রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী উভয়ই দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থার অঙ্গীভূত। যে-কোন দেশের বিদ্যমান রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে উভয়ের ওতপ্রোত সম্পর্ক বর্তমান। বিশেষত উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ পরিবেশের সঙ্গে রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। আবার রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কও পরিলক্ষিত হয়। উভয়ই হল যে-কোন রাজনীতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। এবং এ দিক থেকে উভয়ের মধ্যে কতকগুলি ক্ষেত্রে সাদৃশ্য এবং অন্য কতকগুলি ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য বর্তমান। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে সাদৃশ্যের পরিবর্তে বৈসাদৃশ্যই প্রবলভাবে প্রতিপন্ন হয়।

রাজনীতিক ব্যবস্থা ও রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে দল ও রাজনীতিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান। উভয়ের কাজকর্মের পরিধি আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, আবার জাতীয় পর্যায়ে প্রসারিত হতে পারে। দেশের প্রচলিত রাজনীতিক সংস্কৃতির ধারা রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। উভয়েই বিভিন্ন স্বার্থের গ্রন্থীকরণ ও সংহতি সাধনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উভয়েই বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার মধ্যে নিজেদের কাজকর্ম পরিচালনা করে এবং দাবি-দাওয়া ব্যক্ত করে। উভয়ের এই রকম কিছু আপাত সাদৃশ্য আছে। এ কথা ঠিক। তবে উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্যই বেশী।

রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বল, নিউম্যান প্রমুখ আধুনিক কালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্যের কথা বলেছেন। উৎপত্তি, উদ্দেশ্য, কর্মসূচী প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়।

রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য

(১) লক্ষ্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য: সাধারণত বহুমুখী ও ব্যাপক সামাজিক বা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে রাজনীতিক দলের সৃষ্টি হয়। বহু ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়-দায়িত্ব রাজনীতিক দলের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত থাকে। রাজনীতিক দলের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল বৃহত্তর জাতীয় ও সামাজিক স্বার্থ সাধন। রাজনীতিক দলের কাজকর্ম জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রেই সম্প্রসারিত। তাই প্রাদেশিক ও জাতীয়, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভৃতি বহু ও বিভিন্ন স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধনের স্বার্থে রাজনীতিক দলকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়। বস্তুত বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণই হল রাজনীতিক দলের লক্ষ্য। রাজনীতিক দল সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না। দল সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক কল্যাণসাধন করতে চায়। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সামনে বৃহত্তর জাতীয় কল্যাণ সাধনের কোন মহান উদ্দেশ্য থাকে না। সংকীর্ণ ও সমজাতীয় বিশেষ গোষ্ঠীগত স্বার্থকে কেন্দ্র করে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয়। এই কারণে জাতীয় ও সামাজিক হার্থের পরিবর্তে সংকীর্ণ গোষ্ঠীগত স্বার্থই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাছে মুখ্য বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়। এ প্রসঙ্গে অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে নিউম্যানের অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। নিউম্যান বলেছেন: “Fundamentally pressure groups are the representation of homogeneous interest seeking influence. The interest group is strong and effective when it has a directed specific purpose. Political parties on the other hand, seeking office and directed towards policy decisions, combine heterogeneous groups…. There is an integrative function which is not the domain of the interest groups.” উদ্দেশ্যগত বিচারে রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে বলের অভিমতও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: “The emphasis is on the political parties’ commitments on broad questions of policy, unlike pressure groups, parties will have policies on a wide range of issues.”

(২) উৎপত্তিগত পার্থক্য: সুনির্দিষ্ট রাজনীতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতিক দল গড়ে উঠে। এই মতাদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নীতি ও ব্যাপক কর্মসূচী রচিত হয় এবং তা বাস্তবে রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়। পক্ষান্তরে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উৎপত্তির ভিত্তিতে কোন বিশেষ রাজনীতিক মতাদর্শের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। কোন রাজনীতিক মতাদর্শের প্রতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অঙ্গীকার থাকে না। এই সমস্ত গোষ্ঠীর অঙ্গীকার থাকে গোষ্ঠীগত স্বার্থের প্রতি।

(৩) সংহতির প্রশ্নে পার্থক্য: একটি রাজনীতিক দলের মধ্যে বিভিন্ন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর লোক থাকতে পারে। তার ফলে দলের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সংহতির প্রশ্ন বড় করে দেখা দেয়। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সংহতির সমস্যা বড় একটা দেখা যায় না। কারণ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা সাধারণত কম হয় এবং অভিন্ন স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে গোষ্ঠীর সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ থাকে।

(8) সাংগঠনিক পার্থক্য: এতদ্‌সত্ত্বেও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর তুলনায় রাজনীতিক দল অনেক বেশী সুসংগঠিত। অভিন্ন রাজনীতিক মতাদর্শ ও কঠোর দলীয় শৃঙ্খলার ভিত্তিতে দলীয় সংহতি বজায় রাখার ব্যবস্থা হয়। সাংগঠনিক দিক থেকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনীতিক দল অপেক্ষা দুর্বল। দলীয় কর্মসূচীর প্রতি অঙ্গীকার ও আনুগত্যের ভিত্তিতে রাজনীতিক দলের সদস্যপদ প্রদান করা হয়। অর্থাৎ দলীয় সদস্যপদ লাভের পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত জটিল। এবং অপেক্ষাকৃত কঠোর দলীয় শৃঙ্খলার দ্বারা রাজনীতিক দলের সদস্যদের সংঘবদ্ধ থাকতে হয়। অপরদিকে বিভিন্ন রাজনীতিক মতাবলম্বী মানুষ কোন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারেন এবং হন। তার ফলে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সংহতির সমস্যা থাকে। তা ছাড়া চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্মের পরিধি সীমাবদ্ধ। তাই তাদের সাংগঠনিক কাঠামোও রাজনীতিক দলের মত ব্যাপক হয় না।

(৫) উদ্দেশ্যগত পার্থক্য: উদ্দেশ্যগত বিচারে রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিক দলের উদ্দেশ্য বহুমুখী ও ব্যাপক হলেও, সরকারী ক্ষমতা দখল করে দলীয় নীতি ও কর্মসূচীকে বাস্তবে রূপায়িত করাই হল দলের মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ রাজনীতিক ক্ষমতা অর্জন ও সরকারী ক্ষমতা দখল করাই হল রাজনীতিক দলের মুখ্য লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য প্রতিটি রাজনীতিক দল দলীয় সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করে, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করে, দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন করে, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন ও পরিচালনা করে এবং সরকার পরিচালনার মাধ্যমে দলীয় মতাদর্শ ও কর্মসূচীকে কার্যকর করার ব্যবস্থা করে। আর চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সরকারী সিদ্ধান্তকে গোষ্ঠীস্বার্থের অনুকূলে প্রভাবিত করাই হল একমাত্র উদ্দেশ্য।

(৬) রাজনীতিক দলের কাজ-কর্ম প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য: রাজনীতিক দলের কর্মপদ্ধতি প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ। জনসাধারণ রাজনীতিক দলের কার্যকলাপ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবহিত থাকে। কারণ রাজনীতিক দল জনসমর্থন অর্জনের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য ও কর্মসূচী সরাসরি জনগণের কাছে পেশ করে। এই কারণে রাজনীতিক দলের কার্যাবলী ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ সহজেই অবহিত হতে পারে। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপ পরোক্ষভাবে এবং গোপনে সম্পাদিত হয়। কারণ জনসাধারণের সমর্থন অর্জনের ব্যাপারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আগ্রহ বা উদ্যোগ বড় একটা দেখা যায় না। এই কারণে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কর্মসূচী ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণ অবহিত হওয়ার সুযোগ পায় না।

(৭) দল রাজনীতিক সমঝোতা করে: প্রয়োজনবোধে নির্দিষ্ট কর্মসূচীর ভিত্তিতে রাজনীতিক দলের মধ্যে সমঝোতার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বহুদলীয় ব্যবস্থায় সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির মধ্যে রাজনীতিক মোর্চা নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থের প্রতিভূ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে এ ধরনের সমঝোতা বড় একটা দেখা যায় না। 

(৮) নির্বাচনে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে পার্থক্য: প্রতিটি রাজনীতিক দল দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরাসরি অবতীর্ণ হয়। কারণ রাজনীতিক দলের মুখ্য লক্ষ্য হল সরকারী ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তবে এই গোষ্ঠীগুলি গোষ্ঠীস্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে কোন দল বা প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার পক্ষে প্রচার করতে পারে। আবার চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কোন সদস্য কোন রাজনীতিক দলের সদস্য হিসাবে বা নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

(৯) সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে পার্থক্য: কর্মপদ্ধতির প্রকৃতির ক্ষেত্রে রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। অভিন্ন গোষ্ঠী-স্বার্থের অস্তিত্ব হেতু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী যে-কোন বিষয়ে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক কারণে রাজনীতিক দলের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সত্বর এবং সহজে সম্ভব নয়।

(১০) সকল রাজনীতিক ব্যবস্থায় দল অপরিহার্য: উদারনীতিক, সর্বাত্মক, সমাজতান্ত্রিক নির্বিশেষে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য। কিন্তু একথা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে খাটে না। সকল রাজনীতিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী থাকে না। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় শ্রেণীবৈষম্য বা শ্রেণীদ্বন্দ্ব থাকে না। তাই এখানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অস্তিত্বও অপ্রয়োজনীয়।

(১১) সকল রাজনীতিক ব্যবস্থায় দল অপরিহার্য: অনেক সময় সদস্যসংখ্যার পার্থক্যের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপন্ন হয়। সাধারণত রাজনীতিক দলের সদস্যসংখ্যা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যার থেকে অনেক বেশী হয়। কিন্তু এই বক্তব্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক সময় ক্ষুদ্রাকৃতির আঞ্চলিক দলের তুলনায় কোন কোন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা অধিক হয়ে থাকে।

উপসংহার: অনেক ক্ষেত্রে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনীতিক দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তখন রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। দৃষ্টান্ত হিসাবে ভারতের ঝাড়খণ্ড দলের কথা বলা যায়। তা ছাড়া এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন বার্চ সোসাইটি (John Birch Society) -র কথাও বলা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এই পার্থক্য সব সময় সুস্পষ্ট নয়। কোন কোন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনীতিক দলের মতই তার কাজকর্ম পরিচালনা করে। আবার কোন কোন রাজনীতিক দল নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মত কর্মসূচী গ্রহণ করে। এখানকার উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক দল এবং চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী উভয়ের অস্তিত্বই অপরিহার্য বিবেচিত হয়। বর্তমানে রাজনীতিক দলগুলিই চাপসৃষ্টিকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে প্রতীয়মান হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনীতিক দলে রূপান্তরিত হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোন একটি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কালক্রমে রাজনীতিক দলে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের কথা বলা যায়। এই দু’টি রাজনীতিক দলেরই আবির্ভাব ঘটেছে অন্যতম চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসাবে। আবার সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কথা বলা যায়। যাইহোক উভয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য সত্ত্বেও রাজনীতিক দল এবং চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতাকে অস্বীকার করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এই পারস্পরিক সম্পর্ক আন্তরিক ও সহযোগিতামূলক। উপরিউক্ত কারণসমূহের জন্য রাজনীতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ সব সময় সহজ নয়। এ প্রসঙ্গে অ্যালান বলের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তিনি তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “Connected with the problems of definition and classification is the difficulty of clearly distinguishing between pressure groups and political parties.” তিনি আরও বলেছেন: “The Irish Nationalists in the House of Commons before 1918 displayed many of the characteristics of both political parties and pressure groups.” বলের আরও অভিমত হল: “In underdeveloped countries the weakness of the party systems further blur the distinction.”

Rate this post