[1] পরিকল্পিত নগর প্রতিষ্ঠা: হরপ্পা সভ্যতায় এক সুপরিকল্পিত ও উন্নত নগর গড়ে ওঠে। সেখানকার অধিকাংশ রাস্তাই সরল ও সমান্তরাল ছিল। রাস্তাগুলি ছিল ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া। রাস্তার ধারে ছিল বাঁধানাে ফুটপাত, বাড়ির নোংরা জল বের করার জন্য ছিল পয়ঃপ্রণালী, রাস্তার ধারে ল্যাম্পপােস্টও অবস্থিত ছিল। আগুনে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি বহুতল বিশিষ্ট অনেক ঘরবাড়ির অবশিষ্টাংশও পাওয়া গেছে এই সভ্যতায়। মহেঞ্জোদারােতে একটি স্নানাগার এবং হরপ্লায় একটি শস্যাগার পাওয়া গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে।

[2] নগরজীবনের সমাজ: হরপ্পা সভ্যতায় সামাজিক বিভাজন ছিল বিদ্যমান। বাসিন্দারা নাগরিক জীবনের সঙ্গে মানানসই সুন্দর পােশাক ও অলঙ্কার ব্যবহার করত। নাচ, গান, শিকার প্রভৃতি ছিল নাগরিক জীবনের প্রধান বিনােদন মাধ্যম।

[3] নগরজীবনের অর্থনীতি: এই সভ্যতার বহু মানুষ শহুরে পেশা, যেমন-শিল্পকর্ম, বাণিজ্য প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে কৃষি এবং পশুপালনের সঙ্গেও বহু মানুষ যুক্ত ছিল।

[4] নগরজীবনের রাজনীতি: হরপ্পার নগরজীবন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে এখানকার নাগরিকগণ কেন্দ্রীভূত নগর বা পৌরপ্রশাসন গড়ে তুলেছিলেন বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।

[5] নগরজীবনের ধর্মীয় বিশ্বাস: হরপ্পা সভ্যতার নাগরিকরা মূর্তিপূজা করত এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির আরধনা করত বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। তখন মাতৃমূর্তির পূজা জনপ্রিয় ছিল।

অতীতে সুমেরীয় অঞ্চল ছিল জলাভূমি এবং জঙ্গলাকীর্ণ। পরে এখানে এক উন্নত নগর সভ্যতা গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রীয় জীবনে এই সভ্যতার মানুষ বিশেষ দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও উন্নত রুচিশীলতার পরিচয় দিয়েছিল৷

[1] নির্মাণ পরিকল্পনা: সুমেরীয় সভ্যতায় বিভিন্ন নগর ও জনপদগুলি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে নির্মিত হত। এক-একটি জনপদে অসংখ্যবাড়ি, মন্দির ও রাস্তাঘাট নির্মিত হত।উর, উরক, লাগাস, কিশ, এরিডু, আক্কাদ প্রভৃতি শহরে খননকার্যের দ্বারা এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে বহু তথ্য জানা গেছে।

[2] নগরের নিরাপত্তা: সুমেরের বিভিন্ন নগরের মধ্যে সর্বদাই সংঘর্ষ চলত। এজন্য বহিরাক্রমণ থেকে নগরীকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে নগরীগুলি উঁচু প্রাচীর ও চওড়া খাল দিয়ে ঘিরে সুরক্ষিত করা হত। সৈন্যবাহিনী সর্বদা নগরের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পাহারায় নিযুক্ত থাকত।

[3] ঘরবাড়ি: সুমেরীয় অঞ্চলে পাথর বা কাঠের জোগান কম থাকায় অধিকাংশ ঘরবাড়ি তৈরি হত পােড়া ইট বা রােদে শুকানাে ইট দিয়ে। বন্যার হাত থেকে রক্ষার প্রয়ােজনে পােড়া ইটের বাড়ি নির্মিত হত। বড়াে অট্টালিকাগুলিতে গম্বুজ ও খিলানের ব্যবহার করা হত। সুমেরবাসী একতল এবং দ্বিতল উভয় ধরনের গৃহ নির্মাণ করত।

[4] রাস্তাঘাট: সুমেরীয় সভ্যতার রাস্তাঘাটগুলি ছিল যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এগুলি ইট দিয়ে বাঁধানাে থাকত। তবে অধিকাংশ রাস্তাই ছিল সরু। রাস্তার ধারে বাড়িগুলির মধ্যে ব্যবধানও বিশেষ থাকত না।

[5] শাসন পরিচালনা: এই সভ্যতার যুদ্ধবাদী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। পছন্দমতাে বিভিন্ন অভিজাতদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের হাতে রাজা প্রভূত ক্ষমতা দিয়েছিলেন। রাজা বা পুরােহিত শ্রেণি সুমেরীয় নগরগুলির প্রশাসন পরিচালনা করত। প্রশাসন পরিচালনার কাজে তারা বিভিন্ন আমলা, সেনাপতি, প্রহরি, জল্লাদ প্রভৃতির সহায়তা নিত।

[6] নাগরিক স্বাধীনতা: সুমেরীয় সভ্যতার বিভিন্ন মন্দিরকে কেন্দ্র করে পৃথক পৃথক মানব-সম্প্রদায় বা গােষ্ঠী গড়ে উঠত। পুরােহিত, আমলা, কারিগর, মৎস্যজীবী প্রভৃতি বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে গঠিত সুমেরীয় সভ্যতার নাগরিকরা যথেষ্ট স্বাধীনতা ভােগ করার সুযােগ পেয়েছিল।

Rate this post