কুড়ি বছর থেকে পঁয়ষট্টি বছর অর্থাৎ ব্যক্তি পরিণত বয়সে উপনীত হওয়া থেকে যতদিন পর্যন্ত সন্তান উৎপাদনে সক্ষম সেই সময়কালকেই প্রাপ্তবয়স্ক বলা হয়।

প্রাপ্তবয়স্কের প্রথম দিকে অর্থাৎ কুড়ি থেকে তিরিশ বছরের মধ্যে ব্যক্তি তার বৃত্তিজীবন এবং জীবনসঙ্গী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। Sheely (1976) এবং Gould (1975)-এর মতে, এই বয়সে ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বিশেষ সক্রিয় হয়। প্রথম দিকের আচরণ কিছুটা অপরিণত হলেও ক্রমশ পরিগত আচরণ লক্ষ করা যায়।

(১) শারীরিক বিকাশ: চল্লিশ বছরের প্রারম্ভেই ব্যক্তির চামড়ায় ভাজ, বাড়তি মেদ বিশেষ করে দেহের মধ্য অংশে, চুলে পাক এবং পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ব্যক্তির মধ্যে অসন্তোষের কারণ হয়। এই অবস্থাকে মধ্যবয়সের সংকট বলা হয়। ব্যক্তি নিজেকে যৌবন উত্তীর্ণ বার্ধক্যের দ্বারে এসে পড়েছে বলে মনে করে। স্ত্রীলােকদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র বন্ধ হবার ফলে সন্তান ধারণের অক্ষমতা স্মরণ করে হতাশা দেখা দেয়| পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ পঞ্চাশ বছর হবার পর ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিন্তিত হয়। ঘনঘন চিকিৎসকের কাছে যায়।

(২) মানসিক বিকাশ: এই সময় কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ব্যক্তি নিজেকে অসহায় বোধ করে। জীবন তাদের নিকট ক্রমশ অর্থহীন হয়ে ওঠে। এই সময়ে অনেকে সামাজিক পরিবেশমূলক কাজে যুক্ত হয়। ধর্মস্থানে যাতায়াত ও ধর্মানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে।

(৩) সামাজিক বিকাশ: মনােবিদ এরিকসন তার মনােসামাজিক বিকাশ তত্ত্বে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রসঙ্গে কিছু তথ্য উল্লেখ করেছেন যা নীচে ব্যক্ত করা হল一

  • ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বনাম বিচ্ছিন্নতা: মনােসামাজিক বিকাশ তত্ত্বে এটি হল ষষ্ঠ স্তর। এই স্তরে ব্যক্তি (কুড়ি বছর থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর) তার নিকটজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তােলে যেমন স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, বন্ধু, শিক্ষক ইত্যাদি। তাদের জন্য ব্যক্তি প্রাণপাত করে এবং প্রয়ােজন হলে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। এর বিপরীত হল বিচ্ছিন্নতা। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে বা কোনাে কারণে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিন্ন হলে ব্যক্তির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিত্ববিকাশে অসাম্যতা বজায় রাখার জন্য কিছু পরিমাণে বিচ্ছিন্নতা কাম্য হলেও অতিরিক্ত বিচ্ছিন্নতা মানসিক সমস্যার কারণ হয়। সেই কারণে ঘনিষ্ঠতা এবং বিচ্ছিন্নতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ববিকাশে বিশেষ প্রয়ােজন৷

  • উৎপাদন বনাম স্থবিরতা: এই পর্যায়টিকে (পঁয়তাল্লিশ বছর থেকে পঁয়ষট্টি বছর) এরিকসন তার তত্ত্বে সপ্তম স্তর বলে উল্লেখ করেছেন। এই সময়কালে ব্যক্তি তার পেশাগত জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হন| নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চান যা তাকে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখাতে পারে। নিজের সন্তানের পরিচর্যা, নির্দেশনা এবং পরামর্শদানের মধ্য দিয়ে এটি প্রতিফলিত হয়। আবার নতুন কিছু উদ্ভাবন, সৃষ্টি এবং সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে সমাজের মঙ্গলসাধন করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। নিজের পরিবার এবং নিজ স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে অন্যদের স্বার্থ এবং মঙ্গলসাধনের জন্য তিনি কিছু করতে চান। তাকেই মনস্তাত্ত্বিক ভাষায় নিজেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া বলে (Extension of the self)। এর বিপরীত হল আত্মকেন্দ্রিকতা এবং স্বার্থপরতা যাকে এরিকসন স্থবিরতা বলেছেন। সুষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়ােজন। ব্যক্তির জীবনে মাঝে মাঝে স্থবিরতা প্রয়ােজন। এই ধরনের স্থবিরতা উৎপাদনশীলতা বা সৃজনশীলতাকে শক্তি জোগায়।

Rate this post