part.”)। সমাজ-বিকাশের ধারায় ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী উৎপাদন-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে উৎপাদন শক্তির বিকাশের পথে সমাজতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা অপসৃত হল। তখন ‘উৎপাদন-উপাদানের অবিরাম বিপ্লবী বদল’ দেখা গেল। এবং তারফলে উৎপাদন সম্পর্ক ও সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে বিপ্লবী বদল’ দেখা গেল। ‘বুর্জোয়া শ্রেণী বড়জোর এক শতকের শাসনকালের ভিতরেই যে উৎপাদন শক্তির সৃষ্টি করেছ তা অতীতের সমস্ত যুগের সমষ্টিগত উৎপাদন শক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপক ও বিশাল।’ অনুকূল উৎপাদন সম্পর্ক ছাড়া উৎপাদন শক্তির এই অভাবনীয় অগ্রগতি অসম্ভব ছিল। উৎপাদন ও বিনিময়ের উপকরণগুলি বিকাশের ধারায় এমন এক স্তরে উপনীত হল যখন…..মালিকানার সামন্ত সম্পর্কসমূহ আর কিছুই বিকশিত উৎপাদন শক্তিসমূহের সঙ্গে খাপ খেল না। সেগুলি তখন শৃঙ্খল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতেই হত এবং তা ভেঙে ফেলা হল “…the feudal relations of property became no longer compatible with the already developed productive forces, they became so many fetters. They had to be burst asunder; they were burst asunder.”)। বুর্জোয়া বিপ্লবের মাধ্যমেই এই শৃঙ্খল ভেঙ্গে ফেলা হল।

বুর্জোয়া শ্রেণীর ভূমিকা ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক: প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, যে শ্রেণী তার ভবিষ্যতের অগ্রগতিকে উৎপাদন শক্তির বিকাশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে তারাই হল বিপ্লবী শ্রেণী। অপরদিকে যে শ্রেণী আগেকার উৎপাদন-সম্পর্ককে অব্যাহত রাখতে চায় তারাই হল প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণী। সুতরাং এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে ঐতিহাসিক দিক থেকে বুর্জোয়া শ্রেণী বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে। আগেকার আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন আর্থ-সামাজিক বিন্যাস হল প্রগতিমূলক ও বৈপ্লবিক। সুতরাং যে শ্রেণী নতুন আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের স্থপতি সেই শ্রেণীই হল বিপ্লবী শ্রেণী। বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে বুর্জোয়া বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছে এবং সামন্ততান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের অবসান ঘটেছে। প্রত্যেক নতুন আর্থ-সামাজিক বিন্যাস হল এক-একটি সমাজবিপ্লবের স্তর এবং এ রকম বিপ্লবের অগ্রবর্তী বাহিনীই হল বিপ্লবী শ্রেণী। সুতরাং সমাজ বিকাশের ধারায় বুর্জোয়া শ্রেণীর ভূমিকা হল ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক।

বুর্জোয়া যুগের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য: মানবসমাজের ক্রমবিকাশের ধারায় বুর্জোয়া শ্রেণী বস্তুতপক্ষে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এই শ্রেণী সমাজজীবনের সকল ক্ষেত্রে চমকপ্রদ পরিবর্তন কায়েম করেছে। পূর্ববর্তী সামস্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, শ্রেণী-কাঠামো, সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, উৎপাদন ব্যবস্থা, পেশার গৌরব, ধর্ম-বিশ্বাস-সংক্ষেপে সমাজজীবনের সকল দিকই মৌলিক পরিবর্তনের আওতায় আসে। বুর্জোয়া সমাজও হল একটি শ্রেণীবিভক্ত ও শ্রেণী-শাসিত সমাজ। তবে বুর্জোয়া যুগের স্বতন্ত্র একটা বৈশিষ্ট্য আছে। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: ‘বুর্জোয়া আসল শ্রেণী-বিরোধকে সরল করেছে। সমগ্র সমাজ ক্রমশ বেশী করে দু’টি শত্রু-শিবিরে, পরস্পরের সরাসরি মুখোমুখি দু’টি বিরাট শ্রেণীতে— বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত-এ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে’ (“Our epoch, the epoch of the bourgeoisie, possesses, however, this distinctive feature it has simplified the class antagonisms. Society as a whole is more and more splitting up into two great hostile camps, into two great classes directly facing each other: Bourgeoisie and Proletariat.”)।

সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতান্ত্রিক এবং আর্থ সামাজিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে অধিকতর অগ্রসরপ্রাপ্ত ও প্রগতিমূলক। বুর্জোয়া যুগের বিকাশধারা ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা ও ফ্রান্সে স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনীতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই বুর্জোয়া শ্রেণীর ব্যাপক বৈপ্লবিক ও ঐতিহাসিক ভূমিকা অনস্বীকার্য। বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপ্লবী ভূমিকার বিভিন্ন মুখ্য দিকগুলি সম্পর্কে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-তে মার্কস-এঙ্গেলস বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং ম্যানিফেস্টোর সংশ্লিষ্ট অংশগুলি উদ্ধৃত করা আবশ্যক।

ম্যানিফেস্টোর বর্ণনা: ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: “যেখানেই বুর্জোয়া শ্রেণী প্রাধান্য পেয়েছে, সেখানেই সকল সামন্ততান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক ও সুশোভন সম্পর্কসমূহকে বিলুপ্ত করেছে। যে সমস্ত বিচিত্র সামন্ত বন্ধনে স্বাভাবিক ঊর্ধ্বতনদের কাছে মানুষ বাঁধা ছিল, নির্মমভাবে তারা ছিঁড়ে ফেলেছে। ব্যক্তিবর্গের গরস্পরের মধ্যে নগ্ন স্বার্থের বন্ধন, ‘নির্মম নগদ টাকার বন্ধন ব্যতিরেকে আর কিছুই এরা অবশিষ্ট রাখেনি। ধর্মীয় উন্মাদনা, শৌর্যবৃত্তির ব্যঞ্জনা ও কূপমণ্ডুক ভাবপ্রবণতার সব স্বর্গীয় ভাবোচ্ছ্বাসকে তারা আত্মসর্বস্ব হিসাবনিকাশের বরফ জলে ডুবিয়ে দিয়েছে। মানুষের ব্যক্তিমূল্যকে তারা বিনিময়মূল্যে পরিণত করেছে। অসংখ্য, অনস্বীকার্য সনদবদ্ধ স্বাধীনতার জায়গায় তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে একক নির্বিচার স্বাধীনতা— অবাধ বাণিজ্য। সংক্ষেপে ধর্মীয় ও রাজনীতিক বিভ্রমে আবৃত শোষণকে সরিয়ে বিকল্প হিসাবে তারা এনেছে নগ্ন, নির্লজ্জ, প্রত্যক্ষ পাশবিক শোষণ (“In one word, for exploitation, veiled by religious and political illusions, it has substituted naked, shameless, direct, brutal exploitation.”)।

“এতকাল ধরে যে সমস্ত বৃত্তি সম্মানিত হয়ে এসেছে, মানুষ সশ্রদ্ধ বিস্ময়ের চোখে দেখেছে, তাদের প্রত্যেকটির মহিমা বুর্জোয়া শ্রেণী ঘুচিয়ে দিয়েছে। ডাক্তার, উকিল, পুরোহিত, কবি, বিজ্ঞানীকে তারা বেতনভোগী মজুরি-শ্রমিকে (wage-labourers) পরিণত করেছে।” 

“পরিবার প্রথার ভাবাচ্ছন্ন ঘোমটাটাকে বুর্জোয়া শ্রেণী ছিঁড়ে ফেলেছে, পারিবারিক সম্পর্ককে নিছক‌একটি আর্থিক সম্পর্কে পরিণত করেছে।” 

“মানুষের উদ্যমে কি ফল সম্ভব বুর্জোয়া শ্রেণীই প্রথম তা দেখিয়ে দেয়। তাদের আশ্চর্যজনক কীর্তিকলাপ মিশরের পিরামিড, রোমের কৃত্রিম জলধারা ও গথিক গির্জাকে ছাপিয়ে গেছে বহুদূর। তাদের দ্বারা পরিচালিত অভিযান আগেকার জাতিসমূহের সকল দেশান্তর যাত্রা এবং ধর্মযুদ্ধসমূহকে করে দিয়েছে স্নান।”

“বুর্জোয়া শ্রেণী বাঁচার জন্য উৎপাদনের উপকরণসমূহের অবিরাম বৈপ্লবিক রূপান্তর সাধন করে চলে এবং তার দ্বারা উৎপাদন ও সঙ্গে সঙ্গে সমাজ সম্পর্কের অবিরাম বৈপ্লবিক রূপান্তর সাধন করে (The bourgeoisie cannot without constantly revolutionizing the instruments of production, and thereby the relations of production, and with them the whole relations of society.) !….বুর্জোয়া যুগকে পূর্ববর্তী সকল যুগ থেকে পৃথক করে চিহ্নিত করে উৎপাদনের অবিরাম বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সকল সামাজিক অবস্থার নিরন্তর অস্থিরতা, চিরস্থায়ী অস্থিরতা ও উত্তেজনা। সকল সুস্থির দ্রুত জমাটবাঁধা সম্পর্কসমূহ এবং আনুষঙ্গিক সকল সাবেকী শ্রদ্ধাযুক্ত সংস্কার ও মতামতকে বাতিল করা হয়, আর নবগঠিতগুলি দৃঢ়তাপ্রাপ্তির আগেই অচল প্রতিপন্ন হয়। ভারিক্কী সবকিছু বাতাসে মিলিয়ে যায়, পবিত্র সবকিছু কলুষিত হয়। এবং অবশেষে মানুষ বাধ্য হয় জীবনের যথার্থ অবস্থাকে ও অপরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে শান্তভাবে খোলা চোখে দেখতে (“All that is solid melts into air, ail that is holy is profaned, and man is not last compelled to face, with sober senses, his real condition of life, and his relations with his kind.”)।

‘নিজেদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর জন্য ক্রমবর্ধমান বাজারের তাগিদ থাকে। এই তাগিদের জন্য বুর্জোয়া শ্ৰেণীকে দুনিয়া জুড়ে দৌড়ে বেড়াতে হয়। সর্বত্র তাদের বাসা বাঁধতে হয়, গেড়ে বসতে হয়, সংযোগ স্থাপন করতে হয়।’

‘বিশ্ববাজারকে ব্যবহার করতে গিয়ে বুর্জোয়া শ্রেণী প্রতিটি দেশের উৎপাদন ও ভোগকে একটা বিশ্বজনীন প্রকৃতি প্রদান করেছে’ (The bourgeoisie has through its exploitation of the world market given a cosmopolitan character to production and consumption in every country.) | Gal প্রতিক্রিয়াশীলদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে শিল্পের পায়ের তলা থেকে সরিয়ে নিয়েছে সেই জাতীয় জমিটা যার উপর আগে দাঁড়িয়েছিল শিল্প। সকল প্রাচীন জাতীয় শিল্পগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে বা প্রত্যহ ধ্বংস হচ্ছে। তাদের সরিয়ে দিচ্ছে নতুন নতুন এমন সব শিল্প যাদের প্রচলন সমস্ত সভ্য জাতির কাছেই হল মরা-বাঁচার প্রশ্ন; এমন সব শিল্প যেগুলো কেবলমাত্র স্বদেশের কাঁচামাল নিয়ে নয় সুদূর অঞ্চল থেকে আমদানি করা কাঁচামালে কাজ করছে; এমন সব শিল্প যার উৎপাদন সামগ্রী স্বদেশের সীমা ছাড়িয়ে দুনিয়া জুড়ে সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আগেকার যে সমস্ত চাহিদা স্বদেশের উৎপন্নে পূরণ করা সম্ভব হত তার পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে এমন সব নতুন চাহিদা যা পুরণ করতে লেগেছে দূরতম দেশ-বিদেশের ও নানা আবহাওয়ার উৎপন্নের। আগেকার আঞ্চলিক ও জাতীয় বিচ্ছিন্নতা ও স্বনির্ভরতার পরিবর্তে পাওয়া যায় সকল ক্ষেত্রেই পারস্পরিক আদান-প্রদান, বিশ্বজোড়া জাতিগুলির পরস্পরের উপর নির্ভরশীলতা (In place of the old local and national seclusion and self-sufficiency, we have intercourse in every direction, universal interdependence of nations)। এবং বৈষয়িক উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন, মনীষার ক্ষেত্রেও তেমনি। এক-একটি জাতির মনীষার সৃষ্টি সকলের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। জাতিগত একপেশেমি ও চিত্তের সকীর্ণতা ক্রমশ বেশী করে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এবং অসংখ্য জাতীয় ও স্থানীয় সাহিত্য থেকে সৃষ্টি হয় এক বিশ্বসাহিত্যের (The intellectual creations of individual nations become common property. National one-sidedness and narrow-mindedness become more and more impossible, and from the numerous national and local literatures, there arises a world literature.”)। আগে জাতির বৌদ্ধিক সৃষ্টিসমূহ তার নিজস্ব সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হত। এখন তা বিশ্ববাসীর সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ কেবল আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও বুর্জোয়া শ্রেণী বৈপ্লবিক রূপান্তর সাধন করেছে।

বুর্জোয়া শ্রেণী উৎপাদনের উপকরণসমূহের দ্রুত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সকল জাতিকে এমনকি অত্যন্ত অসভ্য জাতিকেও সভ্যতার মধ্যে টেনে এনেছে। তারা বর্বর জাতিদের একরোখা বিজাতি-বিদ্বেষকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। সকল জাতিকে বুর্জোয়া উৎপাদন-পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য করে। বস্তুত সকলকে তারা বুর্জোয়া বলতে বাধ্য করে। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: “এক কথায় নিজেদের ছাঁচেই বুর্জোয়া শ্রেণী জগৎ গড়ে তোলে” (“In one word it creates a world after its own image.”)।

বুর্জোয়ারা গ্রামকে শহরের শাসনাধীনে নিয়ে আসে। বিশাল আয়তনের অনেক শহর তারা গড়ে তোলে। গ্রামের থেকে শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। গ্রামীণ জীবনের মূঢ়তা থেকে জনসাধারণের এক বিশাল অংশ মুক্তিলাভ করে। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: “…it has made the country dependent on the towns, so it has made barbarians and semi-barbarians countries dependent on the civilised ones, nations of peasants on nations of bourgeois, the East on the West.”

বুর্জোয়ারা জনসাধারণকে সমবেত করেছে, উৎপাদনের উপকরণগুলিকে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পত্তিকে জড়ো করেছে। এবং এই আর্থনীতিক কেন্দ্রীভবনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল রাজনীতিক কেন্দ্রীভবন।

বুর্জোয়ারা তাদের আধিপত্যের এক শতাব্দী পূর্ণ হওয়ার আগেই যে বিশাল-বিপুল উৎপাদন শক্তি সৃষ্টি করেছে তা অতীতের সকল যুগের সম্মিলিত উৎপাদন শক্তির থেকেও অনেক বেশী ব্যাপক ও অতিকায়। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: “The bourgeoisie, during its rule of scarce one hundred years, has created more massive and more colossal productive forces than have all preceding generations, together.” বুর্জোয়ারা প্রাকৃতিক শক্তিসমূহকে মানুষের কর্তৃত্বাধীন করেছে। তারা শিল্প ও কৃষিতে রসায়নের প্রয়োগ ও যন্ত্রের ব্যবহার চালু করেছে। তারা বাষ্প-চালিত জল পরিবহণ ও রেলপরিবহণের ব্যবস্থা করেছে এবং বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ চালু করেছে। গোটা মহাদেশকে কৃষিকার্যের জন্য সাফ করে দেওয়া হয়েছে। জলযাত্রার সুবিধার্থে বিভিন্ন নদীর খাল কাটা হয়েছে। যেন মাটি ফুঁড়ে ভোজবাজির মত জনসমষ্টির আবির্ভাব ছিল অভাবিত। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস মন্তব্য করেছেন : “…what earlier century had even a presentiment that such productive forces slumbered in the lap of social labour?”

সর্বোপরি বুর্জোয়ারা সৃষ্টি করেছে সর্বাপেক্ষা এক বিপ্লবী শ্রেণীকে। এই শ্রেণীটি হল প্রলেতারিয়েত। এই প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে বুর্জোয়া সমাজের মধ্যেই। সুতরাং ঐতিহাসিক দিক থেকে বুর্জোয়ারা যে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছে এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ থাকতে পারে না।

Rate this post