সূচনা: মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন বণিক ও কারিগররা নিজেদের শ্রেণি স্বার্থ রক্ষা ও বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে সংঘ বা সংগঠন গড়ে তুলেছিল তা গিল্ড নামে পরিচিত। এই গিল্ড বা সংঘগুলি বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি পরিচালনা করত।

[1] বাণিজ্যে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা: প্রতিটি শহরের প্রতিষ্ঠিত গিল্ডগুলি নিজেদের সদস্যদের বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে সর্বদা নজর রাখত। গিল্ডের সদস্য নয় বা সেই শহরের বাসিন্দা নয় এমন ব্যক্তিদের সেই শহরে ব্যাবসা করার অধিকার সেই গিল্ড দিত না।

[2] প্রতিদ্বন্দ্বিতা রােধ: গিল্ডগুলি তাদের সদস্যসংখ্যা সীমিত রেখে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বন্ধ করার উদ্যোগ নিত। ব্যবসায়ী ও কারিগর গােষ্ঠীর সকলে যাতে সমান সুযােগসুবিধা পায়, সে বিষয়ে গিল্ড পদক্ষেপ নিত।

[3] সঠিক মান বজায় রাখা: [i] উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের সঠিক মান বজায় রাখা, ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় প্রতিরােধ করা প্রভৃতি কাজগুলি গিল্ড করত। [ii] পণ্যসামগ্রীর উচ্চমান ও নির্ধারিত মূল্য বজায় আছে কিনা তা তদারকির উদ্দেশ্যে গিল্ডগুলি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করত।

[4] কাঁচামাল, ও শ্রমিকের জোগান: সদস্যদের কারখানায় যাতে সর্বদা প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল ও শ্রমিকের জোগান অব্যাহত থাকে, গিল্ড সেদিকে নজর রাখত।

[5] সদস্যদের সহায়তা: কোনাে সদস্যের দারিদ্র্য, সম্পত্তি ধ্বংস হওয়া, ঋণের দায়ে পড়া বা কারারুদ্ধ হওয়া প্রভৃতিতে সদস্যদের সহায়তা করা, সদস্যদের মধ্যে যে-কোনাে বিরােধের মীমাংসা করা, মৃত সদস্যের পরিবারের ভরণ-পােষণের ব্যবস্থা করা গিল্ডের অন্যতম কাজ ছিল।

[6] গিল্ডের অনুশাসন বজায় রাখা: গিল্ডের নিয়মকানুনগুলি ছিল আইনের মতােই মূল্যবান। এই নিয়মকানুনগুলি ভঙ্গ করলে গিল্ড তার সদস্যদের জরিমানা ও শাস্তি দান করত।

[7] প্রশাসনিক কাজ: গিল্ডগুলি শহরের বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্য পরিচালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। শহরের বাসিন্দাদের র্থিরক্ষা, পণ্যশুন্ক আদায়, শহরের রাস্তাঘাট ও সেতু, প্রাচীর, ফটক, নর্দমা প্রভৃতি নির্মাণে তদারকি করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ গিল্ডগুলি করত।

[8] সামাজিক উদ্যোগ: গিল্ডের আর্থিক ব্যয়ে [i] বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন, [ii] জনসাধারণের জন্য গৃহপুলির সংস্কার, [iii] হাসপাতাল ও অনাথাশ্রম প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করা হত।

[9] অন্যান্য উদ্যোগ: এ ছাড়া গিল্ডগুলি [i] সামন্তপ্রভুদের সঙ্গে বাণিজ্যের খাজনা, শুল্ক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলাপ- আলােচনা চালাত, [ii] গির্জার সংস্কার, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়ােজন করত, [iii] গির্জার নিয়ন্ত্রণমুক্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করত।

উপসংহার: প্রথমদিকে বণিক ও কারিগর উভয়ই একই গিল্ডের সদস্য ছিল। কিন্তু ক্ৰমে বণিকদের অর্থ ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলে তারা শ্রমিক-কারিগরদের শােষণ করতে শুরু করে। ফলে শ্রমিক ও কারিগররা নিজেদের পৃথক গিল্ড গড়ে তোলে।

Rate this post